Advertisement
E-Paper

সাবেকপাড়ার পুজোর থিমে যৌনকর্মীরা

সোনাগাছির যৌনকর্মীদের এই জীবনযুদ্ধের কাহিনিই এ বার আঁকা হবে পুজোমণ্ডপের ছত্রে ছত্রে। আহিরীটোলা যুবকবৃন্দের এ বারের পুজোর থিম— ‘উৎসারিত আলো, তাঁরাও মায়ের জাত’। 

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
প্রস্তুতি: চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। আহিরীটোলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

প্রস্তুতি: চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। আহিরীটোলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

তাঁরা মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে অথবা অঞ্জলি দিতে গেলে তা ভাল চোখে দেখতেন না অনেকেই। প্রকাশ্যে পুজো করার অধিকারও আইনি পথে লড়াইয়ের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে তাঁদের। সমাজের কাছে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে আজও প্রতিনিয়ত লড়াই করেন তাঁরা। সোনাগাছির যৌনকর্মীদের এই জীবনযুদ্ধের কাহিনিই এ বার আঁকা হবে পুজোমণ্ডপের ছত্রে ছত্রে। আহিরীটোলা যুবকবৃন্দের এ বারের পুজোর থিম— ‘উৎসারিত আলো, তাঁরাও মায়ের জাত’।

কেন এই থিম? পুজো কমিটির তরফে পুষ্পেন্দু বসুর মতে, ‘‘সোনাগাছির মহিলারা অভাবের তাড়নায়, সংসার ও ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে এই পেশায় আসতে বাধ্য হন। এঁরাও অনেকেই মা। তাই এ বারের পুজোয় সকলের কাছে বার্তা দিতে চাই যে, এই মেয়েদের অন্য ভাবে দেখুন। এঁদেরও বাঁচতে দিন।’’ এই ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সেখানে প্রতিমা গড়ছেন কুমোরটুলির শিল্পী পরিমল পাল। সাজছে মণ্ডপও।

শোভাবাজারের বি কে পাল পার্কের উল্টো দিকের এই পুজোমণ্ডপের প্রস্তুতি এখন শেষের দিকে। কী থাকবে সেই বিশেষ মণ্ডপে? ‘থিম মেকার’ মানস রায় জানাচ্ছেন, যৌনকর্মীরা কী ভাবে এবং কেন এই পেশায় আসতে বাধ্য হন, তা-ই ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপে। তাঁর ব্যাখ্যা, মণ্ডপের শুরুতেই থাকবে বিশাল বিশাল হাত, যা শাড়ির আঁচল ধরে টানছে। এর পরে থাকছে একটি মেয়ের মুখ। মুখে আঙুল দিয়ে যাকে চুপ করিয়ে রেখেছে সমাজ। যে কারণগুলির জন্য এই পেশায় আসতে বাধ্য হন এই মেয়েরা— নারী পাচার, দারিদ্র, সংসারের চাপ, সে সবই মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হবে। চার দিকে থাকবে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের ছবি। পাশাপাশি, তাঁদের উপরে তৈরি তিন মিনিটের একটি তথ্যচিত্রও চলবে মণ্ডপের ভিতরে। যৌনপল্লিতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির পরামর্শ নিয়ে মণ্ডপসজ্জার অঙ্গ হিসেবে সেজে উঠবে গোটা পাড়াটিই। মানসবাবুর কথায়, ‘‘এই পাড়ার বাসিন্দাদেরও স্যালুট জানাতে হয়। তাঁরাই আমাকে এই ভাবে কাজটা করার অনুমতি দিয়েছেন।’’

এমন একটি পুজোর থিম হতে পেরে স্বভাবতই খুশি সোনাগাছি। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সচিব এবং যৌনকর্মী কাজল বসু বলছেন, ‘‘পুজোর ব্যানারে আমাদের ছবি দেখতে ভালই লাগছে। পুজো নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই অনুভূতির কোনও তুলনাই হয় না। এ ভাবেই সমাজ আমাদের গ্রহণ করবে বলে আশা।’’ আর সংগঠনের কর্ণধার স্মরজিৎ জানা বলছেন, ‘‘যৌনকর্মীদের কাছে পুজো শুধু আনন্দের নয়, অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও বটে। সমাজে যেন তাঁরা আর অচ্ছুত না থাকেন, সে বার্তাই দেওয়া হবে এই পুজোয়।’’

Theme Durga Puja Sex worker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy