কেরলে তাঁর লড়াই সিপিএমের বিরুদ্ধে। সংসদে তাঁকে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে এক সুর বজায় রাখতে। তবে বাংলায় তাঁরা কংগ্রেসের উপরে কোনও পক্ষের সঙ্গেই জোট চাপিয়ে দিতে চান না বলে বার্তা দিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল। সেই সঙ্গেই বাংলায় দলের প্রতি তাঁর নির্দেশ, বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ এগোতে হবে দ্রুত।
সংসদের পাবলিক অ্যাকউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন কেরলের আলপ্পুঝার কংগ্রেস সাংসদ বেণুগোপাল। সূত্রের খবর সেই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের পাওনা আটকে রাখা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরব হওয়ায় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ওই দাবির পক্ষে কড়া অবস্থানই নিয়েছেন তিনি। তার পরে সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেলে প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনীতি বিষয়ক কমিটির (আর এক পিএসি) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বেণুগোপাল। ওই কমিটি গঠিত হওয়ার পরে এটাই ছিল তার প্রথম বৈঠক। কমিটির সদস্য এবং প্রদেশ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বেণুগোপালের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক দুলাম আহমেদ মীর, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শক্তিসিন গোহিলও। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দীপা দাশমুন্সি থাকলেও দিল্লিতে থাকায় বৈঠকে আসতে পারেননি ওই কমিটির আর এক বাঙালি সদস্য অধীর চৌধুরী। তবে বেণুগোপালের সঙ্গে তাঁর এই নিয়ে কথা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনীতি বিষয়ক কমিটিতে রাজ্যের নেতাদের বক্তব্যও শুনেছেন বেণুগোপাল।
সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা, অমিতাভ চক্রবর্তী, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ পাঠক, মনীশ তামাং, ইশা খান চৌধুরী, ফিরোজ়া বেগম, বিশ্বজিৎ দে, মিতা চক্রবর্তীরা দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে মতামত জানিয়েছেন। প্রদীপ বলেছেন, বিধানসভা ভোটের আগে যে হেতু বেশি সময় হাতে নেই, তাই নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করে ফেলা উচিত। অমিতাভের প্রস্তাব, কংগ্রেস যদি ২৯৪টি আসনেই লড়তে চায়, তা হলে নেতাদের বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে বুথ স্তরের প্রতিনিধি (বিএলএ-২) বাছাই করায় নজর দিতে বলা হোক। তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংরক্ষিত আসনে নজর দেওয়ার কথাও এসেছে বৈঠকে। নেতাদের বক্তব্য শোনার পরে বেণুগোপাল বৈঠকে বলেছেন, সংগঠন শক্তিশালী করতে না-পারলে কোনও দলই কংগ্রেসের কথাকে গুরুত্ব দেবে না। তাই সংগঠন ঠিক করা প্রথম কাজ। জেলায় জেলায় মণ্ডল বা ব্লক কমিটি গড়ে ফেলার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। তার পরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কারও সঙ্গে জোট করতে চাইলে এআইসিসি সেইমতো সিদ্ধান্ত নেবে। সূত্রের খবর, হাল্কা সুরে বেণুগোপাল এ-ও বলেছেন, কোনও রাজ্যে (অর্থাৎ কেরল) বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই হচ্ছে। আবার এই রাজ্যে গত নির্বাচনে কংগ্রেস নেতারা বামেদের সঙ্গে ‘মধুচন্দ্রিমা’য় গিয়েছেন! তাঁর ব্যক্তিগত মত যা-ই হোক, এআইসিসি প্রদেশের মতে আপত্তি করেনি।
বৈঠকের পরেও এই সংক্রান্ত প্রশ্নে বেণুগোপাল বলেছেন, ‘‘প্রতিটা প্রদেশ কংগ্রেসেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রদেশ নেতৃত্ব মতামত স্থির করবেন, তার পরে এআইসিসি-কে পাঠাবেন। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন আমরা মতাদর্শের লড়াই করছি, সংবিধান বাঁচানোর যুদ্ধে আছি। জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি।’’ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘কর্মসংস্থান, শিল্প ও শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা এখানে মূল প্রশ্ন। শিক্ষকেরা চাকরি হারিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন! বাংলায় ভোট ডাকাতি হয়েছে, আর নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটার তালিকায় চুরি করেছে। এ সবের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)