Advertisement
E-Paper

মহানগরে একের পর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, নজরদার কমিটির নজর নিয়েই প্রশ্ন

২০১১-র ৯ ডিসেম্বর ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরে সরকারি তরফে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল, বহুতল, শপিং মল এবং বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা 

বিধ্বংসী আগুন বাগড়ি মার্কেটে।ফাইল চিত্র।

বিধ্বংসী আগুন বাগড়ি মার্কেটে।ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৪
Share
Save

নন্দরাম মার্কেট, স্টিফেন কোর্ট, আমরি হাসপাতাল। একের পর এক বিধ্বংসী আগুনের পরে নিয়মমাফিক সরকারি তরফে তৈরি হয়েছিল উচ্চ পর্যায়ের নজরদার কমিটি। কিন্তু ওই কমিটিগুলির ভূমিকা আদতে কী, বড়বাজারের বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেল। পাশাপাশি এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, খাতায়-কলমে কমিটি তৈরি হলেও শহরের অধিকাংশ বহুতল এবং বাজারে নজরদারির কার্যত কোনও বালাই নেই।

২০১১-র ৯ ডিসেম্বর ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরে সরকারি তরফে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল, বহুতল, শপিং মল এবং বাজারের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তৈরি হয়েছিল ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি। পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার ১৫টি বরো এলাকার প্রতিটিতে গঠন করা হয় একটি করে ‘গ্রাউন্ড লেভেল টিম’। সেই দলে ছিলেন দমকল, পুরসভা, সিইএসসি এবং কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিরা। বলা হয়েছিল, শহরের বাজার, বহুতল এবং হাসপাতালে অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার কাজে ওই দলকে সাহায্য করবে ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি।

২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১৯ জন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সরকারি তরফে নজরদার কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন

পুলিশকর্তা বাণীব্রত বসু। কলকাতা পুরসভার তরফে সে সময়ে বলা হয়েছিল, তাদের পরিচালিত বাজারগুলিতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কী আছে এবং সেগুলি ঠিক মতো কাজ করে কি না, তা খতিয়ে দেখে পুর কমিশনারকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: কোলে ঘুমন্ত শিশু, রক্ষা কোনও রকমে

কিন্তু অভিযোগ, রিপোর্ট দেওয়া তো দূর অস্ত্‌। বড় কোনও অগ্নিকাণ্ডের পরে এই সব কমিটি নাম-কা-ওয়াস্তে সুপারিশ করেই দায় ঝেড়ে ফেলেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে শহরের বেশ কিছু বহুতল এবং বাজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল কয়েক জনকে। কিন্তু তার পর থেকে তেমন ভাবে কোনও কাজই হয়নি বলে অভিযোগ।

দমকলের এক প্রাক্তন কর্তার অভিযোগ, ‘‘ফায়ার সেফটি অডিট কমিটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল, সব কিছু খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেওয়া। তদানীন্তন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের আমলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পর্যাপ্ত অগ্নি-নিরোধক ব্যবস্থা না থাকলে কাউকে ছাড়পত্র দেওয়াই হবে না। কিন্তু অগ্নি-বিধি মানা হচ্ছে কি না, ওই কমিটি সে ভাবে কখনওই পরীক্ষা করে দেখেনি। কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষও রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শর্ত সাপেক্ষে লাইসেন্স দিতে শুরু করেন।’’ ওই কর্তা বলছেন, ‘‘শর্ত সাপেক্ষে লাইসেন্স দেওয়া মানেই অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক মতো পরীক্ষা না করে ছাড়পত্র দেওয়া।’’

দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অগ্নি-বিধি মানার দায় ব্যবসায়ীদের উপরেই চাপিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে নজরদারির জন্য একাধিক কমিটি তৈরি হলেও সেগুলির ভূমিকা ঠিক কী, এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর দাবি, ‘‘স্টিফেন কোর্টের ঘটনার পরে বিভিন্ন বহুতল এবং বাজারের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কমিটি তৈরি হয়েছিল। তারা একাধিক সুপারিশ করেছিল। ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেগুলি মানতে হবে। কিন্তু তাঁদের একাংশই ওই সব সুপারিশ ক্রমাগত পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। তা না হলে এত বড় বিপর্যয় হত না।’’

Fire Bagri Market Kolkata Fire Canning Street Committee বাগড়ি মার্কেট

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}