Advertisement
E-Paper

বর্ষা নয়, মেঘভাঙা বৃষ্টিতেই ভাসল দক্ষিণ

হাতিবাগানের অফিসে বসেই বাড়ির ফোনটা পেয়েছিলেন যাদবপুরের সমর দত্ত। আধ ঘণ্টার তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার জল উপচে এসে ঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৬

হাতিবাগানের অফিসে বসেই বাড়ির ফোনটা পেয়েছিলেন যাদবপুরের সমর দত্ত। আধ ঘণ্টার তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার জল উপচে এসে ঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই।

হাতিবাগানে তখন বৃষ্টি নেই।

বেলঘরিয়ায় বাপের বাড়িতে বসে দেবলীনা চৌধুরী সোমবার বিকেলে খবর পেয়েছিলেন বেহালায় শ্বশুরবাড়ির সামনে এক কোমর জল।

বেলঘরিয়ায় তখন আকাশে রীতিমতো জ্বলজ্বলে সূর্য।

মঙ্গলবার সকালেও সমরবাবুর বাড়ির সামনে থেকে জল নামেনি। আর বাপেরবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে চেয়েও পারেননি দেবলীনা। কারণ জমা জল পুরো সরেনি।

সোমবার বিকেলে দক্ষিণে যখন আকাশ ভেঙে পড়েছে, তখন উত্তরে বৃষ্টি নেই। পার্ক স্ট্রিটের উত্তরে এক কলকাতা। দক্ষিণে অন্য। এমন অবস্থা আগে কখনও দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না ৫৫ বছরের সমরবাবু। দেবলীনা শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না এখনও।

বর্ষার বৃষ্টিতে আকাশ-জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বাদল মেঘ। সেই মেঘ যখন নীচে নেমে আসে, বৃষ্টি নামে আকাশ ভেঙে। তিন-চারটে জেলা জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। এক এলাকার সঙ্গে অন্য এলাকার বৃষ্টিপাতের ফারাকটা উনিশ-বিশ। কিন্তু সোমবার বিকেলের এক ঘণ্টায় যেখানে দক্ষিণে কোথাও কোথাও ১০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে মধ্য ও উত্তর কলকাতার ভাগ্যে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিও জোটেনি।

এখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। বৈশাখের আগে কালবৈশাখী হচ্ছে না। জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টি না হয়ে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হচ্ছে অগস্টের পরে। নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হচ্ছে বর্ষা। হারিয়ে যাচ্ছে শরত-হেমন্ত। সোমবারের এই বৃষ্টিও কি সেই সামগ্রিক আবহাওয়া পরিবর্তনেরই কোনও ইঙ্গিত?

আবহবিদেরা অবশ্য তা বলছেন না। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীদের দাবি, এ সব ঘূর্ণাবর্তের কারসাজি। কী রকম?

কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরে রবিবার একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেই ঘূর্ণাবর্তটি ক্রমাগত শক্তি বাড়াচ্ছে। সোমবার তা বিস্তৃত ছিল বায়ুমণ্ডলের ৬-৭ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত। উঁচু ওই ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা জলীয় বাষ্পকে ঠেলে তুলে দিয়েছিল অনেক উঁচুতে। জলীয় বাষ্প উঁচুতে উঠে জমে গিয়ে উল্লম্ব মেঘের জন্ম দিয়েছে। সেই উল্লম্ব মেঘই দক্ষিণ কলকাতাকে ভাসিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গোকুলবাবু।

কিন্তু মধ্য এবং উত্তর কলকাতা বৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হল কেন?

গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, উল্লম্ব মেঘের স্বভাবই হল জলীয় বাষ্প টানতে টানতে যেখানে তা সম্পৃক্ত হয়ে যাবে অর্থাৎ আর জলীয় বাষ্প নিতে পারবে না, সেখানেই ওই মেঘপুঞ্জ ভেঙে যাবে। আর যে অঞ্চলের উপরে তা ভাঙবে, সেই অঞ্চল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সোমবারের উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ ভেঙেছে দক্ষিণ শহরতলির উপরে। তাই ভেসেছে দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলি। মেঘপুঞ্জ যদি দক্ষিণ কলকাতার উত্তর প্রান্তে ভাঙত, তা হলে মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতার কিছু অংশ ভাসত। আর মেঘপুঞ্জ সরে গিয়ে যদি দমদম কিংবা বরাহনগরের উপরে ভাঙত, তা হলে সোমবার দক্ষিণের বৃষ্টিটা পেত উত্তর।

দিল্লির মৌসম ভবনের খবর, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তটি ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে। আজ, বুধবার তা সুস্পষ্ট নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে এ রকম মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কি আরও আশঙ্কা থাকছে?

আবহবিদেরা বলছেন, ওই ধরনের উল্লম্ব মেঘ তৈরি হতে গেলে কয়েকটি প্রাকৃতিক পরিবেশ লাগে। সব সময়ে তা থাকে না। তাই সব সময়ে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ থেকে এ ধরনের উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয় না। আলিপুরের এক আবহবিদ জানান, বছর তিনেক আগে এ রকমই একটি ঘূর্ণাবর্ত থেকে জুলাইয়ের এক দুপুরে কলকাতার উপরে তৈরি হয়েছিল উল্লম্ব মেঘ। সেই মেঘ ভেঙেছিল মধ্য কলকাতার উপরে। সে বারও এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল শহরের একাংশ।

Heavy rain wash out kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy