Advertisement
E-Paper

শিক্ষক-পড়ুয়া যোগাযোগের সেতু মজবুত হোক, উঠল দাবি

প্রধান শিক্ষিকা এর পরে ওই ছাত্রীদের ক্লাসে না রেখে ১৫ অগস্টের জন্য স্কুলের মাঠে প্যারেড করানোর নির্দেশ দেন। এর জন্য তাঁকে শুনতে হয়, ‘ছাত্রীদের উপরে মানসিক চাপ তৈরি করেছেন তিনি!’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০২:৫০
কথা: আলোচনাসভায় দমদম মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা এবং ছাত্রীরা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কথা: আলোচনাসভায় দমদম মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা এবং ছাত্রীরা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

স্কুলে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস চলছে। রোল নম্বর ধরে নাম ডাকার সময়ে শিক্ষিকা জানতে পারেন, চার ছাত্রী ক্লাসে নেই। আরও জানা যায়, আগের দু’টি ক্লাসেও তারা ছিল না। খবর যায় প্রধান শিক্ষিকার কাছে। ওই চার ছাত্রীকে ডেকে সমস্যা জানতে চাওয়ায় তারা জানায়, শৌচাগারে গিয়েছিল। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘শৌচাগারে সকলে একসঙ্গে?’’ মেয়েরা তখন বলে, ‘‘ক্লাস করতে ভাল লাগছিল না। তাই উপরে ফাঁকা ঘরে গিয়ে বসেছিলাম।’’

প্রধান শিক্ষিকা এর পরে ওই ছাত্রীদের ক্লাসে না রেখে ১৫ অগস্টের জন্য স্কুলের মাঠে প্যারেড করানোর নির্দেশ দেন। এর জন্য তাঁকে শুনতে হয়, ‘ছাত্রীদের উপরে মানসিক চাপ তৈরি করেছেন তিনি!’

‘স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যু, স্কুলের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?’ সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক আলোচনায় এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল দমদম মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা, পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের সামনে। নিজের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধান শিক্ষিকা সুলগ্না চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েদের প্যারেড করাতে বলে আমি কি ভুল করেছিলাম? ক্লাস করতে ভাল না লাগলে, অন্য কাজে ব্যস্ত রেখে মেয়েদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা কি খারাপ?’’ ঘরভর্তি সকলেই সমস্বরে জানান, প্রধান শিক্ষিকা ভুল করেননি।

সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের শৌচাগার থেকে মুখে প্লাস্টিক বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃতদেহ। সে কথা মনে করিয়ে মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শুভেচ্ছা মিত্র বলে, ‘‘ওই মেয়েটি হয়তো স্কুলে কাউকে নিজের বলে ভাবতে পারেনি। তাই কাউকেই কিছু বলেনি। আমাদের দিদিমণিরাও মাঝেমধ্যে এত গম্ভীর থাকেন যে, কিছু বলতে ভয় করে।’’ ছাত্রীর কথার প্রেক্ষিতে বাংলার শিক্ষিকা গার্গী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এরা আমাদের মেয়ের মতো। আমরা মায়ের মতো ওদের সঙ্গে মিশি। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

আলোচনা যত এগোয়, ততই স্কুলে এক জন মনোবিদ নিয়োগের দাবি ওঠে অভিভাবকদের তরফে। ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক বিকাশ ঘটানোর মতো ক্লাস আরও বেশি করে করানো যায় কি না, সেই প্রস্তাব দেওয়া হয় শিক্ষিকাদের। হৈমন্তী বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুল একটা বাচ্চার দ্বিতীয় বাড়ি। কোনও রকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখলেই ডেকে কথা বলা দরকার। মনোবিদ থাকলে খুব ভাল হয়। নিয়ম করে ছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষিকাদের দেখাও করা দরকার।’’ রত্নমালা হালদার নামে এক ছাত্রী আবার দাবি করে, ‘‘আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, বাবা-মায়ের কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে। সে জন্য বাবা-মায়েরও কাউন্সেলিং দরকার।’’ আলোচনায় কয়েক জন পড়ুয়াকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাবও আসে। বলা হয়, পরে ওরাই বাকি পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করুক।

এই দাবি-প্রতিদাবিতেই আলোচনা জমে উঠেছিল স্কুলের হলঘরে। বংশী ঘোষ নামে এক অভিভাবক শেষে বললেন, ‘‘বাচ্চাদের শৈশব ফিরিয়ে দাও। সকলকে বলব, বাচ্চাদের পথ দেখাও, কিন্তু টেনে নিয়ে যেও না।’’

Teacher Student Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy