Advertisement
E-Paper

তড়িঘড়ি রূপটান, কর্তা ফিরে যেতেই আবার হতশ্রী মেট্রো

তিনি আসবেন বলে! দমদম থেকে পার্ক স্ট্রিট— সব স্টেশনে সব কর্মী হাজির। উপস্থিত সব টিকিট কাউন্টারের কর্মীরাও। মেঝের চার দিকে সুগন্ধী ফিনাইলের বাড়বাড়ন্ত। বারবার ধুয়েমুছে চলছে সাফাইয়ের কাজ। রাতারাতি বসেছে পাতাবাহারের টব। যাত্রীদের উদ্দেশে বারবার মাইকে ঘোষণা চলছে। বেশির ভাগ স্মার্ট গেটের কাছেই রয়েছেন মেট্রোর কর্মীরা। তাঁদের গায়ে উর্দি।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০০:১৭
কামরায় উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

কামরায় উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

তিনি আসবেন বলে!
দমদম থেকে পার্ক স্ট্রিট— সব স্টেশনে সব কর্মী হাজির। উপস্থিত সব টিকিট কাউন্টারের কর্মীরাও। মেঝের চার দিকে সুগন্ধী ফিনাইলের বাড়বাড়ন্ত। বারবার ধুয়েমুছে চলছে সাফাইয়ের কাজ। রাতারাতি বসেছে পাতাবাহারের টব। যাত্রীদের উদ্দেশে বারবার মাইকে ঘোষণা চলছে। বেশির ভাগ স্মার্ট গেটের কাছেই রয়েছেন মেট্রোর কর্মীরা। তাঁদের গায়ে উর্দি।
আর ট্রেনে? বাতানুকূল ট্রেনের ব্লোয়ার এ দিন চলল ঠিকঠাকই। বিকট শব্দ ছাড়াই বন্ধ হল দরজা। কোথাও অহেতুক আটকে গেল না ট্রেন। কামরার ভিতরেও সারক্ষণ ম ম করল সুগন্ধীর সুবাস। সব মিলিয়ে যাত্রীরা সাক্ষী থাকলেন মেট্রোর এক অন্য পরিবেশের। যা বোধহয় ২৮ বছরে এই প্রথম বার!
কিন্তু এই দৃশ্য দেখা গেল মাত্র এক-দেড় ঘণ্টাই। মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম পরিদর্শন সেরে চলে যেতেই ফিরল সেই পুরনো ছবি। যে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল, তা নিমেষে উধাও। দেখা গেল, অনেক টিকিট কাউন্টারই বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বাতানুকূল কামরায় গরমে ভিজে যাওয়া জামাকাপড়ের ভিড়, দমদমে রাস্তার পাশে সব জবরদখল দোকানিরা দোকান চালু করে দিয়েছেন, মাইকের গলা ফাটানো অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে, গেটে কেউই ব্যাগ দেখছেন না। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ চাঁদনি চক থেকে ছাড়া একটি ট্রেনের দরজায় সমস্যা দেখা দেয়। পার্ক স্ট্রিটে দাঁড় করিয়ে সেটি মেরামত করা হয়। তাতে ট্রেনটি অনেক দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছয়।

বেশি আগে থেকে নয়, শুক্রবার রাতে জানিয়েছিলেন। শনিবার সেই মতো সকালে চলে আসেন জিএম। ঘুরে দেেখন। কিছুক্ষণের জন্য কেন হয়েছিল মেট্রোর এই পরিবর্তন?

মোদী সরকারের এক বছর উপলক্ষে রেলের কাজও খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার জেরেই শুরু হয়েছে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর ‘রেল উপভোক্তা পক্ষ’। আর সেই ঠেলাতেই যাত্রীদের অভাব-অভিযোগ শুনতে সর্বস্তরের রেলকর্মীদের মাঠে নামতে হয়েছে। তাই এ দিন পাতালেও প্রবেশ করলেন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের অফিসারেরা। যাত্রীদের সাধুবাদ ও পরিকল্পনা নিশ্চয়ই জেনেছেন তাঁরা। কিন্তু এর পাশাপাশি তাঁদের শুনতে হয়েছে যাত্রীদের নিত্য দিনের মেট্রো সফরের সমস্যা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও।

