Advertisement
E-Paper

শব্দদৈত্য রুখতে সুপ্রিম কোর্টে পর্ষদ

শব্দবাজি এই রাজ্যে যাতে না ফেরে, সেই লক্ষ্যে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। শুক্রবার শীর্ষ আদালতে পর্ষদ ওই স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দাখিল করেছে। এ ক্ষেত্রে ১৯ মে জাতীয় পরিবেশ আদালতের জারি করা নির্দেশের বিরুদ্ধেই আবেদন করেছে পর্ষদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০০:০২

শব্দবাজি এই রাজ্যে যাতে না ফেরে, সেই লক্ষ্যে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

শুক্রবার শীর্ষ আদালতে পর্ষদ ওই স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দাখিল করেছে। এ ক্ষেত্রে ১৯ মে জাতীয় পরিবেশ আদালতের জারি করা নির্দেশের বিরুদ্ধেই আবেদন করেছে পর্ষদ। পরিবেশ আদালত ওই নির্দেশে জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে বাজির শব্দমাত্রা আর ৯০ ডেসিবেল রাখা চলবে না। দেশের অন্য জায়গার মতো এই রাজ্যেও বাজির শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল ধার্য করতে হবে। এই মর্মে পর্ষদকে এক মাসের মধ্যে নতুন ভাবে বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে নির্দেশ দেয় জাতীয় পরিবেশ আদালত। পর্ষদ তা না মেনে ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র শনিবার বলেন, ‘‘শব্দবাজি নিয়ে পরিবেশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছি।’’

প্রসঙ্গত, ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমার মধ্যে কেবল খেলনা পিস্তলে ফাটানো ‘ক্যাপ’ ছাড়া আর কোনও শব্দবাজি তৈরি করা সম্ভব নয়। পর্ষদের বক্তব্য, এই রাজ্যে বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল ধার্য করে শব্দদূষণকে প্রায় দু’দশক যাবৎ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টই প্রথম এই নির্দেশ দিয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্ট পরে বিভিন্ন সময়ে ওই নির্দেশকে মান্যতা দেয় বলে শীর্ষ আদালতকে আবেদনে বলেছে পর্ষদ।

নাগরিক সমাজের অভিযোগ ছিল, জাতীয় পরিবেশ আদালত ওই নির্দেশ দেওয়ার পরেও পর্ষদ শব্দবাজির প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে উদ্যোগী হচ্ছে না। রাজ্যে পরিবেশপ্রেমীদের কয়েকটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘সবুজ মঞ্চ’ গত ৬ জুলাই জানিয়েছিল, পর্ষদ এই ব্যাপারে উদ্যোগী না হওয়ায় তারাই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।

তবে পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে শুনে এ দিন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর পক্ষে পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও পর্ষদ ঠিক পদক্ষেপ করেছে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম।’’ নববাবু জানান, ‘সবুজ মঞ্চ’ও আগামী সপ্তাহে শব্দবাজি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে। পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক ও পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্ষদের এই পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। নাগরিক সমাজ পর্ষদকে যাবতীয় সাহায্য করবে।’’

কিন্তু ১৯ মে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরে পর্ষদ প্রায় দু’মাস দেরি করল কেন সুপ্রিম কোর্টে যেতে? কারণ, ইতিমধ্যেই ৪০০ টন শব্দবাজি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির দাবি। সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো এক মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি না করে পর্ষদ তাকে অবমাননা করেছে। আমরা সেই অভিযোগ জানিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টেও লড়ব।’’

তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণবাবুর যুক্তি, ‘‘আমরা সব রকম আঁটঘাট বেঁধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। শীর্ষ আদালতে গিয়ে আইনি লড়াই লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে সময় লেগেছে।’’

তবে পর্ষদেরই অন্য একটি সূত্রের খবর, বিলম্বের আসল কারণ অন্য। পর্ষদ-কর্তাদেরই কেউ কেউ পরিবেশ আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাননি। পরিবেশ দফতরের আধিকারিকদের একাংশও একই অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, বিষয়টি চেপে যাওয়াই ভাল, তা হলে শব্দবাজি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোট শাসক দলের পক্ষে থাকবে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরনের আপস করা হলে মোটের উপরে রাজ্যের সাধারণ মানুষ শব্দদানবের দাপটে যে অতিষ্ঠ হবেন, সেটা শেষমেশ বুঝতে পেরে নবান্নের শীর্ষ মহল সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে পর্ষদকে সবুজ সঙ্কেত দেয়।

State pollution control board Supreme Court pollution issue high court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy