Advertisement
E-Paper

চার ঘণ্টা পরেও ষোলোতলায় গরম হল্কা, শ্বাসরোধী পোড়া গন্ধ

এক ফোঁটা জল মাথার উপরে পড়তেই ব্রহ্মতালুটা জ্বলে গেল। মনে হল, জল নয়, উপর থেকে যেন ফোঁটা ফোঁটা অ্যাসিড পড়ছে। ষোলোতলার ১২ নম্বর ঘরটা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই যা ছিল ঝকঝকে তকতকে অফিস, তারই এখন খোলনলচে বেরিয়ে পড়েছে। দেওয়ালে প্লাস্টার বলে আর কিছু নেই। ইট দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত ফল্স সিলিং ছিল। গোটাটাই পুড়ে গিয়েছে। মাথার উপরে তার, কাঠামো ঝুলছে। আর তা থেকেই চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়ছে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
পুড়ে খাক অফিসঘর। মঙ্গলবার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পুড়ে খাক অফিসঘর। মঙ্গলবার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এক ফোঁটা জল মাথার উপরে পড়তেই ব্রহ্মতালুটা জ্বলে গেল। মনে হল, জল নয়, উপর থেকে যেন ফোঁটা ফোঁটা অ্যাসিড পড়ছে।

ষোলোতলার ১২ নম্বর ঘরটা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই যা ছিল ঝকঝকে তকতকে অফিস, তারই এখন খোলনলচে বেরিয়ে পড়েছে। দেওয়ালে প্লাস্টার বলে আর কিছু নেই। ইট দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত ফল্স সিলিং ছিল। গোটাটাই পুড়ে গিয়েছে। মাথার উপরে তার, কাঠামো ঝুলছে। আর তা থেকেই চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল পড়ছে। সেই জলেরই এক ফোঁটা মাথায় পড়তে ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। সরে আসতে হল ঘরের এক পাশে।

ঘরের বাইরের নেমপ্লেটে বড় হরফে লেখা ‘আদিত্য বিড়লা গ্রুপ’। ঘরের কোনও আসবাবই অক্ষত নেই। দক্ষিণ দিকটা খোলা। আকাশ দেখা যাচ্ছে। সেখানে যে সার দিয়ে কাচের জানলা ছিল, তা উধাও। ওই তলার বাকি সবটাই অন্ধকারে ঢাকা। শুধু দক্ষিণের ওই বিশাল খোলা অংশ থেকে দুপুরের রোদ এসে পড়েছে পুড়ে যাওয়া ঘরে। স্টিলের সিন্দুকের সামনের দরজা নেই। ভিতরে এক তাড়া কাগজ পোড়ার পরেও তাড়া হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। ঘরের ছোট ছোট আলমারির ভিতরে রাখা কাগজপত্র, ফাইল পুড়ে কালো হয়ে রয়েছে। ঘরের এক কোণ থেকে তখনও হাল্কা ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। আগুন লেগেছে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ। দুপুর সওয়া বারোটাতেও ঘরে ভ্যাপসা গরম, সঙ্গে পোড়া গন্ধ। বেশিক্ষণ থাকলে দম আটকে আসার মতো অবস্থা হচ্ছিল।

যে সিঁড়ি বেয়ে ষোলোতলায় পৌঁছনো গিয়েছিল, দমকলের জলের পাইপ সেই সিঁড়ি বেয়েই উপরে উঠেছে। ততক্ষণে আগুন আয়ত্তে। শুধু জলে থইথই করছে দশতলার উপর থেকে সতেরোতলা পর্যন্ত। সিঁড়ি তো নয়, মনে হচ্ছিল জলপ্রপাতের মধ্যে দিয়ে উঠতে হচ্ছে। যত উপরে ওটা যাচ্ছিল, ততই জলপ্রপাতের তোড় বেড়েছে। পাহাড়ি ঝর্নার মতো জল নেমে আসছিল নীচে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে সামনেই লিফ্ট। সেই লিফ্ট ভিআইপিদের জন্য। এই সিঁড়িটিও নাকি জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি তলায় এই সিঁড়ির দেওয়ালে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা। জলের বড় পাইপ গুটিয়ে রাখা। তার নীচে বড় কলের মুখ। তবে ষোলোতলার সেই অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা দেখে মনে হল, আগুন নেভাতে তা সম্ভবত ব্যবহার হয়নি। সিড়ি দিয়ে উঠে ডান দিকে বেঁকলেই লম্বা করিডর। তার দু’দিকে সার দিয়ে অফিস। করিডর দিয়ে বাঁ দিকে একটু এগোলেই বাড়ির প্রধান সিঁড়ি। সেখান থেকেও হু হু করে জল নামছে নীচের দিকে। সেই সিঁড়ির উল্টো দিকে আবার দু’টি লিফ্ট।

দশতলার পর থেকে প্রতিটি তলার করিডরই জলে ভর্তি। দশতলায় সুনীল কেডিয়ার বড় অফিস। তা তালাবন্ধ। বাকি অফিসগুলিও বন্ধ। করিডরে জল। পনেরো তলায় উঁকি দিয়ে দেখা গেল এনগো নামে এক সংস্থার দফতরের দরজা খোলা। দরজা দিয়ে ঢুকলেই সোফা। সেই অফিসের ভিতরটাও জলে ভর্তি। ষোলোতলায় যেখানে আদিত্য বিড়লার অফিস পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে, তার ঠিক উপরে সতেরোতলার অফিসও পুড়ে ছারখার। সেখানেই দেখা পাওয়া গেল দমকলকর্মীদের। সঙ্গে দু’তিন জন পুলিশ অফিসারও। তখনও সেখানে প্রবল বেগে জল ঢালা হচ্ছে। আগুন নয়, ওই ঘরের আনাচ-কানাচ থেকে তখনও গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। বাকি সব তলায় অল্প আলোর ব্যবস্থা থাকলেও ষোলো এবং সতেরোতলার যে দিকে আগুন লেগেছিল, সেই দিকটি অন্ধকার। হাতড়ে হাতড়ে এগোতে হচ্ছিল।

নেমে আসার পথে দেখা হল বিজয় নন্দীর সঙ্গে। ৬৪ বছরের এই ব্যক্তির দাবি, গত ৪০ বছর ধরে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল-এ পাম্প চালানো এবং আগুন নেভানোর কাজ করছেন। জানালেন, এর আগেও বহু বার আগুন লেগেছে এই বহুতলে। কয়েক বছর আগে, স্টিফেন কোর্টে আগুন লাগার কিছু দিন আগেই পুরো বাড়িটিতেই অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আগুন লাগলে পাম্প চালিয়ে দেওয়ার কথা বিজয়বাবুর। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরই বিভিন্ন তলায় গিয়ে আগুন নেভানোর জলের পাইপ বার করে বিশেষ ওই মোটা কলের সঙ্গে লাগিয়ে জল ঢালার কথা। মঙ্গলবার সকালে আগুন লাগার সময়ে অবশ্য সেই নিরাপত্তারক্ষীদের অধিকাংশই সেখানে ছিলেন না। তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে দমকলকর্মীদের জন্য।

fire at chatterjee international fire brigade sunanda ghosh stephen court kolkata news online kolkata news latest news Sixteenth-floor hot four hour fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy