Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
Sanitary Napkin

State Government: নারী-সমস্যায় সহায় হতে ন্যাপকিনের সঙ্গী চিরকুট

রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে কম দামে পৌঁছে যাওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটে এ বার থেকে থাকবে এমনই বার্তাবাহী চিরকুট।

সহায়: এ ভাবেই ন্যাপকিনের সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে চিরকুট। নিজস্ব চিত্র

সহায়: এ ভাবেই ন্যাপকিনের সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে চিরকুট। নিজস্ব চিত্র

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৫:৫৫
Share: Save:

সবুজ চিরকুটের উপরে লেখা, ‘নিখোঁজ হলে শিশু করবেন না দেরি, ফোন করুন ১০৯৮-এ/ হারিয়ে যাওয়া আটকাতে আমরা সবাই একসাথে’।

কোনওটায় আবার লেখা— ‘এখন বিয়ে নয়/ আগে নিজের পায়ে দাঁড়াব, আমার উপর বিশ্বাস রাখো/ করে দেখাব’। সঙ্গে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশন এবং পাচার-বিরোধী সংস্থার হেল্পলাইন নম্বর।

রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে কম দামে পৌঁছে যাওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটে এ বার থেকে থাকবে এমনই বার্তাবাহী চিরকুট। যা নারী ও শিশু পাচার, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, নারী নিগ্রহ নিয়ে সচেতনতার প্রচারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর জোগাবে মেয়েদের হাতের মুঠোয়।

সুন্দরবন, শিলিগুড়ি, দুই মেদিনীপুর, মালদহ, বীরভূম, দুই দিনাজপুর-সহ রাজ্যের একাধিক জেলার প্রায় পাঁচ লক্ষ মেয়ের হাতে কম দামে ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্রতী, ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ বলে পরিচিত, বাঁশদ্রোণীর শোভন মুখোপাধ্যায়। তাঁর সেই ‘ঘরে ঘরে ন্যাপকিন’ প্রকল্পের সঙ্গেই এ বার জুড়ছে একাধিক জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যাকেন্দ্রিক বার্তা ও ফোন নম্বর লেখা চিরকুট। আজ, শনিবার কলকাতা পুরসভার আট নম্বর বরো অফিসে এই উদ্যোগের সূচনা হবে। নারী ও শিশু পাচার, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, নারী নিগ্রহ— ঋতু-স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এমন সমস্যা নিয়ে বার্তা থাকবে প্যাকেটে থাকা চিরকুটে। শোভন বলছেন, ‘‘মেয়েদের সুস্থ থাকা ও সুরক্ষিত থাকা, দুটোই যে সমান গুরুত্বপূর্ণ— এর মাধ্যমে সেই বার্তাই দেওয়া হবে। প্যাকেট ফেলে দিলেও চিরকুট রেখে দিতে পারবেন। বিপদে পড়লে বা অন্য কারও বিপদে যাতে তাঁরা ঠিক জায়গায় জানাতে পারেন, তাই থাকছে ফোন নম্বর।’’

ন্যাপকিন-চিরকুটের এই মেলবন্ধন ঘটাতে শোভনের বড় সহায় উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে পাচার-বিরোধী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার তরফে সোমা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, অতিমারিতে পাচার বেড়েছে বহু গুণ। কারণ, পাচারকারীরা নতুন নতুন পন্থা নিচ্ছে। কোভিড-যুগে পর্নোগ্রাফি বেড়েছে, স্কুল বন্ধ থাকায় বেড়েছে বাল্যবিবাহও। ফলে বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা বা নিগ্রহ। সোমার কথায়, ‘‘পাচারের দিক থেকে দেখলে একই সঙ্গে উৎস, গন্তব্য ও ট্রানজ়িট হিসাবে কাজ করে এই রাজ্য। শহুরে মহিলারা তুলনায় শিক্ষিত, সতর্ক হলেও গ্রামের মেয়েরা ততটা নন। সেখানেই এই সমস্যা বেশি। তাই তাঁদের সচেতন ও সাহায্য করতে এই উদ্যোগ।’’

শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী মনে করছেন, এর ফলে প্রয়োজনীয় বার্তা ও হেল্পলাইন নম্বর সহজে ঘরে ঘরে পৌঁছবে। তাঁর মতে, ‘‘অনেক সময়ে মেয়েরা সমস্যায় পড়লেও কোথায় কাকে জানাতে হবে, জানা থাকে না। এই উদ্যোগে আমাদের হেল্পলাইন নম্বর পৌঁছচ্ছে তাঁদের হাতে। ফলে সমস্যায় পড়লে বা অন্যের বিপদে শুধু ফোন করে খবরটুকু দিতে হবে। তার পরেই ব্যবস্থা নেব আমরা।’’

‘কলকাতার প্যাডম্যান’-এর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনেকেই বহু সামাজিক সমস্যা নিয়ে সচেতন নন। এ ক্ষেত্রে চিরকুটে লেখা বার্তা তাঁদেরও ভাবতে শেখাবে। কোনও বিষয়ে সংশয় হলে হেল্পলাইন নম্বরগুলি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।’’ তবে তাঁর মতে, বাল্যবিবাহের মোড়কে বা ‘ভাল থাকা’র নেশায় স্বেচ্ছায়ও পাচার হচ্ছেন অনেকে। সীমান্তবর্তী এলাকাতেই এই প্রবণতা বেশি। গভীরে প্রোথিত সমস্যা সমূলে উপড়ে ফেলতে স্রেফ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, স্কুল-কলেজে নিয়মিত কাউন্সেলিংও জরুরি।

আপাতত আরও বেশি মেয়েদের হাতে চিরকুট-বার্তা পৌঁছে দেওয়াই চ্যালেঞ্জ শোভনের। তাঁর কথায়, ‘‘সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকের অধিকাংশেই পাচার বড় সমস্যা। কিন্তু সেখানে মাত্র এক লক্ষ মেয়ের কাছেই ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে পেরেছি। বিডিও-রা সহযোগিতা করলে জেলায় জেলায় আরও বেশি মেয়েদের হাতে ন্যাপকিন ও চিরকুট পৌঁছনোর কাজটা দ্রুত ও সহজে হতে পারে।’’ আর লীনা-অনন্যাদের পরামর্শ, এমন অভিনব ভাবনা আপন করুক অন্যেরাও। তাতে আখেরে লাভ মেয়েদেরই।

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary Napkin West Bengal government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE