Advertisement
E-Paper

গুরুতর অসুস্থ ছাত্রেরা, ‘নতিস্বীকারে নারাজ’ প্রশাসন

রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় দেবাশিসের অনশন যাতে ভাঙানো না যায়, তার জন্য সহপাঠীরা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন। বসে আছেন মা-ও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০১:৩০
উদ্বিগ্ন: ছেলে দেবাশিস বর্মণের জ্ঞান হারানোয় ভেঙে পড়েছেন মা ।  শনিবার রাতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

উদ্বিগ্ন: ছেলে দেবাশিস বর্মণের জ্ঞান হারানোয় ভেঙে পড়েছেন মা ।  শনিবার রাতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

হস্টেলের দাবিতে টানা বারো দিন অনশনের জেরে শনিবার রাতে জ্ঞান হারালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক আন্দোলনকারী ছাত্র। গুরুতর অসুস্থ আরও তিন জন। তবু সমস্যা সমাধানের কার্যত কোনও ইঙ্গিত নেই এ দিনও। বরং নবান্ন সূত্রে খবর এল, চাপের মুখে নতিস্বীকার করবে না প্রশাসন। ছাত্রের গুরুতর অবস্থার কথা শুনেও রাতে কর্তৃপক্ষ জানান, রবিবার কাটিয়ে তবেই হবে ব্যবস্থা।

মেডিক্যাল সূত্রে খবর, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র দেবাশিস বর্মণ এ দিন রাতে শৌচাগারে যেতে গিয়ে জ্ঞান হারালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জোর করেই ভর্তি করা হয় তাঁকে। গত কয়েক দিন ধরেই তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। এ দিন দেবাশিসের অসুস্থতার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বৌবাজার থানার পুলিশ। অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করে তারা। যদিও ছাত্রেরা জানান, এখন এ আন্দোলন শুধু তাঁদের হাতে নেই। এটি সামাজিক লড়াই।

এ দিকে, রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় দেবাশিসের অনশন যাতে ভাঙানো না যায়, তার জন্য সহপাঠীরা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন। বসে আছেন মা-ও। দেবাশিসের অসুস্থতার খবর পেয়ে মেডিক্যালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র বলেন, ‘‘আমার অনুরোধ ছাত্রেরা নিজেদের চিকিৎসা শুরু করুন। সোমবার স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে কথা হবে। দুর্ভাগ্যবশত কাল রবিবার। যা পরিস্থিতি, তাতে কাল সোমবার হলেই ভাল হত।’’

১২ দিন পূর্ণ হল অনশন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক পড়ুয়া।

অনশনরত ছাত্রদের শারীরিক অবস্থা যে একটু করে খারাপ হচ্ছে, তার খবর পেয়েও শনিবার দিনভর তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি প্রশাসনের তরফে। সবে হস্টেল সংক্রান্ত কিছু খবর নিতে এ দিন দুই পরিদর্শককে পাঠানো হয়। এ দিন আন্দোলনরত তিন পড়ুয়াকে নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অশোকবাবু। হস্টেলের কত জন আবেদনকারী আছেন এবং ক’টি ঘর ফাঁকা, সে সংক্রান্ত একটি হিসেব দেবাশিসবাবুকে দেন পড়ুয়ারা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলেজ কর্তৃপক্ষকে সেই হিসেব খতিয়ে দেখে সমস্যার দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। পাশাপাশি, হস্টেলে কত ঘর ফাঁকা, কত জন থাকেন এবং আরও কত জন আবেদন জানিয়েছেন— সেই তালিকা নবান্ন এবং স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

এর পরেই এ দিন দুপুরে ফের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন অশোকবাবু। আন্দোলনকারীরা জানান, প্রায় দেড়শো জন হস্টেলে ঘর পাননি। অন্য পড়ুয়াদের জন্য নির্ধারিত ঘরে কোনওমতে থাকছেন তাঁরা। হস্টেলের বৈধ আবাসিক না হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন সুবিধে থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ দিকে, এ দিন শহিদ দিবস পালনের মঞ্চ থেকে অন্য রাজ্যের মেধাবীদের এখানে এসে পড়ার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রেক্ষিতে শ্যামল চক্রবর্তী, সুজন চক্রবর্তী, পার্থ ঘোষের মতো বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তোলেন— ঘরের কাছে মেডিক্যালের এত জন পড়ুয়া যেখানে অনশন করছেন, তাঁদের সমস্যার সমাধানে কেন কাউকে পাঠাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী? পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, নাট্যব্যক্তিত্বেরাও আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যান। বিদেশে কর্মরত চিকিৎসকেরা ই-মেলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘পড়ুয়ারা এতদিন অনশন চালাচ্ছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের কথাও ঠিকমতো শোনা হচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক!’’

কলেজ কর্তৃপক্ষ এ দিন দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও অনশনকারীরা সিদ্ধান্ত থেকে সরতে নারাজ। তাঁরা জানান, আগেও একাধিক বার কর্তৃপক্ষ সমস্যা মিটে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। তাই সমাধান হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবেই। এ দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, ছাত্রাবাসের সংস্কার প্রয়োজন হলে করে দেওয়া হবে। তবে চাপের কাছে নতিস্বীকার করা হবে না।

Sick Students Hunger Strike Calcutta Medical College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy