Advertisement
E-Paper

দিনভর স্মার্টফোনে, সঙ্গী সিঁদুরে মেঘ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই হাতের স্মার্টফোনের স্ক্রিনে আটকে আছে চোখ। ফেসবুক-হোয়াট্সঅ্যাপের বন্ধুত্বে ডুবে থাকতে গিয়ে আশপাশের মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও নেই। সে অফিস হোক বা বাড়ি, পাড়ার আড্ডা হোক বা রেস্তোরাঁ।

পরমা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩০

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই হাতের স্মার্টফোনের স্ক্রিনে আটকে আছে চোখ। ফেসবুক-হোয়াট্সঅ্যাপের বন্ধুত্বে ডুবে থাকতে গিয়ে আশপাশের মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও নেই। সে অফিস হোক বা বাড়ি, পাড়ার আড্ডা হোক বা রেস্তোরাঁ।

ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার পোস্ট করেছেন আধ ঘণ্টা হয়ে গেল। অথচ একটাও লাইক জোটেনি। এ দিকে, বান্ধবী ছবি পোস্ট করার নিমেষের মধ্যে লাইকের বন্যা। কিংবা কাজের চাপে, ছুটির অভাবে বিবর্ণ হয়ে আসা দিনগুলোতেই ফেসবুকের দেওয়াল জুড়ে বন্ধুদের হইহুল্লোড়, খুশি খুশি মুহূর্তের ছবি। ব্যস, মনখারাপ।

পরিস্থিতিটা চেনা লাগছে কি? সিঁদুরে মেঘ বরং দেখেই ফেলুন তা হলে। মনেবিদেরা বলছেন, নেশার পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া সোশ্যাল-নেটওয়ার্কিং কিংবা স্মার্টফোন-ময় জীবনেই চোরাগোপ্তা বাসা বাঁধছে অবসাদ বা হতাশা বা একাকীত্ব। অজান্তেই ঘটিয়ে ফেলছে সমস্যার সূত্রপাত। ঘরে-বাইরে নানা কারণে জেরবার হয়ে এমনিতেই যদি কেউ মানসিক চাপে ভোগেন, সে ক্ষেত্রে আরও বেশি করে উস্কে দিচ্ছে বিপদের আশঙ্কা।

কেমন সেই বিপদ?

আচমকাই কেমন একটা ভয় ভয় করতে শুরু করল। সঙ্গী দুশ্চিন্তাও। মাথার মধ্যে যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। জড়িয়ে যাচ্ছে চিন্তার জাল। শরীর জুড়ে অস্বস্তিকখনও তা মাথা ঘোরা, দুর্বল বোধ করা, কখনও হাত পা কাঁপা বা অবসন্ন ভাব, কখনও বা বুক ধড়ফড়-শ্বাসকষ্ট। এবং সেই সঙ্গেই হঠাত্‌ই চোখে অন্ধকার দেখা। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘প্যানিক অ্যাটাক’। চিকিত্‌সকেরা বলছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই বাড়ছে এই সমস্যায় ভোগা রোগীদের সংখ্যা।

মনোবিদেরা বলছেন, পেশাগত কারণে তুমুল কাজের বোঝা, তার জেরে পরিবারকে সময় দিতে না পারা, নিউক্লিয়ার পরিবারের একাকীত্ব, প্রিয়জনকে হারানোর মতো ধাক্কা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যায় জেরবার হয়ে পড়ে উদ্বেগ কিংবা মানসিক চাপ এখন বেশির ভাগ মানুষেরই নিত্যসঙ্গী। উদ্বেগ জমতে জমতেই এক দিন বাঁধ ভাঙছে। তারই জের এই প্যানিক অ্যাটাক, যাকে বলা হয় দুশ্চিন্তার সর্বোচ্চ স্তরের বহিঃপ্রকাশ। মনোবিদদের মতে, ঘরে-বাইরে মানসিক চাপের এই রোজনামচার সঙ্গেই জুটে যাচ্ছে স্মার্টফোন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর ডুবে থাকার নেশা।

মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম যেমন বলছেন, “প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যা আগেও ছিল। কিন্তু ইদানীং বড্ড বেশি বাড়ছে। উদ্বেগ বা মানসিক চাপের প্রধান কারণ এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। কারও ক্ষেত্রে হয়তো পেশাগত বা পারিবারিক দায়িত্বের চাপ, কারও ক্ষেত্রে একাকীত্ব, কারও ক্ষেত্রে আবার সম্পর্কের টানাপড়েন। কিন্তু এখনকার জীবনযাপনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা স্মার্টফোন অপরিহার্য হয়ে ওঠাটা সেই উদ্বেগ বা মানসিক চাপকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে নিঃশব্দে। ফেসবুকের তর্কবিতর্ক, ছবিতে লাইক না পাওয়ার মতো সামান্য বিষয়েও অবসাদে ভুগছেন অনেকেই। ”

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা স্মার্টফোনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়াটা ভাবাচ্ছে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিত্‌ মিত্রকেও। তাঁর কথায়, “সময়ের অভাবে বন্ধুত্ব এখন হোয়াট্সঅ্যাপ-ফেসবুকেই। নিজের স্মার্টফোনের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে পাশের মানুষটার সঙ্গে কথা বলাই আর হয়ে উঠছে না। কিন্তু এতে কি আর মনের কথা খুলে বলার মতো সত্যিকারের সম্পর্ক তৈরি হয়? প্রত্যাশা পূরণ না হলেই হতাশা এবং দরকারের সময়ে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো বন্ধুর অভাববোধ তাই আরও একা করে দিচ্ছে মানুষকে। বাড়ছে অবসাদ। মানসিক চাপ ভাগ করে নিতে না পেরে সমস্যা বাড়ছে আরও।”

এর পাশাপাশি, গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়া অপরাধের পরে প্যানিক-অ্যাটাকে ভোগার প্রবণতা বাড়তে দেখেছেন মনস্তত্ত্বের শিক্ষক নীলাঞ্জনা সান্যাল। তাঁর কথায়, “ধনঞ্জয়ের ফাঁসি বা হালফিলের নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যা নিয়ে বেশি আসছিলেন রোগীরা। সামাজিক পরিস্থিতিও আসলে মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সমস্যার একটা বড় কারণ।”

অভিজিত্‌বাবুর মতে অবশ্য সামাজিক পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত কাউকে সরাসরি স্পর্শ না করছে, ততক্ষণ বেশির ভাগ মানুষই তা নিয়ে বিচলিত হন না। তবে নির্ভয়া কাণ্ডের মতো ঘটনা নিঃসন্দেহে বাড়ির মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

Smartphone Whatsapp Parama Dasgupta Facebook Friend Panic attack network
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy