E-Paper

জন্মগত বাধায় স্তব্ধ হল দশ মাসের শিশু, দেহদান পরিবারের

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত বাবা-মা তাই এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁদের সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়ে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনে এই ঘটনা নজির হয়ে থাকবে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫৭
An image of Death

—প্রতীকী চিত্র।

দশ মাসের একরত্তির শেষকৃত্য করে সবটুকু শেষ করে ফেলতে চাননি বাবা-মা। বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে সন্তানের দেহ দান করলেন তাঁরা। বুধবার সকালে এমনই মরণোত্তর দেহদানের সাক্ষী থাকল এসএসকেএম। চিকিৎসকেরা বলছেন, এত কম বয়সে দেহদান এ রাজ্যে তো বটেই, সম্ভবত পূর্ব ভারতেও প্রথম।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত বাবা-মা তাই এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁদের সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়ে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনে এই ঘটনা নজির হয়ে থাকবে। শহরতলির বাসিন্দা দশ মাসের শিশুটির জন্ম থেকেই যকৃতের সমস্যা ছিল। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘কনজেনিটাল বাইলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া’। শিশু শল্য চিকিৎসক সুজয় পাল জানান, ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে এটি জন্মগত। ১০ শতাংশ শিশুর জন্মের পরে ভাইরাসজনিত সংক্রমণেও হয়। যকৃতে তৈরি পিত্ত যে নালির মধ্যে দিয়ে অন্ত্রে আসে, সেই নালির নীচের অংশ শুকোতে থাকে। ফলে সিরোসিস অব লিভার হয়। সুজয় বলেন, ‘‘জন্মের ৬০ দিনের মধ্যে রোগ নির্ণয় বা অস্ত্রোপচার করলে সাফল্য়ের সম্ভাবনা বেশি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন করতে হয়।’’ তিনি জানান, দেশে এমন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তের অর্ধেকের একটা সময় পরে মৃত্যু হয়।

সূত্রের খবর, দেহদান করা ওই শিশুপুত্রকে ভিন্ রাজ্যেও চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা। ফের শারীরিক সমস্যা হওয়ায় সোমবার তাকে এসএসকেএমের শিশুরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটির হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়। শেষকৃত্যের জন্য না নিয়ে গিয়ে, পিজির অ্যানাটমি বিভাগে দেহদানের সিদ্ধান্ত নেন পরিজনেরা। সেই মতো যোগাযোগ করে এ দিন সকালে দেহটি বিভাগে দান করে দেওয়া হয়।

‘ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক্স অ্যাসোসিয়েশন, পশ্চিমবঙ্গ শাখা’র মুখপাত্র অতনু ভদ্র বলেন, ‘‘এই সমস্যায় অস্ত্রোপচার করলেও সাফল্যের হার খুব কম। একটা সময়ে বিশেষ কিছু করার থাকে না। অনেক সময়েই এমন ঘটনায় চিকিৎসকদের ভুল বোঝেন অনেকে। কিন্তু বাস্তব বুঝে সন্তানের দেহ বিজ্ঞানের স্বার্থে দান করে ওই শিশুর বাবা-মা নজির গড়লেন।’’

পিজির অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজীব কুণ্ডু জানান, দেহটি সংরক্ষণ করার পরে গবেষণা করে দেখা হবে, যকৃৎ ছাড়া শিশুটির অন্য কোথাও সমস্যা তৈরি হয়েছিল কি না। বিভিন্ন অঙ্গ ও কঙ্কাল সংরক্ষণ করা হবে পরীক্ষাগারে। রাজীব বলেন, ‘‘এত ছোট বয়সে দেহদান আগে শুনিনি।’’

২০২২-এ মস্তিষ্কের দুরারোগ্য অসুখে মৃত্যু হয়েছিল বছর দশেকের শ্রীতমা মণ্ডলের। পিজিতে দান করা হয়েছিল তার দেহ। তারও আগে, ১৯৯৮ সালের দুর্গাপুজোর সময়ে চিকিৎসার জন্য শহরে এসেও রক্ত না পেয়ে আসানসোলের সাত বছরের বালক সৌভিক সামন্তের এনআরএসে মৃত্যু হয়। তার দেহ সেখানেই দান করেন বাবা। সেই কঙ্কাল আজও রাখা আছে।

‘অ্যানাটমিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা’র সভাপতি তথা এনআরএসের শিক্ষক-চিকিৎসক অভিজিৎ ভক্ত বলেন, ‘‘শরীরের বৃদ্ধি, বিশেষত অস্থি, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, পাঁজরের বৃদ্ধি বুঝতে ও ‘হিস্টোলজিক্যাল স্টাডি’থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংরক্ষণ করে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠনে কাজে লাগবে এই দেহদান।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Organ Donation Child death SSKM Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy