রসনা: মৎস্যবিলাসের অভিনব উপায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বিলিতি কেতার ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ নয়, একেবারে দেশি কেতায় মাছভাজা। আসন্ন বর্ষায় যার সঙ্গী হতে পারে মুড়ি, পান্তা ভাত বা খিচুড়ি।
চিরকেলে ‘মছলিখোর বাঙালি’ রসনাকে ঠিক এ ভাবে উসকে দিয়েই মোক্ষলাভের লক্ষ্যে সামিল রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। নলবনের ফুডপার্কে ইতিমধ্যেই আপাদমস্তক মেছো পদের একটি রেস্তোরাঁ দাঁড় করিয়েছে নিগম। পাশেই তাদের পানশালাতেও মাছের রমরমা। বাঙালির মৎস্যপ্রেম আরও গাঢ় করে তুলতে এ বার খানিকটা ফাস্ট ফুডের আদলে মাছভাজার মহিমা প্রচারে নিগম কোমর বাঁধছে। খাস কলকাতায় অন্তত পাঁচটি আউটলেট ‘ভাজা মাছ’-এর জন্যই উৎসর্গ করতে চায় তারা। চটকদার বিজ্ঞাপনী ক্যাচলাইন-এর ঢঙে যার মন্ত্র, ‘ভাজা মাছটি উল্টে খান’!
সরকারি সংস্থা বেনফিশ এত দিন প্রধানত মাছের ফ্রাই, কাটলেট, ফিশ ফিঙ্গারে মেতেছিল। নিগমের ব্র্যান্ড ‘অল ফিশ ফ্রায়েড’-এর ইউএসপি, কিন্তু বাঙালিয়ানাও। নলবন, বিকাশ ভবন, ইকো পার্ক, ক্যাপ্টেন ভেড়ি থেকে নবান্নের আউটলেটের মেনু এটা ভেবেই ঢেলে সাজা হয়েছে।
ইলিশ-খিচুড়ির ধ্রুপদী যুগলবন্দির পাশাপাশি পেশ হচ্ছে, পান্তাভাত-চাপিলা বা পেঁয়াজমুড়ি-তোপসে, পেঁয়াজমুড়ি-মাছের ডিমের বড়া, গলদা মুড়োর বড়া, পেঁয়াজমুড়ি-মাছের মুড়োর চপের মতো সম্ভাবনাময় জুটিকে। কাতলাপেটি, চিংড়ি থেকে শুরু করে মৌরলা, পুঁটি, তেলাপিয়া, বাটা মাছের ভুরজি বা চপ অবতারেরও চলছে নিত্যপুজো।
এর আগে সরকারি খাদ্যমেলা ‘আহা রে বাংলা’র আসরেও মাছভাজার প্রতি বাঙালির ভক্তি মালুম হয়েছে। নিগমের পরিকল্পনা, এই বর্ষায় মাছভাজার একটি উৎসব চালু করা হোক। মাছভাজার সম্ভার নিয়ে শীঘ্রই তারা পৌঁছে যাবে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে— তরুণ প্রজন্মের কাছেও।
কিন্তু এত মাতামাতির কারণ কী?
আরও পড়ুন: আমসত্ত্বে বিশ্ব মাতাতে চান মমতা, চলছে প্রযুক্তির খোঁজ
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আশা, বাড়িতে তো বাঙালি মাছভাজা খেয়েই থাকে! তেলেভাজা, রোল-চাউমিনের মতো স্ট্রিট ফুডের জায়গাটাই বা মাছভাজা কেন নেবে না! মন্ত্রীর কথায়, ‘‘লোকে যত বেশি মাছভাজায় মজবে, মাছ ঘিরে পাড়ায়-পাড়ায় খুলবে কর্মসংস্থানের দরজা।’’ নিগমের ১২০০ হেক্টর জলাশয়ে এমনিতে মাছের অভাব নেই। এমডি সৌম্যজিৎ দাস মনে করেন, টাটকা মাছভাজা স্বাদু, স্বাস্থ্যকর খানার জোগানও সুনিশ্চিত করবে।
সৌম্যজিৎবাবুর কথায়, ‘‘সামান্য ভাজার চাটু বা কড়াই, ইনডাকশন হিটার সঙ্গে থাকলেই ছোটখাটো স্তরে যে কেউ মাছভাজার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।’’ নিগম এবং তাঁর সহযোগী কয়েকটি সংস্থার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে বলে মৎস্য দফতর সূত্রের খবর। মাছ দিয়ে নিগমই সাহায্য করবে। ‘অল ফিশ ফ্রায়েড’-ব্র্যান্ডের গুণমান বজায় রাখতেই দরকারে তালিম দেওয়া হবে ইচ্ছুকদের।
আর একটা লক্ষ্যমাত্রাও অবশ্য রয়েছে। মেছো মেনুর সৌজন্যে গত ছ’বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে নিগমের মুনাফা। মোটে ১৫ লক্ষ থেকে এখন প্রায় চার কোটির কাছাকাছি। মাছভাজার হাত ধরে এ বছর লাভের অঙ্ক সাড়ে চার কোটি ছুঁয়ে ফেলত পারে বলে তাদের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy