Advertisement
E-Paper

বাংলা ব্রাত্য নয়, বোধোদয় কিছু স্কুলের

আগামীকাল, শনিবার মডার্ন হাই স্কুল বাংলা ভাষাকে পড়ুয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্কুলের অধিকর্তা দেবী কর জানান, ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্কুলটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে ছিল।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩৯

মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে অন্য ভাষায় পারদর্শী হলেও শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। তাই ইংরেজি মাধ্যমের হয়েও বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিতে উদ্যোগী হয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুল। এই লক্ষ্যে শহরের বেশ কিছু স্কুল একাধিক কর্মসূচি নিচ্ছে। এমনকী, কোনও কোনও স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানসূচিতেও ঠাঁই পাচ্ছে বাংলা নাটক ও পুরনো বাংলা গান।

ইতিমধ্যেই এ রাজ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাকে অবশ্য পাঠ্য করতে হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এমন সময়ে ‘কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশন’ (সিআইসিএসসিই) বোর্ডের অধীন বিভিন্ন স্কুলের এই উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রশংসা করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাবিদেরা।

আগামীকাল, শনিবার মডার্ন হাই স্কুল বাংলা ভাষাকে পড়ুয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্কুলের অধিকর্তা দেবী কর জানান, ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্কুলটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে ছিল। তার পরে সিআইসিএসই বোর্ডের অধীনে চলে আসে। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি কর্তৃপক্ষের বরাবরই ভালবাসা অটুট ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বর্তমান বাঙালি সমাজের একটা অংশের বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ার অর্থ বাংলাকে ভুলে যাওয়া নয়। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে বাংলা ভাষাতেই আমরা প্রথম কথা বলতে শুরু করেছিলাম। তাই যে ভাষাতেই পঠনপাঠন হোক না কেন, শিকড়ের টান ছিঁড়ে ফেললে শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে না।’’

এই ভাবনাকে সামনে রেখে বাংলাকে গুরুত্ব দিতে বার্ষিক অনুষ্ঠানের সূচিতে রাজশেখর বসুর ‘মহেশের মহাযাত্রা’ মঞ্চস্থ করবেন ছাত্রীরা। দেবী কর জানান, পুরনো বাংলা গান তো থাকছেই, পাশাপাশি শিক্ষিকাদের সাহায্যে ছাত্রীরা নিজে থেকে গান লিখেছে, সুরও দিয়েছে। সেগুলিই তাঁরা দর্শকদের সামনে তুলে ধরবেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানান, শুধু বাংলা নয়, প্রত্যেকেরই মাতৃভাষায় জোর দেওয়া হয়।

শিক্ষা মহলের একাংশের দাবি, শহর ও শহরতলিতে ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির। সেই কারণে রাজ্য সরকারও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়তে উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যে বেহালায় একটি স্কুলের ভবনও প্রায় প্রস্তুত। সেই অবস্থায় বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষই মেনে নিচ্ছেন, মাতৃভাষার প্রতি পড়ুয়ার ভালবাসা তৈরি করতে না পারলে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না।

শহরের ইংরেজি মাধ্যমের এক পড়ুয়ার অভিভাবকের দাবি, সন্তান বাংলা লিখতে ভুলে গিয়েছে, এই গোছের কথা বলে রীতিমতো গর্ব বোধ করেন কয়েক জন অভিভাবক। এই মারাত্মক প্রবণতা কমানোটা খুব প্রয়োজন।

ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘মাটি ও শিকড় অটুট রেখে গাছে ফুল ফোটানোটাই তো কৃতিত্বের। অন্য ভাষায় পারদর্শী হওয়াটা অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু নিজের মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা না থাকলে কেউই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে না।’’

বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাষাকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে ঠাঁই দিতে উদ্যোগী হওয়ার পর থেকেই আমরা সকলে বাংলাকে আরও গুরুত্ব দিয়েছি। ফেলুদার চরিত্র নিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান হয়েছে।’’

এ রাজ্যের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান তথা বাংলা আকাদেমির সদস্য অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘প্রত্যেকেরই ভাবনার বিকাশ হয় মাতৃভাষায়। বিশ্বের যেখানেই চিন্তনের বিকাশ ঘটেছে, সেখানেই প্রধান চাবিকাঠি ছিল মাতৃভাষা। ওই স্কুলের এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’’

হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু বলেন, ‘‘মানুষ হতে গেলে মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এবং এই কাজ আমরা আগেই শুরু করেছি। শুধু বাংলাই নয়, এই স্কুলে সমস্ত মাতৃভাষার প্রতিই শ্রদ্ধা শেখানো হয়। আমিও তো নতুন করে বাংলা শিখছি।’’

লা মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘আমরা যথেষ্ট সচেতন। বাংলা-সহ সমস্ত মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য এই স্কুলেও নানা ভাবে চেষ্টা করা হয়।’’

Book School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy