Advertisement
E-Paper

হারের কষ্ট ফিকে হল তুরীয় মেজাজে

ছন্দটা সামান্য টাল খেল বিরাট কোহলি আউট হতে! নাগাড়ে কিছুক্ষণ শাপ-শাপান্ত করে পানীয়ের কাউন্টারে ফের ঝুঁকে পড়লেন পানশালার জঙ্গি ক্রিকেটপ্রেমীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড় দেখেও মোটে মুষড়ে পড়েনি কলকাতা। বেকবাগানের শপিংমলে কেতাদুরস্ত পাবের চেহারা দেখে বরং বোঝা যাচ্ছিল না, মাঝসপ্তাহের কেজো দুপুর। আমুদে জনতার ভিড়ে ‘হাউসফুল’ পাবে কোনওমতে একটা স্টুল জোগাড় করে ঠাঁই পেতে ভরদুপুরেই তৃষ্ণার্তদের রীতিমতো লাইন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
সকাল থেকেই ভিড়ে জমাট শপিং-মল। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল থেকেই ভিড়ে জমাট শপিং-মল। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ছন্দটা সামান্য টাল খেল বিরাট কোহলি আউট হতে!

নাগাড়ে কিছুক্ষণ শাপ-শাপান্ত করে পানীয়ের কাউন্টারে ফের ঝুঁকে পড়লেন পানশালার জঙ্গি ক্রিকেটপ্রেমীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড় দেখেও মোটে মুষড়ে পড়েনি কলকাতা। বেকবাগানের শপিংমলে কেতাদুরস্ত পাবের চেহারা দেখে বরং বোঝা যাচ্ছিল না, মাঝসপ্তাহের কেজো দুপুর। আমুদে জনতার ভিড়ে ‘হাউসফুল’ পাবে কোনওমতে একটা স্টুল জোগাড় করে ঠাঁই পেতে ভরদুপুরেই তৃষ্ণার্তদের রীতিমতো লাইন।

প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলের ভিড়টা আবার চত্বরের বাইরে উপচে পড়ছিল। জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে মলের উঠোনের ঠাসাঠাসি জনতাকে দেখে মনে হচ্ছিল, এটাই সিডনির এসএসসি মাঠ। মাথায় নীলচে ঝাঁকড়া চুল, ভারতের নীলরঙা জার্সিধারী সমর্থকেরা সিটি-হাততালিতে চারধার মাতিয়ে রাখলেন। ঘড়ির কাঁটায় এ শহরের থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলীয় নগরীর সাগরতটের মদির সন্ধে যেন নেমে এসেছিল চৈত্রের ঠা-ঠা দুপুরের কলকাতাতেই।

বাস্তবিক গান ও পানের জন্য রসিকজনের প্রিয় ঠেক পার্ক স্ট্রিটের পাঁচতারার পাব এ দিন খুলেই ছিল বেলা ১২টায়। নির্দিষ্ট সময়ের চার ঘণ্টা আগে, যেন সিডনির বিকেলের সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায় ঘড়ি মিলিয়ে। বেকবাগানের শপিংমলের পানশালার ম্যানেজার বলছিলেন, এই বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল উপলক্ষে পাবে যা ভিড় হয়েছে, তা সপ্তাহান্তে ডিজে-র আসরকেও টেক্কা দেবে। কথার মাঝে আফশোসের সুরটাও অবশ্য চাপা থাকছিল না। কারণ, ততক্ষণে ভারতের শেষ আশার সলতে ধোনিও দুরন্ত ডিরেক্ট হিটে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন। পাব ম্যানেজার শেষটা বলেও ফেললেন, “ইস্‌ সামনের রবিবার ফাইনালে ইন্ডিয়া খেললে নির্ঘাত ভিড়ের চোটে পানশালার দরজা ভাঙার দশা হতো!”

পুরনো কলকাতায় অফিসপাড়ার পানশালাতেও সেমিফাইনাল উপলক্ষে দুপুর থেকেই দানা বাঁধে ফুরফুরে মেজাজ। কিন্তু জায়ান্ট্ স্ক্রিনে সেজে ওঠা নয়া জমানার পাবের আবহে পুরো উত্‌সব।

বিরাট কোহলি আউট হতে শোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুনিয়া জুড়ে ভারত-সমর্থকেরা শোকে, ক্ষোভে মুহ্যমান হয়ে পড়ার মুহূর্তেও পানশালার মেজাজ কিন্তু দিব্যি তুরীয়। ভারতের ব্যাটিং টপ অর্ডারের বিপর্যয় দেখতে দেখতেও মধ্য তিরিশের তরুণ-তরুণীদের দলটার হাসি উবে যায়নি। বরং ঠাট্টার সুরে এক তরুণী তাঁর সহকর্মীদের কপট দোষারোপ করছিলেন, “তোদের পাল্লায় পড়ে অফিসে মিথ্যে বলে এই হেরো ম্যাচ’টা দেখতে এলাম! জানাজানি হলেই কেলো!” তবে হাবভাবে হারের গ্লানির থেকেও দুপুরের হুল্লোড়ের মেজাজটাই মুখ্য। ওয়াটসনের বলে শেষপর্বে ক্যাপ্টেন ধোনি পরপর দু’টো লম্বা ছক্কা হাঁকানো পর্যন্ত তিনি সোল্লাসে দেশের হয়ে গলা ফাটিয়ে গেলেন।

পানশালার ভিড়ে অবশ্য শুধু মন দিয়ে খেলা দেখলে চলে না। বিয়ার বা সুদৃশ্য ককটেলে আয়েশি চুমুকের ফাঁকে খপাখপ নিজস্বীও তো চাই। কোণঠাসা ভারতের ব্যাটিংয়ের মাঝপর্বে বান্ধবী রিয়া পোদ্দারের উচ্ছ্বাসের ছবি পেতে সঙ্গী সিদ্ধার্থকে অবশ্য বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। ধোনি একটা চার মারতেই তক্কে তক্কে থেকে রিয়ার হাততালির ছবিটা পেয়েও গেলেন।

পানশালার বাইরে শপিংমলের জটলার মেজাজে বরং ক্রিকেট যুদ্ধের পরিচিত নখ-কামড়ানো টান-টান উত্‌কণ্ঠা। টেনশনে বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র বেলঘরিয়ার সায়কের হাতটা ধরে ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী মধ্যমগ্রামের তপোলীনা। বন্ধুকে সান্ত্বনার সুরে সায়ক তখন বোঝাচ্ছেন, ম্যাচ বার করা শক্ত, কিন্তু এখনও অসম্ভব নয়।

বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের বায়োটেকনোলজির পড়ুয়াদের দলটাও ‘প্র্যাকটিকাল’ হবে না শুনেই শপিংমল মুখী। কারও বাড়ি সোদপুর, কারও দমদম। খেলা দেখতে জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ রাখাই ভরসা।

দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবু সকালটা রোগীদের চাপে খেলা দেখার সুযোগ পাননি। কিন্তু রোগীরাই তাঁকে নিয়মিত অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অগ্রগতির খবরাখবর জুগিয়ে গেলেন। অফিসপাড়ায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অফিসে অন্য কেজো দিনের তুলনায় ভিড় নেহাতই অর্ধেক। এক কর্পোরেট সংস্থার পার্কিং লটে চালকেরা গাড়ির রেডিওর সঙ্গে মাইক লাগিয়ে তারস্বরে ধারাবিবরণী শুনে গিয়েছেন।

সেক্টর ফাইভে কেপিএমজি সংস্থা কর্মীদের খেলা দেখার সুযোগ করে দিতে ছুটি মঞ্জুর করেছিল। বদলে শনিবার সবাই অফিস করবেন। কগনিজেন্টের অফিসে ক্যাফেটেরিয়ায় উত্‌সাহীদের ভিড়। আইবিএমে অনেকেই খেলা দেখবেন বলে ‘ওয়র্ক ফ্রম হোম’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অফিসে যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও নিজের ল্যাপটপে ম্যাচ দেখতেই মনোযোগী ছিলেন।

বিশ্বকাপ আঁকড়ে রাখার আশা মুখ থুবড়ে পড়লেও দিনটা খানিক অন্য স্বাদই দিয়ে গেল।

world cup 2015 Cricket WC2015 India-Australia Virat Koholi Park street Riju basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy