Advertisement
E-Paper

বদলির খাঁড়া আর পালানোর হিড়িকে টালমাটাল প্রেসিডেন্সি

এটা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি। সেই প্রেসিডেন্সি, ২০১৭ সালে যে-প্রতিষ্ঠান বিশ্ব মানের হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছিল মেন্টর গ্রুপ। ২০১৪-র প্রায় শেষ ভাগে পৌঁছে তার এই ছবি দেখে প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্সির এমন টালমাটাল অবস্থা কেন? তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, মসৃণ ভাবেই চলছে প্রেসিডেন্সির কাজকর্ম!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪১

অবসর নেওয়ার কথা এ মাসেই, এমন এক প্রবীণ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বদলি করা হয়েছে সরকারি কলেজে। তাঁর মতো জনা ৩৫ শিক্ষক চিন্তাগ্রস্ত। কারণ, যে-কোনও দিন তাঁদেরও বদলির নির্দেশ আসতে পারে!

মাসখানেক হতে চলল, বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার নেই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রেজিস্ট্রারের পদ সামলাচ্ছেন পরীক্ষা নিয়ামক।

মাঝেমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা।

অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন।

ডিন অব স্টুডেন্টস দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেনই না।

এটা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি। সেই প্রেসিডেন্সি, ২০১৭ সালে যে-প্রতিষ্ঠান বিশ্ব মানের হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছিল মেন্টর গ্রুপ। ২০১৪-র প্রায় শেষ ভাগে পৌঁছে তার এই ছবি দেখে প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্সির এমন টালমাটাল অবস্থা কেন? তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, মসৃণ ভাবেই চলছে প্রেসিডেন্সির কাজকর্ম!

৬ অগস্ট প্রেসিডেন্সির তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তকে দুর্গাপুর সরকারি কলেজে বদলির নির্দেশ দেয় রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। রাতারাতি বদলি হয়ে যান প্রবীরবাবু। রেজিস্ট্রার হিসেবে প্রেসিডেন্সি তাঁকে স্থায়ী করলেও সরকারি চাকরি থেকে প্রবীরবাবুকে অব্যাহতি দেয়নি উচ্চশিক্ষা দফতর। সেই থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন পরীক্ষা নিয়ামক দেবজ্যোতি কোনার। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, নতুন রেজিস্ট্রার বাছাইয়ের জন্য আবেদন গ্রহণের কাজ সবে শেষ হয়েছে। দ্রুত রেজিস্ট্রার খোঁজার চেষ্টা চলছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

সম্প্রতি ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বদলির নির্দেশ জারি হয়েছে। হরেনবাবুর মতো ৩৫ জন শিক্ষক প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পরে সরকারই জানতে চায়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চান, নাকি সরকারি কলেজেই থেকে যেতে চান? অনেকেই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার আবেদন জানান। অন্য আবেদনকারীদের মতোই ইন্টারভিউ নিয়ে বাছাই করে ওই শিক্ষকদের নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের প্রায় সকলেরই ‘লিয়েন’ শেষ হয়ে গিয়েছে। সরকারি চাকরি থেকে ‘রিলিজ’ চেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এক-দেড় বছর কেটে যাওয়া সত্ত্বেও সরকার তাঁদের অনেককে এখনও ‘রিলিজ’ দেয়নি।

সেই জন্য হরেনবাবুর মতো তাঁদের ঘাড়েও বদলির খাঁড়া নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক শিক্ষক। উৎকণ্ঠা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। “না ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছি, না মন দেওয়া যাচ্ছে গবেষণায়। এক বার উপাচার্য আর এক বার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কাছে যাচ্ছি। যদি ওঁরা দিশা দেখাতে পারেন,” বললেন এক শিক্ষক।

হরেনবাবুর বদলি অবশ্য অন্যদের থেকে একটু আলাদা। কারণ, এ মাসের ৩০ তারিখে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। কর্মজীবনের শেষ মাসে এ ভাবে অন্যত্র বদলি করার নজির কার্যত নেই। তা ছাড়া বছর দেড়েক আগেই ওই শিক্ষকের ‘লিয়েন’-এর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তিনি যে আর সরকারি চাকরিতে ফিরতে চান না, তখনই উচ্চশিক্ষা দফতরকে হরেনবাবু তা জানিয়ে দেন বলে প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর। তা হলে এখন তাঁকে বদলি করা হল কী ভাবে? এ ভাবে তো ওই শিক্ষকের ‘সার্ভিস ব্রেক’-ও হবে।

“রিলিজ করা হবে, নাকি অন্যত্র বদলি করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন নিয়োগকর্তা। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা রাজ্য সরকার। তা হলে এই বদলি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কোথায়,” পাল্টা প্রশ্ন উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার। যদিও রিলিজ বা বদলি যা-ই করা হোক না কেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় কেন লাগল, উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। হরেনবাবুকে বারবার ফোন এবং এসএমএস করা হলেও তিনি জবাব দেননি।

প্রেসিডেন্সিতে এখনও ৭০-৮০টি শিক্ষক-পদ খালি। সম্প্রতি ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এ ইস্তফা দিয়েছেন অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান অম্বরনাথ ঘোষ। তিনি তাঁর আগের কর্মস্থল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাচ্ছেন আগামী মাসে। তার উপরে ৩৫ জন শিক্ষকের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক-পদ এ ভাবে খালি হতে শুরু করলে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানান, যা বলার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতিবাবুই বলবেন। আর দেবজ্যোতিবাবু বলেন, “দেখা যাক না, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়!”

প্রেসিডেন্সিতে আপাতত মেন্টর গ্রুপ নেই। প্রথম মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এখন এই পরিস্থিতিতে তিনি কী বলছেন?

বারবার ফোন এবং এসএমএস করেও সাড়া মেলেনি সুগতবাবুর। একটি সূত্রের খবর, তিনি আপাতত হার্ভার্ডে। ফোন, এসএমএসের উত্তর দেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।

precidency university transfer order kolkata news online kolkata news Senior teacher Government College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy