Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ঘুড়ি চুরির অভিযোগ তুলে ‘খুন’ করা হল ছাত্রকে

পিছমোড়া করে বেঁধে পিটিয়ে চারতলার ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নীচে নর্দমায় ফেলে এক কিশোরকে খুন করা হয়েছে। অভিযোগ এমনই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির কাছেই একটি নর্দমায় তার হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ মেলে। পুলিশ জানায়, মহম্মদ জিশান (১৩) নামে ওই কিশোরের বাড়ি গার্ডেনরিচের আলিফনগরে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জিশান বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল।

বিহ্বল মা। — নিজস্ব চিত্র

বিহ্বল মা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

পিছমোড়া করে বেঁধে পিটিয়ে চারতলার ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নীচে নর্দমায় ফেলে এক কিশোরকে খুন করা হয়েছে। অভিযোগ এমনই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির কাছেই একটি নর্দমায় তার হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ মেলে। পুলিশ জানায়, মহম্মদ জিশান (১৩) নামে ওই কিশোরের বাড়ি গার্ডেনরিচের আলিফনগরে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জিশান বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল। তার দেহ উদ্ধারের পরে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি এলাকায়।

পুলিশ জানায়, রোজকার মতো বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে খেলতে বেরিয়েছিল জিশান। সে না ফেরায় বৃহস্পতিবার সকালে গার্ডেনরিচ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার। সন্ধ্যায় তার এক বন্ধুর সূত্রে খবর পেয়ে জিশানের দেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই কিশোর খুন হয়েছে অভিযোগ তুলে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন। যে তিনতলা বাড়ির সামনে নর্দমায় জিশানের দেহ মেলে, তার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সাহাব হোসেন ওরফে পাপ্পুর ঘুড়ির গুদামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয় রাত থেকেই। গণ্ডগোল ছড়ানোর আশঙ্কায় বন্দর এলাকার অন্যান্য থানাকেও সতর্ক করা হয়।

ময়না-তদন্তের পরে শুক্রবার দেহ পাড়ায় পৌঁছলে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্থানীয় রামনগর মোড় অবরোধ করেন বাসিন্দারা। তার জেরে যানজট হয়। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। সাহাবকে অবশ্য এ দিন সকালেই গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে খুনের মামলা রুজু হয়েছে তার ভাই জাভেদ হোসেনের বিরুদ্ধেও। সে ফেরার।

পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, উঁচু থেকে পড়ে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে তাকে আঘাতও করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নথিভুক্ত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে এক জন। অপর জনের খোঁজ চলছে।

ফতেপুর হিন্দি নাগরিক স্কুলের ছাত্র জিশানের মা সাবিয়া খাতুনের অভিযোগ, ‘‘টাকার লোভ দেখিয়ে জিশানকে ঘুড়ির কারখানায় কাজ করাত সাহাব। বাচ্চা ছেলে শ্রমিকের কাজ করুক, এটা চাইতাম না। মাস দুয়েক আগে প্রতিবাদ করায় সাহাবের সঙ্গে তুমুল তর্কাতর্কি হয়। আমাকে বলা হয়েছিল, ওর কারখানার পাশে রাস্তায় জিশানকে খেলতে দেওয়া হবে না। এমনকী, আমার ছেলেকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’’

তবে একাধিক পড়শির বক্তব্য, বুধবার বিকেলে সাহাবের কারখানার পাশের রাস্তায় খেলতে খেলতে জিশান গুদামে ঢুকে ঘুড়ির কাঠি চুরি করতে গিয়েছিল। আগে থেকেই সাহাবের রাগ ছিল। জিশান ও ভাবে ঢুকে পড়ায় তার সুবিধা হয়, বলছেন তাঁরা। তবে প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, ‘‘জিশান সত্যিই যদি চুরি করতেও ঢোকে, তাতেও কি কাউকে মেরে ফেলা যায়?’’

আলিফনগর বস্তির একচিলতে ঘরে সপরিবার থাকেন জিশানের বাবা, পেশায় গাড়ির চালক বাবা মহমম্দ জসিম। জিশান ছাড়া তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে আফরিন দশম শ্রেণির ছাত্রী, জিশানের দুই ভাই ইমরান ও ইরফান পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। এ দিন শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন জিশানের মা। বারবার শুধু বলছিলেন, ‘‘ইনসাফ চাই। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে, তাদের ফাঁসি হোক।’’

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘আত্মসংযমের অভ্যাস থেকে সরে যাচ্ছে মানুষ। লাগামহীন ইচ্ছেতে মানুষের যুক্তির বোধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথায় থামতে হবে, হুঁশ থাকছে না। এটা তারই উদাহরণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kite student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE