কলকাতার কাছাকাছি থেকেও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলি যে কাজটা করে উঠতে পারেনি, সেটাই করে দেখাল বামফ্রন্ট পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভা।
আগামী বছর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কী পরিকল্পনা করেছে, তা জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য ফোন করলেন কলকাতার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষকে। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও, অশোকবাবুর অনুরোধ সঙ্গে সঙ্গেই রক্ষা করলেন অতীনবাবু। আগামী বছর মশাবাহিত রোগ দমনে কলকাতা কী করতে চায়, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই পরিকল্পনা পৌঁছে গেল শিলিগুড়িতে।
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কলকাতার পার্শ্ববর্তী তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত পুরসভাগুলিকে সাহায্য করতে চেয়েছে কলকাতা পুরসভা। কী ভাবে মশার লার্ভা চিনতে হয়, কী ভাবে সেগুলিকে মারতে হয়, তা নিয়ে ওই সব পুরসভার কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রস্তাব গিয়েছে কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে। কিন্তু নাম মাত্র কয়েকটি বৈঠক ছাড়া আর কিছু হয়নি। সারা বছর কলকাতা পুরসভা মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কী কর্মসূচি নেয়, তা তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলির কেউই কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও পর্যন্ত জানতে চায়নি বলে অন্দরের খবর।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘ডেঙ্গি দমনে কলকাতা পুরসভা ভাল কাজ করছে। আগামী বছরের জন্য ওরা কী ভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, সে সব জানতেই মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে ফোন করেছিলাম। তাঁর কাছে একটি রূপরেখাও চেয়েছি।’’ ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ দমনে রাজনীতির যে কোনও জায়গা নেই, এ দিন তা বুঝিয়ে দিলেন শিলিগুড়ির মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে কেউ ভাল কাজ করলে তা অন্যদের অনুসরণ করা উচিত।’’
একই মত অতীন ঘোষেরও। তিনি বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু
কোনও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে
সেই বিরোধের প্রসঙ্গ তোলা ঠিক নয়। উনি ফোন করেছিলেন। আগামী বছরের রূপরেখাও পাঠিয়ে দিয়েছি। যে কেউ এমন সহায়তা চাইলে তাদের তা দেব।’’
কলকাতা পুরসভা বছরভর মশা দমনে অভিযান চালালেও এ বছর ডেঙ্গি নিস্তার দেয়নি মহানগরকে। ন্যাশানাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনভিবিডিসিপি)-র ব্যাখ্যা, কলকাতার আশপাশের পুরসভাগুলিতে মশার উপদ্রব না কমানো গেলে কলকাতায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ বাড়বে। সেই নিরিখে বিধাননগর, দমদম, দক্ষিণ দমদম, পানিহাটি, বজবজ, মহেশতলা, হাওড়া পুরসভাকে মশাবাহিত রোগ দমনের পরিকাঠামো তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এ বার তাই কলকাতা লাগোয়া এলাকায় বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনার শহর এবং গ্রাম জুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে যায়। ডেঙ্গি দমনে বারবার নবান্নে বৈঠক ডেকে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভার সাহায্য নেয়নি শাসকদলের কোনও পুরবোর্ড।
এ দিন বামশাসিত শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের সহায়তা চাওয়ার ঘটনার পরে তৃণমূল পরিচালিত পুরকর্তাদের অনেকেই অস্বস্তিতে পড়েছেন। কলকাতা লাগোয়া এক পুরসভার পুর-কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সব সময়ে কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে পরামর্শ নিই। কিন্তু সারা বছর ওদের কী কী কর্মসূচি থাকে, তা কখনও জানতে চাইনি। শিলিগুড়ি আমাদের লজ্জায় ফেলে দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy