Advertisement
E-Paper

স্বচ্ছতা চাই, পুর দরপত্র বদলে গেল ‘মেনু কার্ডে’!

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর পিছনে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি নির্দেশই অনুঘটকের কাজ করেছে। মেয়র চেয়েছিলেন, প্রতিটি কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দরপত্রে উল্লেখ করতে। পুরসভার ডাকা সমস্ত দরপত্রে যাতে স্বচ্ছতা থাকে, সে কারণেই এমন নিদান ছিল ফিরহাদের। কিন্তু তখন বোঝা যায়নি, সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে দরপত্রকে মেনু-কার্ডে বদলে দেবেন পুরকর্তারা!

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৭
পুরসভার দরপত্রে খাবারের সেই তালিকা। নিজস্ব চিত্র

পুরসভার দরপত্রে খাবারের সেই তালিকা। নিজস্ব চিত্র

মিক্সড ফ্রায়েড রাইস, মিক্সড চাউমিন থেকে শুরু করে প্যান ফ্রায়েড ফিশ, চিলি চিকেন—বাদ নেই কিছুই। এক নজরে দেখলে যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়ির মেনু কার্ড বলে ভ্রম হতে বাধ্য। কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, মেনু-কার্ড নয়, এটি আসলে কলকাতা পুরসভার দরপত্র!

কিন্তু কী এমন ঘটল, যা রসকষহীন দরপত্রকে রীতিমতো লোভনীয় মেনু-কার্ডে বদলে দিল!

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর পিছনে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি নির্দেশই অনুঘটকের কাজ করেছে। মেয়র চেয়েছিলেন, প্রতিটি কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দরপত্রে উল্লেখ করতে। পুরসভার ডাকা সমস্ত দরপত্রে যাতে স্বচ্ছতা থাকে, সে কারণেই এমন নিদান ছিল ফিরহাদের। কিন্তু তখন বোঝা যায়নি, সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে দরপত্রকে মেনু-কার্ডে বদলে দেবেন পুরকর্তারা!

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, মেয়রের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছেন পুরকর্তাদের একাংশ। আগামী ১১ মার্চ পুরসভার মাসিক অধিবেশন। প্রতিবারই ওই অধিবেশনে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন পুর কর্তৃপক্ষ। কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ, পুরকর্তা থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি—বাদ যান না কেউ। সেই আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের প্যাকেট সরবরাহের কারণে গত শুক্রবার দরপত্র ডাকা হয়েছে। আর সেখানেই এই ভোলবদল! ফয়েলে করে মিক্সড ফ্রায়েড রাইস, মিক্সড চাউমিনের কথা যেমন তাতে বলা হয়েছে, তেমনই বলা হয়েছে কন্টেনারে তিন পিস প্যান ফ্রায়েড ফিশ এবং চার পিস চিলি চিকেনের কথাও। আলাদা বাক্স করে একটি বড় মিষ্টির কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ উল্লেখের ক্ষেত্রে বাদ যায়নি কিছুই! আরও বিশদে জানতে পুর সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘প্রথমে দেখে তো চমকে উঠেছি। এটা দরপত্র না অনুষ্ঠানের মেনু কার্ড! দরপত্রে স্বচ্ছতা ঠিক আছে। কিন্তু তা বলে মেনু কী হবে, তা বলাটা বোধহয় বাড়াবাড়ি!’’ পুর প্রশাসনের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বিষয়টা কিছুটা ‘হাস্যকর’ হয়ে গিয়েছে। শুধু খাবারের প্যাকেট সরবরাহের কথা লিখে পুর সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেই হত। আলাদা কিছুর প্রয়োজন ছিল না!

পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, এক দিক থেকে বিষয়টি ভালই। কোথাও কোনও ধোঁয়াশা বা লুকোচুরির ব্যাপার নেই। এমনিতে মাসিক অধিবেশনে খাবারের প্যাকেট সরবরাহের কাজ দরপত্র ডেকে কখনও করা হয়নি বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ফলে সেখানে যেমন স্বচ্ছতা এসেছে, তেমনই কী কী মেনু থাকছে, তার বাজারদর কী, তা-ও স্পষ্ট সকলে জানতে পারছেন। পুর সচিবালয়ের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘এই প্রথম দরপত্র ডেকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। আগে যাঁরা খাবার সরবরাহ করতেন, তাঁদের তরফে কোনও দরপত্রের ব্যবস্থা ছিল না। আর মেনু না উল্লেখ করলে দাম ফেলা যাবে কী করে! ফলে বিষয়টা তো ভালই।’’

সেই ‘ভাল’-র কারণে শেষ পর্যন্ত দরপত্রেই রসনাতৃপ্তির হদিস দিল পুরসভা!

Kolkata municipality Tender Monthly session কলকাতা পুরসভা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy