E-Paper

ভোগান্তি থামার লক্ষণ নেই, পরিষেবা স্বাভাবিক করতে আবাসিক চিকিৎসকদের কাছে আর্জি হাই কোর্টেরও

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সিনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের পরিষেবা সামলাচ্ছেন। কিন্তু তা-ও কিছু জায়গায় জরুরি পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যসচিব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩৩
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিষেবা না পেয়ে বিভ্রান্ত রোগীর পরিবার। মঙ্গলবার।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিষেবা না পেয়ে বিভ্রান্ত রোগীর পরিবার। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

আর জি কর-কাণ্ডে মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি, পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকদের কাছে আবেদনও রেখেছে। এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, তাঁদের এক সহকর্মীকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আর জি করের চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। যদিও রোগীদের চিকিৎসা করাও তাঁদের দায়িত্ব। চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্তদের আমরা অনুরোধ করছি, সরকারের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালে আসা দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা শুরু করতে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্যেরও কথা বলা উচিত।’’

তবে কর্মবিরতি থেকে এখনই তাঁরা সরছেন না বলে স্পষ্ট জানালেন ওই চিকিৎসক পড়ুয়ারা। রাজ্য জুড়ে এই কর্মবিরতির প্রভাবে এ দিনও রোগী ভোগান্তি অব্যাহত ছিল। আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও, পরিষেবায় বিঘ্ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আর জি করের সামনে বিভিন্ন ব্যানারও ঝোলানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সিনিয়র চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের পরিষেবা সামলাচ্ছেন। কিন্তু তা-ও কিছু জায়গায় জরুরি পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ, রোগী পরিষেবা সচল রাখুন।’’ কিন্তু বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোগান্তির ছবিই দেখা গিয়েছে দিনভর। অভিযোগ, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ফিরে গিয়েছেন অনেকে।

সকালে আর জি করের স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি বিভাগে আসা কাশীপুরের বাসিন্দা কবিতা দাস বলেন, ‘‘বহির্বিভাগ বন্ধ। ডাক্তার নেই। তাই ফিরে যাচ্ছি। সকলের তো বাইরে দেখানোর ক্ষমতা নেই।’’ বসিরহাটের বাসিন্দা, ক্যানসার আক্রান্ত ফাতেমা বিবিও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। তাঁর জামাই সাহেদুল গাজি বলেন, ‘‘অঙ্কোলজি বিভাগে গিয়েছিলাম। ওখানে বলা হল, কোনও ডাক্তার নেই।’’ একই হাল ন্যাশনাল মেডিক্যালেরও। পা ভেঙে সেখানে ভর্তি সাত বছরের ইমতিয়াজ় গাজি। তার মা ইন্নাহার বিবি বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা বলেছিলেন, শনিবার অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু শুক্রবার থেকে গোলমাল শুরু হওয়ায় আর তা হল না। এখন কোনও ডাক্তারও নেই। বলেছে, বাড়ি ফিরে যেতে। এক সপ্তাহ পরে আসতে।’’

বাবার পিঠে চেপে এসএসকেএম হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা পায়নি রায়গঞ্জের নীরব সরকার। মঙ্গলবার।

বাবার পিঠে চেপে এসএসকেএম হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা পায়নি রায়গঞ্জের নীরব সরকার। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সাত বছরের ছেলেকে পিঠে নিয়ে এসএসকেএমের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরছিলেন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের তপন সরকার। জানালেন, তাঁর ছেলের মাথায় কুকুর কামড়েছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পিজিতে এসেছেন। জরুরি বিভাগ, ট্রমা কেয়ার থেকে শুরু করে মেন বিল্ডিংয়ে ঘুরে বেড়ালেও চিকিৎসা মিলছে না। আবার, বাঁকুড়া থেকে চার বছরের মেয়ে আফরা পরভিনকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যালে এসেছিলেন শেখ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘‘বি সি রায় শিশু হাসপাতাল থেকে মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দিল। কিন্তু এখানেও চিকিৎসা হল না। তাই ফিরে যাচ্ছি।’’

এ দিন কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অতীন ঘোষের নেতৃত্বে একাধিক তৃণমূল পুরপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপো থেকে আর জি কর পর্যন্ত মিছিল হয়। অতীনের দাবি, ‘‘আমরা আন্দোলনকে সমর্থন করছি। কিন্তু পরিষেবা বন্ধ করে নয়।’’

এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ নতুন অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল আর জি করে এসে কাজে যোগ দেন। দুপুরে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকেন তিনি। পরে সুহৃতা বলেন, ‘‘আমিও যথাযথ বিচার চাই। প্রকৃত তদন্ত চাই। সারা দেশ সেটাই চাইছে। কিন্তু রোগী পরিষেবার দিকটিও দেখতে হবে।’’ জানা যাচ্ছে, বৈঠকে প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানকে বলা হয়েছে, জরুরি বিভাগ-সহ অন্যান্য পরিষেবা যাতে সচল থাকে, সেই বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে অধ্যক্ষও সেই কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অন্য দিকে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফেও তাদের অধীনে নথিভুক্ত সব চিকিৎসককে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital Patients

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy