ভিতু চোখে মা তাকাচ্ছে এ দিক-ও দিক। তার ছানা তখন কোনওমতে এক কোণে লুকিয়ে পড়তে ব্যস্ত। অস্থির হয়ে এ দিক-ও দিক দৌড়চ্ছে পরিবারের বাকিরাও। শান্ত সংসারে আচমকাই যেন খানিকটা ঝড় উঠেছে। কালীপুজোর সন্ধ্যায় এমনই ছবি প্রতি বার নজরে পড়ে আলিপুর চি়ড়িয়াখানার হরিণদের সংসারে। অস্থিরতা ঠেকাতে তাই নিরাপত্তারক্ষীদের ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বিশেষত রাতে যাঁরা পশুপাখিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের বাড়তি তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। শব্দবাজি ফাটলে হরিণদের অস্থিরতা ঠেকাতে প্রয়োজনে তাদের আশপাশে থাকা এবং কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘শব্দবাজির আওয়াজে সব প্রাণীর ব্যবহারেই কম-বেশি সাময়িক পরিবর্তন আসে। তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে হরিণদের উপরে। ওরা এমনিতেই ভিতু। হার্টও তুলনায় দুর্বল। হঠাৎ শব্দবাজির আওয়াজে তাদের চরিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। সেই ‘পরিবর্তন’ যাতে কোনও গুরুতর প্রভাব না ফেলতে পারে, সে কারণে রাতে যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের দায়িত্ব এই সময়ে অনেক বেশি।’’
পশু চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ সময়ে বাচ্চার সঙ্গে মা হরিণের সম্পর্কও পাল্টে যায়। বাচ্চার প্রতি যে নজর স্বাভাবিক সময়ে মা দিয়ে থাকে, তাতে একটা চঞ্চলতা আসে। কেউ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, কেউ লাফ মেরে গাছের আড়ালে চলে যায়। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘চিড়িয়াখানায় তো হরিণদের বাচ্চা হচ্ছেই। এই ক’দিন সন্তান-মায়ের সম্পর্কে একটা অস্থিরতা খেয়াল করি। আওয়াজ হলে হরিণের শান্ত চরিত্র অনেকটা বদলে যায়।’’ চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, এখানে চিতল হরিণ, বার্কিং ডিয়ার-সহ নানা প্রজাতির প্রায় ৮০টি হরিণ আছে। তাদের দেখাশোনা করা এক কর্মীর কথায়, ‘‘দিনে তবু এক রকম। আসল সমস্যা হয় রাতে। আমরা খুব সতর্ক থাকি। সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখলেই কর্তৃপক্ষকে জানাই।’’