জিএম আসবেন বলে শুক্রবার সকালে সাজসজ্জা থেকে শুরু করে কোনও কিছুরই খামতি ছিল না দমদম থেকে পার্ক স্ট্রিট স্টেশন পর্যন্ত। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি হয় যখন বেলগাছিয়া স্টেশনে মেট্রোর তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক যাত্রীর। মেট্রোর সূত্রে খবর, সকাল পৌনে দশটা নাগাদ মেট্রোর লাইনে ‘ঝাঁপ’ দেন ওই ব্যক্তি। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন। সকাল সাড়ে ১০টায় মেট্রো ভবন থেকে পার্ক স্ট্রিট হয়ে দমদমের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও সেই কারণে আটকে পড়েন জিএম-ও। ট্রেন চালু হলে জিএম দমদমে এসে পৌঁছন প্রায় ১১টা নাগাদ।

দমদম স্টেশনে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাস্তা থেকেই আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্মে ওঠার নতুন এসক্যালেটরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাধেশ্যাম। তার পরেই ঘুরে দেখেন প্ল্যাটফর্মের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। দমদম স্টেশনে অপেক্ষারত অনেক যাত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। মেট্রো নিয়ে যাত্রীরাও তাঁদের বক্তব্য জানান। কালীঘাট থেকে আসা শ্রীদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সকাল ও রাতে আরও ১৫ মিনিট করে পরিষেবা বাড়িয়ে দিলে আর অসুবিধা থাকবে না।’’ পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন আরও দুই যাত্রী শুভজিৎ মণ্ডল ও অভিজিৎ দাস। তাঁরা নিজেরাই এগিয়ে এসে জিএম-কে বললেন, ‘‘স্যার, সব ট্রেনই এসি (বাতানুকূল) করে দেওয়া যায় না? এই গরমে নাজেহাল অবস্থা।’’

জিএম অবশ্য তাঁদের নিরাশ করেননি। তিনি বলেন, ‘‘নতুন ১৩টি বাতানুকূল রেক আসছে। দু’বছরের মধ্যেই তা মেট্রোর হাতে এসে যাবে। তখন আর কষ্ট হবে না।’’ জিএম এগিয়ে যেতেই ওই দুই যাত্রীর দীর্ঘশ্বাস, ‘‘আরও দু’বছর অপেক্ষা!’’ ট্রেনে সফর করবেন বলে প্ল্যাটফর্মে ওঠার পথে এল আরও কিছু প্রশ্ন— বারবার কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রো? কেনই বা বাতানুকূল কামরার ছাদ ফুঁড়ে জল পড়ছে কামরার ভিতরে? জিএম রাধেশ্যাম অবশ্য এ দিন সব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন।

কর্মীর সংখ্যা কম থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি কাউন্টার বাড়িয়ে দিতে, বাতানুকূল কামরার ভিতরে জল পড়া বন্ধ করা থেকে শুরু করে ব্লোয়ার, সব কিছুই যাতে ঠিকঠাক থাকে সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ এমনকী, দীর্ঘদিন ধরে চলা সাধারণ রেকগুলিকেও পাল্টে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

প্রশ্নের বাউন্সার বারবার সামলাতে হলেও বাতানুকূল কামরায় মহিলা যাত্রীরা মেট্রোর কিছুটা জয়গানও করেছেন। সঙ্গে অবশ্য জিএম-কে তাঁদের চাহিদার কথাও জানিয়েছেন। কলেজপড়ুয়া তুহিনা চট্টোপাধ্যায়, টুম্পা সরকার বা টুয়া চক্রবর্তীদের আর্জি, সকালে আরও আগে থেকে এবং রাতে আরও দেরি পর্যন্ত মেট্রো চলুক। তাঁরা জানান, পরিষেবার সময় বাড়িয়ে দিলে কলকাতা মেট্রো নিয়ে তাঁদের আর কিছু বলার নেই।

General Manager Kolkata Metro rail Special inspection Kolkata Metro Dum Dum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy