Advertisement
০২ মে ২০২৪

কেকের গন্ধে শহরে আগমনি সুর বড়দিনের

দুগ্‌গা পুজোর অনেকটা জুড়ে যেমন প্রতিমা, তেমনই বড়দিন ও কেক প্রায় সমার্থক। প্রকাণ্ড ক্রিসমাস কেক বা পুডিংয়ের নানা কিসিমের ফল, বাদাম, মোরব্বা ডাঁই করার প্রস্তুতি থেকেই আদতে শুরু হয় নবজাতককে বরণের উৎসব।

শহরের একটি হোটেলে কেক মিক্সিং উৎসবে মেতেছে খুদেরা। ছবি: শৌভিক দে

শহরের একটি হোটেলে কেক মিক্সিং উৎসবে মেতেছে খুদেরা। ছবি: শৌভিক দে

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share: Save:

যিশুর জন্মদিনের পার্বণে ঢাকে কাঠি পড়া বোধহ য় একেই বলে।

পুজোর দু’-তিন মাস আগেই উল্টোরথে প্রতিমার কাঠামো পুজো চালু আছে কুমোরটুলি বা কলকাতার কিছু বড় বাড়িতে। এর পরেই শুরু হবে তিলে তিলে প্রতিমা গড়া। ঠিক তেমনই বড়দিনের ঢের আগে কেক মিক্সিংকে আসন্ন উদ্‌যাপনের মুখড়া বলে ধরা যেতে পারে।

দুগ্‌গা পুজোর অনেকটা জুড়ে যেমন প্রতিমা, তেমনই বড়দিন ও কেক প্রায় সমার্থক। প্রকাণ্ড ক্রিসমাস কেক বা পুডিংয়ের নানা কিসিমের ফল, বাদাম, মোরব্বা ডাঁই করার প্রস্তুতি থেকেই আদতে শুরু হয় নবজাতককে বরণের উৎসব। রাম, ব্র্যান্ডি, নানা কিসিমের ওয়াইন, সিরাপে মাস দু’য়েক ধরে মজানো হয় ক্রিসমাস কেক বা পুডিংয়ের এ সব উপকরণ। কেকের স্বাদ তাতে আরও খোলতাই হয়।

কয়েকশো বছর আগের ইউরোপ থেকেই কেক তৈরির এই প্রথম পদক্ষেপ সামাজিক পার্বণ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে কলকাতাও মেতেছে কেক মিক্সিংয়ের উৎসবে। আগে গুটিকয়েক পশ্চিমী ধারায় অভ্যস্ত পরিবারে যা দেখা যেত, এখন শহরের হোটেলে হোটেলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের উঁচুতলার সামাজিক ভুবনের চেনা মুখেদের ডেকে এনে কেক মিক্সিং এখন বচ্ছরকার ঘটনা। গত দু’-তিন সপ্তাহ ধরেই শহরের হোটেলে হোটেলে মুঠো মুঠো ফল-বাদাম ছড়িয়ে, রকমারি সুরায় মাখিয়ে চলছে ক্রিসমাসের রসস্থ পুডিং বা কেকের প্রস্তুতি।

নিউ টাউনের একটি পাঁচতারায় যেমন কেক মিক্সিংয়ের আসরে সামিল হয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলতে আসা স্পেন ও ইংল্যান্ডের তরুণেরা। বিমানবন্দরের কাছের একটি হোটেলে কেক মিক্সিং আসরের তারকা আবার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমের খুদে-বাহিনী। সামির, ইয়াসিন, সাজিদা, দীপ, প্রিয়ারা আগে বড়দিনের কেক চেখেছে বটে, কিন্তু একসঙ্গে কেক মাখামাখির উৎসবটা তাদের জানা ছিল না। ওই হোটেলের শেফ সুমন চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘ওরা ছোট বলে কেক মিক্সিংয়ের আসরে অ্যালকোহল কিছু রাখা হয়নি। রকমারি মোরব্বা, বাদাম, কিসমিস, খোবানি, প্রুন, চেরি, র‌্যাসবেরি মুঠো মুঠো ছুড়তে পেরেই বাচ্চারা খুব মজা পেয়েছে।’’

কলকাতার পরিচিত শেফ প্রদীপ রোজারিওর মনে আছে, ছোটবেলায় রানাঘাটের খ্রিস্টান কলোনিতে ঠাকুরদা মার্টিন রোজারিওর নেতৃত্বে জমে উঠত পাড়াগাঁয়ের কেক মিক্সিং উৎসব। ‘‘তখন রাম কী জিনিস আমরা বুঝতাম না, ঠাকুরদা রাম ঢেলে তাতে কিসমিস, বাদাম, মোরব্বা, ড্রাই রেড চেরি ছুড়তে বলতেন। কখনও মাখামাখিতে হাত দিলে ঠাকুরদা সবার হাত ধুইয়ে দিতেন,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন প্রদীপ। তখন থেকেই শুরু বড়দিনের কাউন্ট ডাউন। গ্রামবাংলার বাঙালি খ্রিস্টান, দেড় মাস ধরে মজানো ফল-বাদামে মাখন-ডিম-ময়দা ঠেসে বড়দিনের আগের রাতে মাটির হাঁড়িতে মুখ বন্ধ করে রেখে দিত। রাতের রান্না শেষে উনুনের নিভু আঁচে কেকের হাঁড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হত। সকালেই কেক তৈরি।

আসলে কিছু কিছু রান্না বা খাবার খাওয়া— একলাটি করলে মজা নেই। বিলেতের কেক মিক্সিংয়ের সঙ্গে অনেকে যেমন পাড়ার মেয়েরা মিলে পুজোর ভোগের খিচুড়ি রান্নার মিল খুঁজে পান। একদা গ্রামবাংলার শীতের পিঠে ভাজার সময়েও বিরাট পরিবার, খুদেরা গোল হয়ে উনুন ঘিরে ধরত। পিঠে ভাজতে বা চিনির সিরা ঢালতে মুখিয়ে থাকত সকলেই। উৎসব বাড়ির আনন্দনাড়ু কোটার মধ্যেও মেয়েদের একসঙ্গে সামিল হওয়ার রীতি। বিলেতর কেক মিক্সিংয়ের পার্বণেও আটপৌরে চেনা উৎসবের ছোঁয়াচ পাচ্ছে আজকের বাঙালি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas cake mixing festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE