Advertisement
E-Paper

কঙ্কাল-কাণ্ডের জট ছাড়াতে কলকাতায় ফরেন্সিক-মনোবিদ

পাভলভ হাসপাতালে পার্থ দে-কে নানা ভাবে পরীক্ষা এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেও রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-রহস্যের চাবিকাঠি মিলল না। রহস্যের জট কাটাতে ফরেন্সিক-সাইকোলজিস্ট অর্থাৎ ফরেন্সিক-মনোবিদকে দিয়ে তাঁর মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করানোর জন্য আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ১৭:৫৬

পাভলভ হাসপাতালে পার্থ দে-কে নানা ভাবে পরীক্ষা এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেও রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-রহস্যের চাবিকাঠি মিলল না।

রহস্যের জট কাটাতে ফরেন্সিক-সাইকোলজিস্ট অর্থাৎ ফরেন্সিক-মনোবিদকে দিয়ে তাঁর মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করানোর জন্য আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিল পুলিশ। পার্থর মানসিক অবস্থা কী ছিল তা জানতে বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা ফরেন্সিক-সাইকোলজিস্ট জয়দীপ সরকার পরির্দশন করলেন রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে-র বাড়ি। ঘুরে দেখলেন ওই বাড়ির ভিতরে পার্থর বাবা অরবিন্দবাবুর ঘর এবং বিভিন্ন জায়গা। ঠিক কী ধরনের মানসিক অবস্থা থেকে পার্থ মানুষ এবং দু’টি কুকুরের কঙ্কালের সঙ্গে থাকতেন, ওই ফরেন্সিক-মনোবিদের পর্যবেক্ষণ থেকে তার আভাস মিলতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

গত ১০ জুন রাতে রবিনসন স্ট্রিটের ওই বাড়ি থেকে পার্থর বাবা অরবিন্দ দে-র অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন পার্থ পুলিশের কাছে দাবি করেন, ঘরের মধ্যে শোয়ানো আছে তাঁর দিদি দেবযানীর দেহ। পরে পুলিশ ওই বাড়ির একটি ঘর থেকে এক মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার করে। পাওয়া যায় দু’টি কুকুরের কঙ্কালও। কঙ্কালটি দেবযানীর কি না, তা জানতে সেই কঙ্কালের করোটি ‘ফরেন্সিক সুপার ইম্পোজিশন’-এর জন্য চণ্ডীগড়ের কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট চলতি সপ্তাহেই পুলিশের হাতে চলে আসার কথা।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মনোবিদ পার্থর ঘরের পাশাপাশি কোথায় দেবযানীর কঙ্কাল রাখা ছিল তা ভালমতো খতিয়ে দেখেন। এ ছাড়াও ঘরের কোথায় কী রয়েছে তা পুরোটাই নজর করেন ওই মনোবিদ। এক ঘণ্টারও বেশি রবিনসন স্ট্রিটের দে বাড়িতে থাকার পাশাপাশি পার্থর কাকা অরুণ দে-র সঙ্গেও কথা বলেন। ঘটনার আগে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল তা-ও জানতে চান ওই মনোবিদ। ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে এ দিন সকালে জয়দীপবাবু প্রথমে শেক্সপিয়র সরণি থানায় যান। সেখানে তদন্তকারীদের সঙ্গে একদফা কথা বলেন তিনি। সেখানে ঘটনার দিন থেকে তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী কী তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে তদন্তকারীদের সঙ্গে নিয়ে রবিনসন স্ট্রিটের দে বাড়িতে যান ওই মনোবিদ।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সিআইডি-র সদর দফতরে যান জয়দীপবাবু। সেখানকার হস্তরেখা বিশেষজ্ঞেরা ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া একাধিক ডায়েরি এবং চিরকূটের লেখা পরীক্ষা করছেন। তা নিয়ে সিআইডি-র অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন ওই মনোবিদ। গোয়েন্দারা জানান, পার্থ বাড়িতে কী অবস্থায় থাকতেন, সেই তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে পার্থের লেখা ডায়েরি ও চিরকুট খুঁটিয়ে দেখবেন ওই ফরেন্সিক-মনোবিদ। রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে যে-সব জিনিসপত্র, খাবার, চিরকুট, পুতুল, ডায়েরি, বই পাওয়া গিয়েছিল, তা-ও পরীক্ষা করে দেখবেন তিনি।

কেন দরকার পড়ল ওই ফরেন্সিক-মনোবিদের?

পুলিশ জানিয়েছে, পার্থকে জেরা করে এখনও ওই বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল এবং অরবিন্দবাবুর মৃত্যুর রহস্যের জট কাটেনি। পার্থর দাবি ছিল ওই কঙ্কালটি তাঁর দিদি দেবযানীর। গত ডিসেম্বরে দিদি মারা যাওয়ার পর তাঁর শেষকৃত্য না করে ঘরেই রেখে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর দুই পোষ্য সারমেয়ের কঙ্কাল।

পুলিশের দাবি, মনোবিকার কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ প্রয়াত আত্মজন এবং পোষ্যের শেষকৃত্য না-করে তাঁদের মৃতদেহ ঘরে রেখে সেগুলোর সঙ্গে বসবাস করতে পারে, মনস্তত্ত্ববিদেরা তার সম্ভাব্য নানা ব্যাখ্যা দেন। পার্থের ক্ষেত্রেও তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর মনের তল পাননি তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘শুধু মনোবিদই নয়, কঙ্কাল কাণ্ডের রহস্যভেদ করতে ফরেন্সিক-মনোবিদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যাঁকে পরীক্ষা করা হচ্ছে, ওই বিশেষজ্ঞেরা শুধু তাঁর মনের নাগাল পাওয়ারই চেষ্টা চালাবেন না, সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক তথ্যপ্রমাণের বস্তুগত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করবেন। যাতে আদালতে পার্থর সম্পর্কে সঠিক রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়।’’

পুলিশের খবর, জয়দীপবাবু উত্তরপ্রদেশের নিঠারিতে শিশু-কিশোর-কিশোরী-সহ বেশ কয়েক জনকে ধারাবাহিক ভাবে খুনের রহস্যমোচনেও সাহায্য করেছিলেন। শুক্রবার পাভলভ হাসপাতালে গিয়ে পার্থকে পরীক্ষা করে তদন্তকারীদের রিপোর্ট দেবেন তিনি। সেই রিপোর্টে ভর করেই রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের মূলে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা।

এ দিন বিকেলে সিআইডি-র অফিস থেকে বের হওয়ার পরে জয়দীপবাবু জানান, পার্থর বিরুদ্ধে দু’টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাই পুলিশ জানতে চাইছে ওই সময় পার্থর মানসিক অবস্থা কী ছিল। আমি সব কিছু খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেব পুলিশকে।

singapore robinson street partha dey forensic psychiatrist joydip sarkar joydeep sarkar skeleton case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy