Advertisement
E-Paper

শব্দ থেকে ‘সংসার’ বাঁচাতে সতর্ক আলিপুর

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘শব্দবাজির আওয়াজে সব প্রাণীর ব্যবহারেই কম-বেশি সাময়িক পরিবর্তন আসে। তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে হরিণদের উপরে। ওরা এমনিতেই ভিতু। হার্টও তুলনায় দুর্বল।’’

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৭
নজরে: হরিণ-সহ অন্য পশুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নজরে: হরিণ-সহ অন্য পশুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ভিতু চোখে মা তাকাচ্ছে এ দিক-ও দিক। তার ছানা তখন কোনওমতে এক কোণে লুকিয়ে পড়তে ব্যস্ত। অস্থির হয়ে এ দিক-ও দিক দৌড়চ্ছে পরিবারের বাকিরাও। শান্ত সংসারে আচমকাই যেন খানিকটা ঝড় উঠেছে। কালীপুজোর সন্ধ্যায় এমনই ছবি প্রতি বার নজরে পড়ে আলিপুর চি়ড়িয়াখানার হরিণদের সংসারে। অস্থিরতা ঠেকাতে তাই নিরাপত্তারক্ষীদের ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বিশেষত রাতে যাঁরা পশুপাখিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের বাড়তি তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। শব্দবাজি ফাটলে হরিণদের অস্থিরতা ঠেকাতে প্রয়োজনে তাদের আশপাশে থাকা এবং কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘শব্দবাজির আওয়াজে সব প্রাণীর ব্যবহারেই কম-বেশি সাময়িক পরিবর্তন আসে। তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে হরিণদের উপরে। ওরা এমনিতেই ভিতু। হার্টও তুলনায় দুর্বল। হঠাৎ শব্দবাজির আওয়াজে তাদের চরিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। সেই ‘পরিবর্তন’ যাতে কোনও গুরুতর প্রভাব না ফেলতে পারে, সে কারণে রাতে যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের দায়িত্ব এই সময়ে অনেক বেশি।’’

পশু চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ সময়ে বাচ্চার সঙ্গে মা হরিণের সম্পর্কও পাল্টে যায়। বাচ্চার প্রতি যে নজর স্বাভাবিক সময়ে মা দিয়ে থাকে, তাতে একটা চঞ্চলতা আসে। কেউ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, কেউ লাফ মেরে গাছের আড়ালে চলে যায়। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘চিড়িয়াখানায় তো হরিণদের বাচ্চা হচ্ছেই। এই ক’দিন সন্তান-মায়ের সম্পর্কে একটা অস্থিরতা খেয়াল করি। আওয়াজ হলে হরিণের শান্ত চরিত্র অনেকটা বদলে যায়।’’ চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, এখানে চিতল হরিণ, বার্কিং ডিয়ার-সহ নানা প্রজাতির প্রায় ৮০টি হরিণ আছে। তাদের দেখাশোনা করা এক কর্মীর কথায়, ‘‘দিনে তবু এক রকম। আসল সমস্যা হয় রাতে। আমরা খুব সতর্ক থাকি। সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখলেই কর্তৃপক্ষকে জানাই।’’

শুধু হরিণ নয়, শব্দবাজির দাপটে পাখিরাও ত্রস্ত থাকে। আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রায় ৩০টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। টিয়া, ম্যাকাও, গ্রে প্যারট-সহ হরেক প্রজাতির পাখিদেরও আগামী ক’দিন আতঙ্কের সময় বলে জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। অধিকর্তার কথায়, ‘‘হঠাৎ সশব্দে বাজি ফাটে, আর ভয়ে ওরা চিৎকার শুরু করে দেয়। এমনি সময়েই তো দেখা যায়, বনে হঠাৎ আওয়াজ হলে ওরা হয় উড়ে যায়, না হলে ডাকতে শুরু করে। এই ক’দিনও তেমনটাই হয়।’’ তবে কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, চিড়িয়াখানার মূল পরিসর ও সংলগ্ন এলাকায় যেহেতু শব্দবাজি ফাটানো হয় না সচরাচর, তাই কিছুটা বাঁচোয়া। তা ছাড়া, অনেকটা এলাকা জুড়ে পশু-পাখিরা থাকে বলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। না হলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যেত।

যেমনটা দুর্বিষহ হয় পথ-কুকুরদের জীবন। রাস্তার কুকুরদের নিয়ে কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, বাড়ির পোষ্যেরা তবু কিছুটা নিরাপদে থাকে। কারণ তারা জানে, তাদের দেখার কেউ আছে। তবু বাড়িতেই তারা ভয়ে কাঁপতে থাকে, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। সে সময়ে বহু ক্ষেত্রেই তাদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাখতে হয়। কিন্তু পথ-কুকুরদের সেই ‘কাছের লোক’ থাকে না। ফলে শব্দের দাপটে তাদের জীবন ছন্নছাড়া হয়ে যায় এই ক’দিনে।

পথ-কুকুরদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য পার্থ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, কালীপুজো ও দীপাবলির দিনগুলিতে রাস্তার কুকুরেরা ভয়ে এমন কিছু খায়, যা তারা এমনি সময়ে খায় না। অন্য সময়ে তারা দোকান-বাজারের সামনে থাকে, ফলে খাবারের অসুবিধা হয় না। কিন্তু এই ক’দিন শব্দবাজির ভয়ে মূল রাস্তায় তারা উঠতে পারে না। ফলে খিদের চোটে জঞ্জালের মধ্যে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বা অন্য সামগ্রীও

খেয়ে নেয়, যাতে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা।’’

শব্দবাজির দাপটে পথ-কুকুরদের সীমানাও পাল্টে যায় বলে জানাচ্ছেন পশু চিকিৎসকদের একাংশ। এক পশু চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এক পাড়ার কুকুর শব্দবাজির ভয়ে অন্য পাড়ায় চলে যায়। তাতে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। কারণ, কুকুরদের নির্দিষ্ট সীমানা থাকে। ফলে এক পাড়ার কুকুর অন্য পাড়ায় গেলে তারা অন্য দলের হাতে আক্রান্ত হয়। মারাও যেতে পারে। কিন্তু শব্দবাজির আওয়াজে সেই বোধটা তাদের থাকে না।’’

Kolkata Zoo Sound Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy