Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
হয়নি সংস্কার, খন্দময় রাস্তায় চলাফেরা করাই দায়। এ ভোগান্তির শেষ কবে, প্রশ্ন সল্টলেকের
Poor Condition Of Roads

জোড়াতালির কাজে রাস্তা উঁচু হয়ে ফি-বছর একতলা ভাসে বৃষ্টির জলে

সল্টলেক তথা রাজারহাট এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভাঙা রাস্তা সারানোর নামে পিচের উপরে পিচের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। তাতে রাস্তা অনভিপ্রেত রকম উঁচু হয়ে গিয়েছে বহু জায়গায়।

An image of poor condition of road

এবড়োখেবড়ো: উঠে গিয়েছে পিচের প্রলেপ। সল্টলেকের একটি হোটেলের সামনের রাস্তার বেহাল দশা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৯
Share: Save:

জোড়াতালির কাজের ‘মাহাত্ম্য’। গত দু’-তিন বছরে এক বারও নতুন করে রাস্তা তৈরি করা হয়নি সল্টলেক তথা বিধাননগরে। তার পরিবর্তে প্রতি বছরই বর্ষার পরে ভাঙা রাস্তায় দেওয়া হয়েছে পিচের আলগা প্রলেপ। এ ভাবে প্রলেপের উপরে প্রলেপ দিয়ে রাস্তা সারিয়ে নাগরিকদের মুখ হয়তো বন্ধ করা গিয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যা বেড়েছে অন্য দিকে। রাস্তা উঁচু হয়ে যাওয়ায় তা এখন বেশি বৃষ্টিতে নাগরিকদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে অন্য ভাবে।

তা কেমন?

সল্টলেক তথা রাজারহাট এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভাঙা রাস্তা সারানোর নামে পিচের উপরে পিচের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। তাতে রাস্তা অনভিপ্রেত রকম উঁচু হয়ে গিয়েছে বহু জায়গায়। অধিক বৃষ্টিতে সেই উঁচু রাস্তা থেকে জল গড়িয়ে কখনও বাড়ির একতলায় ঢুকছে। কখনও আবার তা রাস্তার ধারে জমে থাকছে। জলের সংস্পর্শে এসে পিচ ভেঙে দিচ্ছে। তাতে বহু রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বলে বিধাননগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ।

বিশেষত, সল্টলেকের কেষ্টপুর খাল লাগোয়া ব্লকের আবাসিকেরা জানাচ্ছেন, বছরখানেক আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাস্তার জল বাড়ির একতলার পানীয় জলের ট্যাঙ্কে ঢুকে পড়েছে। এই সমস্যা খুব বেশি ছিল, যখন কেষ্টপুর খালের জল নামতে চাইত না। সল্টলেক, বাগুইআটি, জ্যাংড়া-সহ বহু এলাকার বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, রাস্তা উঁচু হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে জল ঢুকে পড়ার সমস্যার কথা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাগুইআটির কোনও কোনও বাসিন্দা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বাড়ি উঁচু করার কাজ শুরু করেছেন। যাতে রাস্তার জল বাড়িতে না ঢুকতে পারে। বিধাননগর পুর এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ভাবে একটি বাড়ি উঁচু করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, এলাকার নিকাশির হাল এমনিতেই খারাপ। তার উপরে রাস্তা উঁচু হয়ে জল বাড়ির দিকে নেমে আসছে। বাগুইআটির সাহাপাড়া, প্রতিবেশীপাড়া, শাস্ত্রীবাগানের মতো সল্টলেকের বাইরের এলাকার বহু বাড়ির বাসিন্দারা এই সমস্যায় জর্জরিত।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তার উপরের স্তরটি চেঁছে ফেলে নতুন করে রাস্তা তৈরি করতে হয়। তাতে রাস্তা উঁচু হয় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদারেরা খরচ বাঁচাতে আগের রাস্তা চেঁছে ফেলে কাজ করেন না। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, শাসকদলের নেতাদের বরাতের বখরা দিতে গিয়ে ঠিকাদারদের যে টাকা খরচ হয়, সেটা তাঁরা কাজে ফাঁকি দিয়ে উসুল করে নেন। পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে রাস্তা সারানোর টাকা বকেয়া থাকায় দীর্ঘদিন দরপত্র দিতেই চাননি ঠিকাদারেরা। বার বার দরপত্র ডাকা হয়েছে। কিন্তু বিধাননগর পুরসভা বকেয়া না মেটানোয় রাস্তা-সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। যার সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাস্তার উপরে। বর্তমানে সল্টলেক তথা রাজারহাট এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের রাস্তা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর পুজোর আগে রাস্তার কাজ কেবল তাপ্পি দেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকছে। পদস্থ এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এ বার রাস্তা চেঁছে কাজ করা হবে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। রাস্তা চেঁছে কাজ করলে বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ার সমস্যার সমাধান হবে।’’ রাস্তার বেহাল দশা ফেরাতে বুধবার বিধাননগর পুরসভায় ইঞ্জিনিয়ারেরা বৈঠক করেন বলেও খবর।

বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তথা পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ অনিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, পিচের প্রলেপ দিয়ে রাস্তা উঁচু করার অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন।
এ নিয়ে পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। অনিতা বলেন, ‘‘আমি নিজের ওয়ার্ডে পুরনো রাস্তা চেঁছে ফেলে কাজ করতে বলেছি। অন্য পুরপ্রতিনিধিদেরও রাস্তা চেঁছে নতুন করে তৈরি করতে বলা হয়েছে। আশা করা যায়, তাঁরা এ নিয়ে সতর্ক থাকবেন। কারণ, রাস্তা উঁচু হয়ে বাসিন্দাদের বাড়িতে জল ঢুকে যাবে, এটা কাম্য নয়।’’

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salt Lake Rajarhat Newtown Road Repairing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE