‘আমি প্রভাবশালী নই, আমি অভাবশালী। মানুযের আশীর্বাদের অভাব আছে।’ নবান্নে বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে যখন তৃণমূলের এক একজন মন্ত্রী কাজ শুরু করে দিয়েছেন, সেই সময় হেরে যাওয়ার আক্ষেপ স্পষ্ট মদন মিত্রের গলায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের মন্ত্রিসভার পরিবহণ ও ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্র এখনও এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের একটি ঘরে শুয়ে। সর্বক্ষণ চোখ টেলিভিশন স্ক্রিনে। সকালের দিকে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেন। আর খবরের পাতায় যখনই চোখে পড়ে মমতা তাঁর নতুন সৈনিকদের নিয়ে বাংলা শাসনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছেন, তখন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা কয়েকগুণ বেড়ে যায় তাঁর।
তিনি নাকি এইবারের নির্বাচনে হারতেন না। বরং তাঁর এই পরাজয়ের পিছনে রয়েছে পুলিশি জুলুম, এমনটাই দাবি মদন মিত্রের। বৃহস্পতিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের এই কথা বলতে বলতে হঠাৎই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলেন উপস্থিত চিকিৎসক এবং নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রাথমিক শুশ্রূষার পর জ্ঞান ফিরে আসে প্রাক্তন মন্ত্রীর।
শরীরটাও বিশেয একটা ভাল নেই, তার উপর নির্বাচনে হারটা কাঁটার মতো গলায় বিঁধছে। সেই যন্ত্রণা বুকে নিয়ে মমতার গুনগান করতে ভুললেন না মদন। পরে তিনি আরও বলেন, ‘মমতা পাঁচ ইনিংস পর্যন্ত খেলবেন। সেকেন্ড ইনিংসে থামবেন না। এই টেস্ট ম্যাচ চলতেই থাকবে। আমার পরাজয়ের জন্য ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কয়েকজন অফিসার দায়ী।’
এদিন অফিসারদের নাম নিয়ে রীতিমতো তাঁর হেরে যাওয়ার পোস্টমর্টেম করেন কামারহাটি বিধানসভার পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর অভিযোগ, আইসি বেলঘরিয়া শান্তনু মুখোপাধ্যায় বর্ধমানের একজন সিপিএম ক্যাডার। একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং যুগ্ম কমিশনার তাঁর হেরে যাওয়ার পিছনে দায়ী ছিলেন। তিনি নাকি ইতিমধ্যেই তাঁদের নামে তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন। দূর্বল শরীর তবু প্রাক্তন মন্ত্রী তাঁর অভিযোগের ঝুলি উজাড় করে দিলেন। তাঁর আরও অভিযোগ, সিপিএমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে তাঁদের নির্দেশেই পুলিশ সাধারণ ভোটারদের উপর লাঠিচার্জ করে ভোট কমিয়ে মদনকে হারিয়েছেন।
এইবারের নির্বাচনে হেরে গেলেও পরের বারের ভোটযুদ্ধে নিজেকে খানিকটা এগিয়ে রাখছেন মদন, নিজেকে বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরও বলেন, ‘কোহলিও তো আউট হয়, তা বলে কী সব শেষ হয়ে যায়? খেলা শেষ হয়নি। নিরন্তর চলবে।’
তাঁর হেরে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই প্রভাবশালী নেতা অন্তর্ঘাতের তত্ত্বও টানেন। এই বিষয়টি নিয়েও তিনি মমতার কাছে নালিশ করবেন বলেও এদিন জানান তিনি।
‘আমাকে সতেরো মাস মানুষ দেখেনি, তবু মানুষ আমায় ঊনষাট হাজার ভোট দিয়েছেন, মানুষ আমার পাশেই আছে’-শেষে যোগ করলেন তিনি। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু। তারপর ভোটের আগে নারদা ঘুষ কাণ্ড, শেষমেশ কামারহাটিতে নির্বাচনী পরাজয়-সব মিলিয়ে মদন মিত্রের সময়টা এখন মোটেই ভাল যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:যেন মঞ্চেই আছি, টিভি দেখে বলেন বন্দি মদন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy