পুজো মণ্ডপে খোলা বাঁশ। পাশেই রয়েছে পুকুর। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর বাকি আর মাত্র দু’সপ্তাহ। শহর জুড়ে মণ্ডপ তৈরির ব্যস্ততা। যার মূল উপকরণ বাঁশ। আর এই ‘বাঁশ’ই ভাবাচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে।
বছর দু’য়েক আগে রাজভবনে বাঁশের খোলে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা খুঁজে পেয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা। ওই বছরেই লেডি ব্রেবোর্ন কলেজেও বাঁশের খোলে মিলেছিল এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা। ২০১৬ সালে একাধিক পুজোর মণ্ডপ তৈরির সময়ে বাঁশের খোলে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার লার্ভার সন্ধান পেয়ে সব পুজো উদ্যোক্তাদের সর্তক করেছিল পুর প্রশাসন। বলা হয়েছিল, বাঁশ খাড়া করে পোঁতার সময়ে উপরের অংশ কাপড় দিয়ে মোড়াতে হবে, যাতে খোলে বৃষ্টির জল জমতে না পারে। চলতি বছরেও পুর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় যে পুজো কমিটি সবচেয়ে ভাল কাজ করবে, তাকে ‘স্বাস্থ্য-বান্ধব শারদ সম্মান’ দেওয়া হবে।
কিন্তু এত নির্দেশিকা এবং পুরস্কার ঘোষণার পরেও শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটি যে সে সবের ধার ধারছে না, সোমবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে সেই ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, মণ্ডপ তৈরিতে ভারা করার বাঁশের উপরের অংশ খোলা রেখেই কাজ করছেন ডেকরেটর্সের কর্মীরা। কোথাও আবার সেই বাঁশ ত্রিপল ছাড়িয়ে উঠে গিয়েছে। পতঙ্গবিদ বিজয় চৌধুরীর কথায়, ‘‘বিপদ বুঝে এডিস ইজিপ্টাই এখন বাঁশের খোলে ডিম পাড়ার নতুন আস্তানা খুঁজছে। পুজোর মুখে মণ্ডপে ব্যবহৃত বাঁশ থেকে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার।’’
এ দিন উত্তর কলকাতা কুমোরটুলি পার্কে গিয়ে দেখা গেল, ত্রিপল ভেদ করে উঠে গিয়েছে বাঁশ। কিন্তু বৃষ্টি হলে তো বাঁশের খোলে জল জমে মশার লার্ভা জন্মাতে পারে? পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সমরেশ সাহা বললেন, ‘‘শীঘ্রই বাঁশের উপরের অংশ মুড়ে দেব।’’ যে বাঁশ ইতিমধ্যেই পোঁতা হয়ে গিয়েছে, তার কী হবে? সমরেশবাবুর জবাব, ‘‘সব হয়ে যাবে।’’
‘বাগবাজার পল্লি পুজো ও প্রদর্শনী’র এ বারের থিম ‘মশাসুর বধ’। থিম যদিও মশা নিয়ে, তবু মণ্ডপ তৈরিতে বাঁশের যে ভারা তৈরি করা হয়েছে, তার উপরের অংশ আঢাকা। পুজো কমিটির সদস্য শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে ভারা বেঁধে কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হলেই ওই বাঁশ খুলে ফেলা হবে।’’ কিন্তু বাঁশের খোলে দেড় সেন্টিমিটার বৃষ্টির জল জমলেই তো সেখান থেকে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা জন্মাতে পারে? শরদিন্দুবাবুর দাবি, ‘‘ভারা করা বাঁশের উপরের অংশ সরু। ওখানে জল জমার সম্ভাবনা কম।’’
একই জিনিস দেখা গেল শোভাবাজারের বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপেও। পুজোর কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রশেখর মান্নার কথায়, ‘‘মশার লার্ভা যাতে জন্মাতে না পারে, সে জন্য শীঘ্রই উপরের অংশ ঢেকে দেব।’’ তবে দক্ষিণের পুজো ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্ণধার তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের দাবি, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলার দিকে লক্ষ্য রেখে মণ্ডপ তৈরিতে পুরসভার নির্দেশ মানা হচ্ছে।’’
বারবার সচেতন করা হলেও উদ্যোক্তারা আমল দিচ্ছেন না কেন? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সচেতন করতে পারি মাত্র। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে সচেতনতা-অভিযান চালানোয় অনেক পুজো কমিটি সাড়া দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy