Advertisement
E-Paper

শিক্ষকদের স্কুলেই ঢুকতে দিল না পড়ুয়ারা

বিক্ষোভ শেষে স্কুলের টিচার্স রুমে যখন বসেছিলেন শিক্ষকেরা তখন দক্ষিণ দমদমের এক পুর কর্মী সেখানে এসে জানিয়ে দিলেন, স্কুলের জলাধারের জল পচে দুর্গন্ধ ছাড়ছে। এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। দ্রুত জলাধার পরিষ্কার করা উচিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৭
স্কুলের গেট ভিতর থেকে বন্ধ করে রেখেছে পড়ুয়ারা। ঢুকতে পারেননি শিক্ষকেরাও। সোমবার, দমদমে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

স্কুলের গেট ভিতর থেকে বন্ধ করে রেখেছে পড়ুয়ারা। ঢুকতে পারেননি শিক্ষকেরাও। সোমবার, দমদমে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে প্রায় দু’ঘণ্টা স্কুলের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুল সূত্রে খবর, সোমবার সকালে দমদমের পূর্ব সিঁথি ভারতী বিদ্যামন্দির স্কুলে শিক্ষকেরা ঢুকতে গেলে পড়ুয়ারা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। শৌচালয়ে জল নেই। শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য সাফাইকর্মী নেই। এখনও পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক পায়নি দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা। এ বছর যে ১৫ জন ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে তারা কেউ ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে সাইকেল পায়নি— এমন অভিযোগ তুলে সোমবার সুষ্ঠু ভাবে পঠনপাঠনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ৯৫ জন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে কমবেশি ৪০ জন এ দিন বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল।

বিক্ষোভ শেষে স্কুলের টিচার্স রুমে যখন বসেছিলেন শিক্ষকেরা তখন দক্ষিণ দমদমের এক পুর কর্মী সেখানে এসে জানিয়ে দিলেন, স্কুলের জলাধারের জল পচে দুর্গন্ধ ছাড়ছে। এটি ব্যবহার করা উচিত নয়। দ্রুত জলাধার পরিষ্কার করা উচিত। পুরকর্মীর পর্যবেক্ষণ শুনে এক শিক্ষিকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই জলেই তো মিড ডে মিল রান্না হয়!’’ যদিও প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে মিড ডে মিল রান্নায় ওই জল ব্যবহার করা হচ্ছে না।’’

মধুগড়ের বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্রী ময়না মণ্ডল বলে, ‘‘স্কুলে গরমে ক্লাস করা যায় না! শৌচাগারে জল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাই।’’ প্রায় দু’ঘণ্টা শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুক্রবারও একই দাবিতে পথে নেমেছিল পড়ুয়ারা।

স্কুলের এই পরিস্থিতির জন্য প্রধান শিক্ষককের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন সহ-শিক্ষকেরা। প্রাক্তন টিচার-ইন চার্জ বিকাশ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ২০১৪ সালের অগস্টে প্রধান শিক্ষক সমীর বিশ্বাস দায়িত্ব নেওয়ার পরেই অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, প্রায় ৯ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল না মেটানোয় পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গত চার মাস ধরে এ ভাবেই চলছে! এক শিক্ষিকা রূপমা ঘোষ বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ না থাকায় মাধ্যমিকে যাদের ইনফর্মেশন টেকনোলজি ছিল, তাদের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় সমস্যা হয়েছে।’’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এই ভবনেই সকালে প্রাথমিক স্কুল চলে। ওরা কোনও খরচ দেয় না উল্টে বিদ্যুৎ চুরি করায় ৯ হাজার টাকা বিল হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, স্কুলে যোগ দেওয়ার পরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন তিনি। তাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অসুবিধা হচ্ছিল। তাই ছাত্রছাত্রীদের প্ররোচনা দিয়ে সেগুলি ভাঙা হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ছাত্রছাত্রীরা কেন পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্নের উত্তরে সমীরবাবু বলেন, ‘‘প্রতিটি প্রকল্পের জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের গাফিলতিতেই ছাত্রছাত্রীরা প্রকল্পের সুবিধা পাননি।’’ বিকাশবাবুদের পাল্টা দাবি, গাফিলতি যদি কারও থাকে তা প্রধান শিক্ষকের। তিনি হাজিরার খাতার পাতা ছিঁড়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন আটকে দেন। সমীরবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিকাশবাবুরাই আমার ঘর থেকে হাজিরার খাতা তুলে পালিয়ে গিয়েছিলেন।’’

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই স্কুলের অভ্যন্তরীণ একটা সমস্যা রয়েছে বলে জানি। ঠিক কী ঘটেছে তা বিশদে না জেনে মন্তব্য করব না।’’ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর জয়ন্তী সেনশর্মা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকেরা অসন্তুষ্ট। প্রশাসনের কাছে আর্জি, অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করে স্কুলে পঠনপাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।’’

Bharati Vidyamandir School protest infrastructure Dum Dum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy