Advertisement
E-Paper

বড়রা পারেনি, পথ দেখাচ্ছে ছোটরা

প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রসঙ্গে অনেক সময়েই প্রশাসনের একাংশ যুক্তি দেন, এ ব্যাপারে দোকানি কিংবা ক্রেতারা সচেতন নন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০২:৩২
সচেতন: কাপড়ের ব্যাগে কেনাকাটা। নাগেরবাজারে। ছবি: শৌভিক দে

সচেতন: কাপড়ের ব্যাগে কেনাকাটা। নাগেরবাজারে। ছবি: শৌভিক দে

‘বড়’রা পারছে না। তবে করে দেখাচ্ছে ‘ছোট’রা! প্লাস্টিক বন্ধের ক্ষেত্রে এমনই দুই বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে।

কলকাতা-হাওড়া পুরসভা যেখানে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে রীতিমতো ‘ব্যর্থ’, সেখানে নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রামের মতো শহরতলির পুরসভা সে কাজে যথেষ্ট সফল বলেই মনে করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। ওই সব এলাকার বাজারে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বাজার খুঁজে কোনও দোকানে প্লাস্টিক ব্যাগ মিলবে না। তার বদলে কাপড়ের তৈরি ব্যাগেই মাছ, মাংস, আনাজ বিক্রি করছেন দোকানিরা। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বহু বছর আগে থেকে এই কাজটাই করে দেখিয়েছিল দক্ষিণ দমদমের বাঙুর অ্যাভিনিউ। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তা ছিল নেহাতই বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। ‘‘আশার কথা, এমন দ্বীপ আরও গজিয়ে উঠছে। এ ভাবেই হয় তো আরও বহু এলাকা প্লাস্টিকমুক্ত হয়ে উঠবে,’’ মন্তব্য এক পরিবেশকর্মীর।

এই ছবি দেখে প্লাস্টিক দূরীকরণে আশার আলো দেখছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। বস্তুত, এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে (৫ জুন) গোটা দুনিয়া জু়ড়ে ‘প্লাস্টিক দূরীকরণ’কেই থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বহু পরিবেশকর্মীর মত, আগামিকাল, মঙ্গলবার এই পুরসভাগুলিকেই প্লাস্টিক বিরোধী প্রচারের ‘মুখ’ করে তোলা উচিত।

প্লাস্টিক বন্ধ করার প্রসঙ্গে অনেক সময়েই প্রশাসনের একাংশ যুক্তি দেন, এ ব্যাপারে দোকানি কিংবা ক্রেতারা সচেতন নন। কথাটি পুরোপুরি যে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, তা বাজারগুলি ঘুরলেই চোখে পড়ে। যেমন রবিবারই শহরের যদুবাবু-সহ একাধিক বাজারে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই জিনিসপত্র নিয়ে গেলেন অধিকাংশ ক্রেতা। অথচ তাঁদের অনেকে থলে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু মাছ-মাংস, আনাজপাতি কেনার সময়ে তাঁদের ভরসা সেই ক্যারিব্যাগই। থলের মধ্যে ক্যারিব্যাগ ভরে নিয়ে বাজার সারলেন তাঁরা।

কিন্তু নিউ ব্যারাকপুর ও মধ্যমগ্রাম, শহরতলির এই দু’টি পুরসভা দেখিয়েছে, শুধু সচেতনতা নয়, আইনি জুজু দেখিয়েও কাজ হয়। ওই এলাকায় সচেতনতা যেমন প্রচার করা হয়েছে, তেমনই আইন ভাঙলে জরিমানা, শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। বেশ কয়েক বার বিভিন্ন দোকানে হানাও দেওয়া হয়েছে। নিউ ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান তৃপ্তি মজুমদার বলেন, ‘‘প্রথমেই যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তা নয়। কিন্তু বোঝানোর পাশাপাশি জরিমানার ভয়ও দেখানো হয়েছে। তাই এখন কোনও বাজারে ক্যারিব্যাগ দেওয়া হয় না।’’ মধ্যমগ্রামের পুরপ্রধান রথীন ঘোষ জানান, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে বাজার কমি়টিগুলির সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। প্লাস্টিক ব্যাগের উপরে কাউন্সিলরেরা নজরদারি চালান, পুরসভারও বিশেষ দল রয়েছে। খবর পেলেই তাঁরা হানা দেন। ‘‘প্লাস্টিক বন্ধে লাগাতার অভিযান চলছে,’’ বলেন রথীনবাবু।

নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, ক্যারিব্যাগ যদি দোকান থেকে দেওয়া না হয়, তা হলে ক্রেতারা কাপড়ের ব্যাগ বা কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতেই বাধ্য হবেন। এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘কাপড়ের ব্যাগ থেকে অনেক সময়েই মাছ-মাংসের রক্ত চুঁইয়ে পড়ে। তাই এখন বাজারের নাইলনের ব্যাগের ভিতরে মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে যাই। তাতেই ঢুকিয়ে নিই।’’ কাপড়ের ব্যাগ কেমন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেক দোকানির। বাজারের এক মাংস বিক্রেতা বলছেন, ‘‘ক্যারিব্যাগ দিলে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে। কয়েক বার হানাও দিয়েছেন পুরকর্তারা। তাই কাপ়ড়ের ব্যাগ দিই। ভয় ছিল, ক্রেতারা মানবেন না। কিন্তু সেটা ভুল ছিল।’’

পুরসভা সূত্রে খবর, ক্যারিব্যাগ কমায় অপচনশীল বর্জ্যের পাহাড়ও কমছে। উন্নত হচ্ছে নিকাশি ব্যবস্থাও। আগে অনেক সময়েই প্লাস্টিক ব্যাগ জমে নিকাশি বন্ধ হত। কিন্তু এখন সেই সমস্যা কমছে।

Anti-Plastic bag campaign Nagerbazar Plastic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy