Advertisement
E-Paper

ব্যবসা ঘিরে গণ্ডগোলে পাড়ায় তাণ্ডব, জখম ২

কোনও বাড়ির জানলার কাচ টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। কোনও বাড়িতে আবার সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নামছে তাজা রক্তের স্রোত। এলাকার মোড়ে পুলিশের ভ্যান। বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। সোনারপুর থানার নবপল্লির উত্তরপাড়ায় এটাই ছিল সোমবার ভোরের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৪
সনাতন সর্দারের (ইনসেটে) বাড়িতে ভাঙচুর হওয়া জানলা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

সনাতন সর্দারের (ইনসেটে) বাড়িতে ভাঙচুর হওয়া জানলা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

কোনও বাড়ির জানলার কাচ টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। কোনও বাড়িতে আবার সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নামছে তাজা রক্তের স্রোত। এলাকার মোড়ে পুলিশের ভ্যান। বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। সোনারপুর থানার নবপল্লির উত্তরপাড়ায় এটাই ছিল সোমবার ভোরের ছবি।

মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বিছানায় শুয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা সনাতন সর্দার। রিভলভারের বাট দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। রবিবার গভীর রাতে চেঁচামেচি শুনে বেরিয়েছিল কলেজপড়ুয়া রাজেশ মণ্ডল। দুষ্কৃতীদের গুলি তাঁর পায়ে লাগে। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রাজেশের ডান পায়ের হাঁটুর নীচে কয়েকটি হাড় টুকরো হয়ে গিয়েছে। সামান্য জখম হয়েছেন আরও এক-দু’জন। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ রাউন্ড খালি কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক মহিলা-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, পাড়ায় ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেটের ব্যবসা নিয়ে গোলমালেই এই ঘটনা। তবে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে পাড়ায় এই তাণ্ডব চলার সময়ে টহলদার পুলিশ কোথায় ছিল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুলিশ জানায়, ওই রাতে আড়াইটে নাগাদ এলাকার ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেটের তিন সদস্য সঞ্জয় দত্ত, রাজু দে ও তপন মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্ত অতুল মাইতি নামে ওরফে রবি নামে এক দাগি দুষ্কৃতী ও তার দলবল। সঞ্জয়বাবুর বাড়ির পাশেই রবির বাড়ি। আক্রান্ত তিন ব্যবসায়ী জানান, জামিনে ছাড়া পেয়ে রবি তাদের সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দিতে চেয়েছিল। তাতে তাঁরা রাজি হননি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক ধরেই ওই তিন ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল রবির। তা চরম আকার নেয় রবিবার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তার জেরেই রাত পৌনে দুটো থেকে তিনটে পর্যন্ত হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এলাকায় গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বেপাত্তা হয়ে যায় দুষ্কৃতীর দল।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাতে এলাকায় ঢুকে প্রথমে ওই তিন জনের সিন্ডিকেটের অফিসটি ভেঙে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তার পরে সঞ্জয়ের বাড়ির দরজায় শাবল দিয়ে মারতে থাকে। ভেঙে দেওয়া হয় জানলার কাচ। সঙ্গে চলে গালিগালাজ। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাই। না হলে ওরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলত।’’ তার পরে রাজু ও তপনবাবুর বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা তপন দে জানান, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক এলাকায় তাণ্ডব চলে। হাতে শাবল-পিস্তল নিয়ে প্রতিটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শাসানি দেয় দুষ্কৃতীরা। চিৎকার শুনে সঞ্জয়বাবুর প্রতিবেশী সনাতনবাবু বাইরে আসতেই তাঁর মাথায় রিভলভারের বাট দিয়ে মারে এক দুষ্কৃতী। সোমবার সনাতনবাবু বলেন, ‘‘আমাকে কেন মারল, বুঝলামই না।’’ তাঁর মতোই দরজা খুলেছিলেন রাজেশও। দুষ্কৃতীরা গুলি ছুড়লে তাঁর পায়ে বিঁধে যায়। সেই অবস্থাতেই দরজা বন্ধ করেন রাজেশ। ইতিমধ্যে সোনারপুর থানায় ফোন করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টহলদারি ভ্যান ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেখে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মোটরবাইকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। রাজেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। সনাতনবাবুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন পড়শিরাই। তাঁ মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়ে।

পুলিশের দাবি, প্রায় এক বছর আগে প্রোমোটারি ব্যবসার অংশীদারকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল রবি। কয়েক মাস জেলে থাকার পরে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে নবপল্লির বাড়িতে ফেরে সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের আগে সঞ্জয়, রাজু ও তপনের ইমারতি ব্যবসায় জড়িত ছিল রবি। সেই ব্যবসায় রবির কাছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি সঞ্জয়ের। জেল থেকে ফিরে ওই পাওনা টাকা নিয়ে মাঝে মধ্যে তিন জনের সঙ্গেই রবির ঝামেলা হতো বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। শনিবারও তাই নিয়েই রবির সঙ্গে সঞ্জয়ের বচসা হয়।

তদন্তকারীদের কথায়, পাওনা আদায়ের ঝামেলার জেরে রবিবার এলাকায় রবির স্ত্রী টুলুর বিউটি পার্লারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়। এক তদন্তকারীর কথায়, রাতের হামলার সূত্রপাত তার থেকেই। সকালে রবি এলাকায় ছিল না। ফোনে খবর পেয়ে স্থানীয় দুষ্কৃতী সুজন, নিতাই, বিদেশ ও পরি-সহ আরও কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে রাতে সঞ্জয়ের বাড়িতে হামলা চালানোর ছক কষে সে। আটক করে জেরার পরে হামলার অন্যতম চক্রী হিসেবে টুলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সুজন নামে আর এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। রবি-সহ মূল অভিযুক্তেরা সোমবার রাত পর্যন্ত ফেরার বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, থানায় ফোন করার পরেও পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয়নি। একাধিক বার ফোন করার পরে ভ্যান এসেছে। পুলিশের সামনেই গুলি চলেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশকর্তারা অবশ্য জানান, থানায় ফোন আসার পরেই কাছাকাছি থাকা টহলদারি ভ্যানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘সকাল থেকেই এলাকায় তল্লাশি চলছে। মূল অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

syndicate clash violent sonarpur syndicate clash sonarpur nabapalli uttarpara sonarpur nabapalli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy