Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Road Accident

ভুলে থাকতে দূরে, তবু দুর্ঘটনার খবরে টাটকা স্ত্রীর মৃত্যুর স্মৃতি

সেই সময়ে কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা থাকলেও দুর্ঘটনার পরেই নদিয়ায় চলে যান তরুণ। আপাতত ছেলেকে নিয়ে শান্তিপুরই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। সেখানেই শাড়ি, কাপড়ের ব্যবসা সামলান।

মমতা বসাক।

মমতা বসাক। ফাইল ছবি।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৬
Share: Save:

বছর দুই আগে একটি ফোনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল তরুণ মজুমদারের! ডিউটিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল স্ত্রী-র মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে না পেরে সোজা ফোন করেছিলেন থানায়। সে দিনের পরে বছর দুই পেরোলেও স্বজন হারানোর স্মৃতি এখনও স্পষ্ট গোটা পরিবারে। মায়ের কথা বলে এখনও মাঝেমধ্যেই বায়না শুরু করে বছর নয়েকের ছেলে। শনিবার সকালে একই রকম ভাবে একটি দুর্ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যুর সংবাদ যেন পুরনো সেই ক্ষতই তাজা করে দিল তাঁদের মনে।

এ দিন সকালে পর্ণশ্রীতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সীমা দাস নামে এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের। বৌবাজার থানায় কর্মরত ওইমহিলা পুলিশকর্মী স্বামীর সঙ্গে ডিউটিতে আসার পথে বীরেন রায় রোডে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। প্রথমে স্কুটার থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়েন তিনি। তখনই পিছন থেকে একটি লরি এসে পিষে দেয় তাঁকে। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

এই মৃত্যু মনে করাচ্ছে বছর দুই আগে মার্চ মাসের এক দুর্ঘটনাকে। বেলঘরিয়ার পুলিশ কোয়ার্টার্সথেকে সহকর্মীর সঙ্গে স্কুটারের পিছনে বসে থানার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন কড়েয়া থানায় কর্মরত কনস্টেবল মমতা বসাক। বিধান সরণিতে আচমকা স্কুটার থেকে পড়ে যান বছর তিরিশের মমতা। সেই সময়েই পিছন থেকে আসা দ্রুত গতির একটিলরি তাঁর মাথায় উপর দিয়ে চলেযায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। এ দিন সকালে পর্ণশ্রীর দুর্ঘটনা সেই স্মৃতিকেইযেন ফের এক বার ফিরিয়ে এনেছে মমতার গোটা পরিবারে! এ দিন ফোনে মমতার স্বামী তরুণ মজুমদার বলেন, ‘‘যাঁদের পরিবারের কেউ এমন করে চলে যান, তাঁরাই বোঝেন! বার বার এটাই প্রার্থনা করেছি যে, কারও সঙ্গে যেন এমন কিছু না ঘটে। তার পরেও যে কেন এমন হয়?’’

এখন তাঁরা থাকেন নদিয়ার শান্তিপুরে। সেখানে বাড়িতে বসে ফোনে কথাগুলো বলছিলেন তরুণ। তিনি জানালেন, দুর্ঘটনায় মমতার যখন মৃত্যু হয়, তখন ছেলে তমোজিতের বয়স ছিল সাত বছর। মমতার দেহ যখন বাড়িতে আনাহয়, তখন সে মাকে চিনতেই পারেনি। ‘এ আমার মা নয়’ বলে দাদুরকোলে উঠে গিয়েছিল সে। এখন তমোজিৎ একটু বড় হয়েছে। আপাতত নদিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যমস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। তরুণের কথায়, ‘‘ওই ঘটনারপরে আমাদের ছেলেকে কী ভাবে বড় করব, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তার পর থেকে বলতে গেলে ঠাকুরমাই ওর ধ্যানজ্ঞান।’’ তবে এখনও মাঝেমধ্যে মায়ের জন্য কান্নাকাটিকরে তমোজিৎ। তরুণের কথায়, ‘‘যতই হোক, মায়ের অভাব তো কেউ কখনও পূরণ করতে পারে না। সারা জীবন এই যন্ত্রণা নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে।’’

সেই সময়ে কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা থাকলেও দুর্ঘটনার পরেই নদিয়ায় চলে যান তরুণ। আপাতত ছেলেকে নিয়ে শান্তিপুরই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। সেখানেই শাড়ি, কাপড়ের ব্যবসা সামলান। তরুণের কথায়, ‘‘তখন ইচ্ছা থাকলেও এখন পাকাপাকি ভাবে আর কলকাতায় যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। ও দিকে গেলেই পুরনো কথা বেশি করে মনেআসে। দূরে থেকে যতটা ভুলে থাকা যায় আর কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Police constable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE