Advertisement
E-Paper

বন্দি-ভিড় সামলাতে বা়ড়ছে জেলখানা

প্রতি একশো জন বন্দির মধ্যে সাতাত্তর জনই বিচারাধীন। ফলে, বিচারাধীন বন্দিদের ভিড়ে দ্রুত ভরে উঠছে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলি। জেলের সংখ্যা না বাড়লে উপায় নেই। তাই দুই ২৪ পরগনায় বারাসত ও বারুইপুরে দু’টি জেলা-জেল তৈরির পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। এমন জেল হবে অন্য জেলাতেও।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৪৩

প্রতি একশো জন বন্দির মধ্যে সাতাত্তর জনই বিচারাধীন। ফলে, বিচারাধীন বন্দিদের ভিড়ে দ্রুত ভরে উঠছে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলি। জেলের সংখ্যা না বাড়লে উপায় নেই। তাই দুই ২৪ পরগনায় বারাসত ও বারুইপুরে দু’টি জেলা-জেল তৈরির পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। এমন জেল হবে অন্য জেলাতেও। সেই লক্ষ্যেই কাল, মঙ্গলবার বারুইপুরে একটি জমি দেখতে যাচ্ছেন কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি-সহ সংশোধন প্রশাসন দফতরের শীর্ষ কর্তারা।

কারাকর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের এনে সংশোধনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়। এ শহরে রয়েছে তিনটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার— প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, দমদম। প্রেসিডেন্সিতে কলকাতার বন্দি এবং আলিপুর ও দমদমে দুই ২৪ পরগনার বন্দিদের রাখা হয়। গত কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনটি জেলেই বন্দির সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যাও। যাঁদের অনেকেই আবার বাংলাদেশি। কারা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার তিন জেলে গড়ে দু’হাজার বন্দি থাকার কথা। কিন্তু প্রতিটি জেলেই বন্দির সংখ্যা কখনওই আড়াই হাজারের কম থাকে না। এর ফলে শুধু সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের রেখে সংশোধন করার প্রক্রিয়া ধাক্কা খাচ্ছে বলেই মনে করছে রাজ্য সংশোধন প্রশাসন দফতর। তাই জেলা-জেল তৈরির এই সিদ্ধান্ত।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এক-এক জন বন্দির আদালতের তারিখ পেতে লাগছে কয়েক মাস। ফলে, এই বন্দিদের ভিড়ে সংশোধন প্রক্রিয়া অনেকটাই ধাক্কা খাচ্ছে। জেলা-জেল তৈরি হলে বিচারাধীন বন্দিদের ওখানে সরানো যাবে। সংশোধন প্রক্রিয়ার উন্নতি হবে।’’

মিলনবাবুর বক্তব্যের সমর্থন মিলছে রাজ্য কারা দফতরের হিসেবেও। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতার তিনটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে গড়ে একশো জন বন্দির মধ্যে সাতাত্তর জনই বিচারাধীন। এক কারা কর্তার কথায়, ‘‘এর সঙ্গে মহিলা বন্দির চাপও রয়েছে দমদমে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তবু মহিলা বন্দিদের জন্য আলিপুর মহিলা জেল রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় তা-ও নেই। ফলে, ওই জেলার সব মহিলা বন্দিকেই দমদম জেলে রাখা হয়। স্বভাবতই তাঁদের ভিড়ে সেখানকার হাঁসফাঁস অবস্থা।’’ ওই কারাকর্তা বলেন, ‘‘বিচারাধীন বন্দিদের মধ্যে যাঁরা অর্ধেকের বেশি কারাবাস করে ফেলেছেন, তাঁদের অবিলম্বে জামিন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাই নিয়ে নিম্ন আদালতগুলির মাঠে নামার কথা। কিন্তু ছ’মাস কেটে গেলেও এ নিয়ে অগ্রগতি একেবারেই বলার মতো নয়। এই অবস্থায় জেলা-জেল তৈরি হলে খানিকটা হলেও কেন্দ্রীয় জেলগুলির উপরে চাপ কমবে।’’

কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি জানান, সাধারণত একটি জেলা-জেল তৈরি করতে ১০-১৫ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু কলকাতা লাগোয়া বারুইপুর ও বারাসতে এক লপ্তে এতটা জমি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে একটু কম জমি পাওয়া গেলে সেখানেই জেলা-জেল তৈরির কাজ শুরু করা হবে। কারা দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বারুইপুর-আমতলা রোডে পদ্মপুকুরে একটি জমি দেখতে যাবেন মন্ত্রীরা। সেটি পছন্দ হলে সেখানেই কাজ শুরু হবে। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘জমি নিয়ে খুব সমস্যা হবে না। সরকারের পড়ে থাকা জমি থেকেই প্রয়োজনীয় জমি জোগাড় করব।’’

কারামন্ত্রীর কথায়, ‘‘বিচারাধীন বন্দিদের নিয়ে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। বিচারব্যবস্থা তাঁদের জামিন না দিলে আমাদের সংশোধনাগারেই রাখতে হবে। পরিস্থিতি সামলাতে তাই আমরা রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় একটি করে জেল করব। তার আগে সবগুলি জেলায় একটি করে জেলা-জেল থাকা উচিত।’’ তাই প্রথমে দুই ২৪ পরগনায় জেল তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। নতুন তিন জেলা পূর্ব-মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও আলিপুরদুয়ারেও জেলা-জেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে জেলা-জেল তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া, আলিপুরদুয়ারের জেলটিকে জেলা-জেলে উন্নীত করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।

barasat jail baruipur jail haider ajij safi prisoner west bengal over crowded prisons bengal prisons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy