Advertisement
E-Paper

উপাচার্যের অফিস ঘিরে সুরক্ষা বলয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ইলিয়াস আখতারের দাবি মেনে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে সভা-সমাবেশ ও মিছিল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার উপাচার্যের নিরাপত্তার খাতিরে আন্দোলন নিষিদ্ধ হচ্ছে ঐতিহাসিক দ্বারভাঙা ভবনের বিশেষ অংশেও।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯

শাসক দলের ছাত্র সংসদের গোষ্ঠী-কোন্দলে খোদ উপাচার্যের নিগ্রহের পরেই নড়েচড়ে বসল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। কলেজ স্ট্রিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দ্বারভাঙা ভবনের একাংশকে ‘বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে আমপড়ুয়ার ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা তো থাকবেই, ওই এলাকা-সহ সেনেট ও সিন্ডিকেট হলের সামনে যাবতীয় বিক্ষোভ-আন্দোলনও নিষিদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলা হলে যাতে দোষীদের চিহ্নিত করা যায়, সেই জন্য ওই এলাকা মুড়ে ফেলা হবে সিসি ক্যামেরায়।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হল বহু ইতিহাসের সাক্ষী। অতীতে নানান দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষক ও পড়ুয়ারা উপাচার্যের ঘরের বাইরে আন্দোলন করেছেন। এ বার তা কার্যত মুছে যেতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ইলিয়াস আখতারের দাবি মেনে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে সভা-সমাবেশ ও মিছিল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার উপাচার্যের নিরাপত্তার খাতিরে আন্দোলন নিষিদ্ধ হচ্ছে ঐতিহাসিক দ্বারভাঙা ভবনের বিশেষ অংশেও।

এই উদ্যোগের সমালোচনা এবং বিরোধিতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোণ পড়ুয়াদের কাছে উন্মুক্ত থাকাই উচিত। সেই পরিবেশে লাগাম দিলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগও উঠতে পারে। ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে সুরক্ষিত রাখতেই এই সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সুরক্ষার বিষয়ে আপস করা হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই,’’ বলেন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী। তিনি জানান, এটা বেনজির কিছু নয়। আশির দশকে উপাচার্যের অফিস ঘিরে কমবেশি নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে তা ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায়।

গত ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান করছিলেন এক দল পড়ুয়া। তাঁদের সমর্থন জানিয়ে অবস্থানে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। কার্যত ঘেরাও হন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। উপাচার্যকে ঘেরাওমুক্ত করতে হাজির হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদে লগ্নজিতার বিরোধী গোষ্ঠী। অভিযোগ, ওই গোষ্ঠীর আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে লগ্নজিতাদের মারধর করে। সেই সময়েই ধাক্কাধাক্কিতে গুরুতর জখম হন উপাচার্য। হেনস্থার মুখে পড়েন সহ-উপাচার্য (অর্থ) মীনাক্ষী রায়ও। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেখানে খোদ উপাচার্যই নিরাপদ নন, সেখানে আম-শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরেই নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঠিক হয়, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের ঘর ছাড়াও দ্বারভাঙা ভবনের সিঁড়ি, সিন্ডিকেট ও সেনেট হলের বাইরের অংশ এবং নীচের গেট চত্বরকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে আনা হবে। সামগ্রিক ভাবে ‘বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে ওই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলাকে। ‘‘পুরো বিষয়টি সিন্ডিকেটে তোলা হবে,’’ বলেন রেজিস্ট্রার।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে-পিছনের ফটকে, উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের ঘরের সামনে এবং সব ভবনের নীচে রক্ষী থাকেন। এ বার রক্ষী বাড়ানো হবে। সুরক্ষা বলয় চালু হলে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে দ্বারভাঙা ভবনের নীচের তলার অফিসে কারণ দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে।

দ্বারভাঙা ভবনে আন্দোলন নিষিদ্ধ হলে পড়ুয়াদের অধিকার খর্ব হবে বলেই মনে করছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও। সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা এবং এসএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর বলেন, ‘‘সবই তো তৃণমূলের ‘সম্পদেরা’ই করছেন। শৃঙ্খলা ফেরানোর মুরোদ নেই। তার বদলে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে দেওয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী-ই বা হতে পারে!’’ প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না। সচেতনতা বাড়াতে হয়। যদিও এখনকার শাসক দলের ছাত্রনেতারা তো লুম্পেন। তাদের আর কে বোঝাবে!’’

University Of Calcutta Security Vice Chancellor Group Clash TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy