E-Paper

ট্যাংরার যুবকের দেহ না মিললেও খুনের অভিযোগ কবুল ধৃতদের

পুলিশ তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারে, গত ৩ মার্চ ঝুন্নুকে নিয়ে রব্বানি তার নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। কিন্তু ঝুন্নুকে আর ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে দেখা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪০
Search operation by Disaster Response Force.

সন্ধান: ট্যাংরার নিখোঁজ যুবক ঝুন্নু রানার খোঁজে চৌবাগা খালে তল্লাশি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী  

তিলজলার একটি খালে বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ মেলেনি ট্যাংরার বাসিন্দা ঝুন্নু রানার।

তবে পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিত যে, ঝুন্নুকে খুনই করা হয়েছে। এই ঘটনায় গোলাম রব্বানি (২৫), তার স্ত্রী আয়েশা নুর (২৩) এবং রব্বানির মামা শেখ রিয়াজকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণ লোপাট এবং ষড়যন্ত্রের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রব্বানির ভাই ইমরানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ঝুন্নুর নিখোঁজের ঘটনায় মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হল।

পুলিশ তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারে, গত ৩ মার্চ ঝুন্নুকে নিয়ে রব্বানি তার নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। কিন্তু ঝুন্নুকে আর ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে দেখা যায়নি। তবে, সস্ত্রীক রব্বানিকে ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে। এর পরেই তদন্তকারীরা খোঁজ করে জানতে পারেন, ঘটনার পর থেকে রব্বানি এবং তার স্ত্রী উধাও। গোপন সূত্রে দম্পতির খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল বেঙ্গালুরু যায়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত দম্পতি দিল্লিতে রয়েছে। অবশেষে দিল্লি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সেই সময়ে ওই দম্পতি তাদের মোবাইলের সিম ঘন ঘন বদলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বলেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

আয়েশা জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, ঝুন্নুর দেহ খালে ফেলার পরে তারা সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে খড়্গপুর এবং সেখান থেকে ভুবনেশ্বরে যায়। ফের সেখান থেকে ট্রেনে বেঙ্গালুরু যায়। সেখানে কিছু দিন থেকে বাসে হায়দরাবাদ এবং পরে ট্রেনে দিল্লি যায় তারা।

তদন্তকারীদের কাছে রব্বানি স্বীকার করেছে, তার ফ্ল্যাটেই ঝুন্নুকে খুন করা হয়েছিল। এবং খুনের কারণ ব্যক্তিগত। ৪ মার্চ ভোরের দিকে একটি সাইকেল ভ্যানে ঝুন্নুর দেহ নিয়ে গিয়ে অম্বেডকর সেতুর নীচে খালে ফেলে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, একটি ড্রামে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় দেহটি। এই কাজে সহযোগিতা করে রিয়াজ। এ সবের তথ্যপ্রমাণ হিসাবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। রব্বানির ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ মুছে খুনের প্রমাণ লোপাট করতে দেওয়ালে রং করা হয়। রব্বানির ভাই ইমরান সেই রঙের কাজ করে।

খালে ডুবুরি নামিয়ে ঝুন্নুর দেহ খোঁজার কাজে যোগ দেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। স্থানীয়েরাও তাতে সহযোগিতা করেন। স্পিড বোট নামিয়েও তল্লাশি চলছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নজরদারি এবং তদারকিতে তল্লাশি চলে। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী, ডিসি (ইএসডি) গৌরব লাল।

ঝুন্নুর পরিবারের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার দিন অভিযুক্ত গোলাম রব্বানিকে যে মোটরবাইক চালাতে দেখা গিয়েছিল, সেটি আদতে ঝুন্নুরই। যদিও এখনও সেই বাইকটির সন্ধান মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং ঝুন্নুর পরিবারের একাংশের মতে, পুলিশ গোড়া থেকে এই ঘটনায় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করলে দ্রুত রহস্যের কিনারা হত, দেহও মিলতে পারত। ঝুন্নুর আত্মীয় মনোজিৎ রানার দাবি, ‘‘খুনের কারণ ব্যক্তিগত শত্রুতা কিংবা সম্পর্কের টানাপড়েন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই তথ্য মানা যাচ্ছে না। কারণ, রব্বানির সঙ্গে ঝুন্নুর বন্ধুত্ব বেশি দিনের ছিল না। তদন্ত করে খুনের প্রকৃত কারণ বার করা হোক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tangra Murder Case arrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy