Advertisement
E-Paper

ওঁদের রান্নাঘরের তাকে থাকে কিকপ্যাড

সেই বিশ্বাসে ভর করেই এ বছর থেকে প্রতিযোগিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানসী। গুরুকে ‘টেক অন’ করে যুদ্ধক্ষেত্রে নামার প্রহর গোনা শুরু। হার-জিৎ সরিয়ে তাই কুর্নিশ ওঁদের।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৫
মহড়া: প্রশিক্ষণে ব্যস্ত গৃহবধূরা। কন্যানগরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

মহড়া: প্রশিক্ষণে ব্যস্ত গৃহবধূরা। কন্যানগরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

ঘুপচি এক কামরা। তার মধ্যেই গোটা সংসার। সকাল সকাল অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়া স্বামীর খাবার তৈরি, ছেলেকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করা, সবই চলে দ্রুত গতিতে। মানসী তখন আর পাঁচটা গৃহবধূর মতো কোমরে ওড়না গুঁজে ছুটছেন। তবে দুপুরের অবসরটা ওঁর কাছে গলানো সোনা। সংসারের কারিগর তখন রান্নাঘরের তাক থেকে তাইকোন্ডোর কিকপ্যাড নামিয়ে নেমে পড়েন বাড়ির পাশের মামুদপুর ক্লাবে।

বিবাহসূত্রে উস্তি থানার ইয়ারপুরের বাসিন্দা। স্বামীর কাজের সূত্রে এখন আমতলা গভর্নমেন্ট হাউজিং-এ থাকা সমাপ্তি বাঁধা-ধরা জীবনে থেমে থাকেননি। শাশুড়ি আর স্বামীর থেকে সমানে উৎসাহ পাওয়া সমাপ্তি প্রামাণিকের গলায় শুধুই তাঁদের প্রশস্তি। তাইকোন্ডোর মাঠে তাঁর এই লড়াই সমাজের খারাপ লোকেদের বিরুদ্ধে। তাঁর তেরো বছরের মেয়েও শিখছে ক্যারাটে। স্কুল থেকেই তা শেখানো হচ্ছে।

মানসী, সমাপ্তির মতোই সেই লড়াইয়ে সামিল রিনা মাজি, সোনালি মাজি, মিতা পাঁজা বা পিঙ্কি বান্নোদের মতো দক্ষিণ শহরতলির আমতলা, কন্যানগর, মামুদপুরের মেয়ে-বউয়েরা। কারও ক্ষেত্রে আবার সঙ্গী হয়েছে তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়েও। বছর দুয়েক ধরে এই তিন জায়গায় চলছে বিনামূল্যে তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ। ছ’মাসের প্রশিক্ষণ পর্ব, এই মুহূর্তে ৮৫ জন শিক্ষার্থী। তবে খরচ নেই এক পয়সাও। উপরন্তু ক্লাসে এলে দিনে কুড়ি টাকা করে দেওয়া হয়। যাতে, ‘ঘরে টাকা নেই, তাই আসতে পারিনি,’ এমন অজুহাত কেউ না দেন— বলছিলেন শিক্ষার্থীরা। এমনকী পোশাক, সরঞ্জাম সবই দেওয়া হয় বিনা পয়সায়। তবে সবার ঘর থেকে যে উৎসাহ মেলে এমনটা নয়। তাই অবিবাহিত হয়েও বাবা-মায়ের বাধায় জাতীয় স্তরে খেলতে পারছেন না কেউ কেউ। কেউ আবার বাড়ির ভয়ে শুরুটা লুকিয়ে করেছিলেন। জানাজানি হতে কিছু চাপও হয়, তবু ছ’মাস সামাল দিয়ে সপ্তাহে দু’দিন ওঁরা হাজিরা দেন তাইকোন্ডোর ক্লাসে। ওঁদের কথায়, ‘‘সাহস বাড়ে। নিজেরও যে গুরুত্ব আছে, সেটা জেনেছি বলেই
ছুটে যাই।’’

তবে “ছ’মাসের প্রশিক্ষণের পরেও প্রয়োজন অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া। নয়তো নিখুঁত ভাবে আয়ত্তে থাকে না কোরিয়ান মার্শাল আর্টস তাইকোন্ডোর পদ্ধতিগুলো। অথচ জায়গার অভাব বড় বাধা। যদিও জায়গা আছে বলে বিদ্যানগরের মাঠে ডাকা হচ্ছে ওঁদের।” বলছিলেন প্রশিক্ষক পুনম দাস। চার জনের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে পুনমের তাইকোন্ডোয় হাতেখড়ি পাঁচ বছর
বয়সে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইটা তিনি জানেন। তাইকোন্ডো শুধু আত্মরক্ষা করতে শেখায় না। এর শারীরিক কসরত যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে বলে মানছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায় বলেই রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সম্প্রতি পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে এই প্রশিক্ষণ, তার সেক্রেটারি নিলু কেজরিবাল বলেন, “দক্ষিণ শহরতলির এই এলাকাগুলো বেছে নেওয়ার কারণ, সাধারণ গৃহবধূদের কোথাও সমস্যার কথা বলার জায়গা প্রায় নেই। ঘরে-বাইরে অবহেলিত বউ-মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলা জরুরি। তাই এই সিদ্ধান্ত।”

সেই বিশ্বাসে ভর করেই এ বছর থেকে প্রতিযোগিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানসী। গুরুকে ‘টেক অন’ করে যুদ্ধক্ষেত্রে নামার প্রহর গোনা শুরু। হার-জিৎ সরিয়ে তাই কুর্নিশ ওঁদের।

Taekwondo তাইকোন্ডো Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy