রাজ্যের দুই জায়গা থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের দু’টি ঘটনায়পৃথক ভাবে চার্জশিট জমা দিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। একটি মামলায় আট জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। অন্য মামলায় দশ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধেচার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের দু’টি ঘটনার সঙ্গেই কলকাতার বি বা দী বাগের একটি প্রাচীন অস্ত্র বিপণির মালিকতিন ভাই জড়িত বলে দু’টি চার্জশিটেই দাবি করা হয়েছে তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে। উত্তর ২৪ পরগনার রহড়ার রিজেন্ট পার্কের একটিআবাসনের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৯০৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের ঘটনায়ওই তিন জনকে গ্রেফতার করেছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ব্যারাকপুর এবং আলিপুর আদালতে ওই দু’টি ঘটনায় চার্জশিট জমা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। বি বা দী বাগের অস্ত্র বিপণির মালিক তিন ভাই বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
আদালত সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসটিএফের গোয়েন্দারা দক্ষিণ ২৪পরগনার জীবনতলা থানা এলাকা থেকে প্রায় ২০০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গেই উদ্ধার করা হয়েছিল একাধিক দোনলা বন্দুক। ওই ঘটনায় প্রথমে চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও, পরে তাদের জেরা করে গ্রেফতার করাহয় আরও তিন জনকে। সেই সঙ্গে আরও দু’টি দোনলা বন্দুক এবং কার্তুজ পাওয়া যায়। পরে ধৃত তিন জনের মধ্যে ছিল বি বা দীবাগের অস্ত্র বিপণির দুই কর্মী। তাদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, পরীক্ষার নাম করে দোকান থেকে ওই কার্তুজ এবং বন্দুক সরিয়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছেবিক্রি করে দিত সেখানকার দুই কর্মী। সে কথা জানতেন দোকানের মালিকেরাও। ওই ঘটনার তদন্তের শেষে গত সপ্তাহেগোয়েন্দারা ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। তাতে ওই তিন ভাইয়ের নাম রয়েছে। তবে, তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়নি।
অন্য দিকে, গত জুলাই মাসে রহড়ার রিজেন্ট পার্কের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৯০৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। পরে ওই মামলারতদন্তভার যায় এসটিএফের হাতে। প্রথমে ওই ফ্ল্যাটের মালিক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করার পরে ধরা হয় বি বা দী বাগের অস্ত্র বিপণির মালিক তিন ভাইকে। একই সঙ্গে গ্রেফতার হয় পুরুলিয়ার একটি অস্ত্রের দোকানের কর্মী। ওই দোকানের মহিলা মালিক পলাতক বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। ওই মামলায় কলকাতার বিপণির তিন মালিক জামিনে মুক্ত থাকলেও বাকি তিন জন এখনও জেলে।
সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার অস্ত্র বিপণির মালকিনকে পলাতক দেখিয়ে ওই মামলায় আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, পুরুলিয়ার দোকানে জমাথাকা একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে রহড়ার ওই ফ্ল্যাট থেকে। যা পরীক্ষার পরে মিলে গিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সেই সঙ্গেই চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, রহড়া থেকে উদ্ধার হওয়া কার্তুজের বেশির ভাগই গিয়েছিল বি বা দী বাগের অস্ত্র বিপণি থেকে।
গোয়েন্দাদের দাবি, বন্দুক কেনার সময়ে অনেকেই তা পরীক্ষা করে তবে কিনতেন। আর সেই পরীক্ষা করার সময়েই কার্তুজের হিসাবে গোলমাল করা হত অস্ত্র বিপণিতে। পরীক্ষায় যত সংখ্যক কার্তুজ ব্যবহার করা হয়েছে বলে দেখানো হত কাগজে-কলমে, তত সংখ্যক কার্তুজ আদতে ব্যবহার করা হত না। বাকিটা সরিয়ে ফেলা হত বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। রহড়ার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া বাকি অস্ত্র বিহারের মুঙ্গেরে বরাত দিয়ে তৈরি করানো হয়েছিল বলে আদালত সূত্রের খবর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)