পাড়ায় মাঝরাতে ঘুরছে কুকুর ধরার গাড়ি। কিন্তু কোন সংস্থা থেকে গাড়িটি এসেছে, জানা নেই। প্রয়োজনীয় নথি দেখতে চাইলেও উত্তর মিলছে না। অভিযোগ, ওই গাড়ি ঘুরে যাওয়ার পরেই এলাকা থেকে উধাও কুকুর-বেড়াল! সংশয় আরও বাড়ছে, কারণ পুরসভা সন্ধ্যার পরে কুকুর তোলার কাজ করে না। পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও বেনামে কুকুর-বেড়াল তোলার গাড়ি পাঠায় না। তা হলে গাড়িটি কাদের? পশুগুলি যাচ্ছে কোথায়? নানা জায়গায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে অবহেলার অভিযোগে পোষ্য কুকুর-বেড়াল তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে তৈরি হয়েছে এই সংশয়।
পর্ণশ্রীর বাড়ি থেকে সাতটি কুকুর-বেড়ালের দেহ উদ্ধারের পরে প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে তুলে আনা পশুদের কি এই পরিণতি? ওই বাড়িতে অসুস্থ কুকুর-বেড়াল রাখার আস্তানার নামে অন্য কিছু হত কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, সূত্রের খবর, দেহগুলির কয়েকটির গলা, পেট কাটা ছিল। চামড়া ছাড়িয়ে মাংস বার করার মতো করেও কয়েকটিকে কাটা হয়েছে। জীবিত কুকুর-বেড়ালগুলি মিলেছে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায়।
পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মী রাজীব ঘোষ বললেন, ‘‘তদন্ত করে দেখা উচিত, ওই বাড়িতে কী চলত। রাতে পাড়ায় পাড়ায় বেনামে গাড়ি ঘুরে কুকুর তুলে আনছে। তাদের আর ফেরাচ্ছে না। তাদের নিয়ে কী হচ্ছে, কেউ জানে না। প্রশাসনেরও মাথাব্যথা নেই। শুধু সোসাইটি আইনে নথিভুক্ত করে বা পুরসভা থেকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়েই কুকুর-বেড়াল রাখার আস্তানা খুলে ফেলা হচ্ছে। নজরদারি তো দূর, এমন সংস্থার তালিকাও প্রশাসনের কাছে নেই।’’
তনয়া সরকার নামে এক পশুপ্রেমী বললেন, ‘‘এই সব সংস্থা থেকে পাচার হচ্ছে কিনা, কে জানে! রাস্তায় গাড়ি ভর্তি কুকুর-বেড়াল ধরা পড়লেও পুলিশ আটকায় না।’’ পশু অধিকার রক্ষা কর্মী অর্জয়িতা দাসের দাবি, ‘‘কোথাও খারাপ আছে দাবি করে বিদেশি কুকুর তুলে এনে এই সব সংস্থা বেআইনি প্রজনন করায়। পরে রাস্তায় ছেড়ে আসে।’’
পশুপ্রেমীদের একাংশের দাবি, পশুপাখির উপরে নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইনে (প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট, ১৯৬০) এখনও পশুর দামের উপরে অপরাধ নির্ধারিত হয়। পোষ্যকে ফেলে যাওয়ার ‘অপরাধে’র শাস্তি সর্বনিম্ন জরিমানা ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। তিন বছরের মধ্যে একই অপরাধে শাস্তি হতে পারে তিন মাসের হাজতবাস ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা জরিমানা! প্রশ্ন উঠছে, লঘু শাস্তির কারণেই কি পরিস্থিতি বদলায় না? ‘পিপল ফর দি এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ (পেটা)-এর তরফে সালোনি সাকারিয়া জানান, ওই আইনানুযায়ী, পশুর দায়িত্বে থাকা কেউ যদি তাকে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ছেড়ে চলে যান, তা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ১১(১)(আই) এবং ১১(১)(এইচ) ধারায় মামলা করা যায়। কিন্তু আইন থাকলেও পদক্ষেপ করার সংস্থা কোথায়?
এই পরিপ্রেক্ষিতে পশুপ্রেমীরা ‘ক্যালকাটা সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস’-এর (সিএসপিসিএ) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, পশু অত্যাচার বন্ধের উদ্দেশ্যে তৈরি এই সংস্থারই পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু জানা গেল, সিএসপিসিএ এখন আর আগের ভূমিকায় নেই। ভগ্নপ্রায় ভবন, বেলা ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত সেখানে শুধু পশুর চিকিৎসা চলে। অত্যাচারিত পশুকে তুলে এনে রাখার পরিকাঠামোই এখন নেই। সেখানকার সেক্রেটারি, পশু চিকিৎসক দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, ‘‘চেষ্টা করছি এই সংস্থাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার। মানুষও অনেক সচেতন হয়েছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)