Advertisement
E-Paper

ধৃত পরিত্যক্ত নবজাতকের বাবা-মা

জঞ্জাল থেকে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্থানীয় এক অটোচালক। নিয়মিত ভাবে তিনি শিশুটিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখেও আসতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:৩৬
আর জি করে সেই শিশু। নিজস্ব চিত্র

আর জি করে সেই শিশু। নিজস্ব চিত্র

অবশেষে খোঁজ মিলল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘নিকু ৪২’-এ ভর্তি থাকা শিশুটির বাবা-মায়ের।

সদ্যোজাত ওই শিশুটিকে প্লাস্টিকে মুড়ে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে সোমবার তার বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ৩১৫ নম্বর ধারায় (শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তার যাতে মৃত্যু ঘটে, সেই উদ্দেশ্যে কোনও কাজ করা) মামলা রুজু করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে বরাহনগরের এ কে মুখার্জি রোডের একটি জঞ্জালের স্তূপ থেকে পাওয়া গিয়েছিল প্লাস্টিকে ভরা ওই সদ্যোজাত পুত্রকে। উদ্ধারের পরে প্রথমে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানকার ‘নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু)-ই এখন ঠিকানা তার।

জঞ্জাল থেকে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্থানীয় এক অটোচালক। নিয়মিত ভাবে তিনি শিশুটিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখেও আসতেন। ফলে ওই ঘটনার পর থেকে এলাকায় ওই শিশুটির সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তার বাবা-মা কারা, তা নিয়ে বরাহনগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকায় আলোচনা হচ্ছিল শনিবারের পর থেকেই।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা বিবাহিত নন। তাঁরা পরিজনদের সঙ্গে পালানোর সময়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান। চাপের মুখে তাঁরা স্বীকার করেন, বাড়িতেই প্রসবের পরে প্লাস্টিকে মুড়ে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন শিশুটিকে।

মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহার কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের অবিবাহিত অবস্থায় শিশুটির জন্ম হওয়ায় একটা সামাজিক প্রত্যাখ্যানের জায়গা তৈরি হয়েছিল। যে হেতু ওই যুবকের বাবা-মায়ের এই সম্পর্কে সম্মতি ছিল, সে হেতু ওই যুগল একযোগে কিছু করার চেষ্টা করেছিেলন। কিন্তু সেটা যখন ফলপ্রসূ হল না, তখন ওঁরা চেষ্টা করলেন বাচ্চাটিকে সরিয়ে ফেলতে। নিজেদের ও পরিবারের সম্মান বাঁচাতে ‘অনার-কিলিং’ এখন সমাজে বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে।’’

পাশাপাশি, শিশুটির জন্মের পরে তাকে প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলে দেওয়ার মানসিকতা সম্পর্কে প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ওঁদের মধ্যে ‘প্যাসিভ অ্যাগ্রেশন’ কাজ করেছে। যদি ‘অ্যাক্টিভ অ্যাগ্রেশন’ কাজ করত, তা হলে শিশুটিকে খুন করে ফেলতেন। প্যাসিভ অ্যাগ্রেশনের জন্য ওঁরা বাচ্চাটিকে হত্যা না করে জঞ্জালে ফেলে দিয়েছেন। যাতে শিশুটি নিজের মতো মরে যায়। তাতে নিজেদের দোষী মনে করার মাত্রা কিছুটা কম হয়েছে। আর তা থেকেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এ কে মুখার্জি রোডেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন এক দম্পতি। তাঁদের এক ছেলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর সঙ্গেই হুগলির রিষড়ার এক যুবতীর দীর্ঘ দিনের প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক। কিন্তু পরিবার মেনে না নেওয়ায় ওই যুবতী আট মাস আগে ওই যুবকের বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা জানান, পাড়ায় কারও সঙ্গেই তেমন ভাবে মিশতেন না ওই যুগল। তবে যে কয়েক বার ওই যুবতীকে দেখা গিয়েছিল, তাতে সবাই বুঝেছিলেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

স্থানীয়েরা জানান, ঘটনার রাতে দেখা যায়, ব্যাগপত্র নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ওই যুগল। সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা ওই যুবতীর কাছে বাচ্চার ব্যাপারে জানতে চান। অভিযোগ, প্রথমে ঘটনা চাপার চেষ্টা করেও পরে জেরার মুখে ওই যুবক স্বীকার করেন যে, শুক্রবার গভীর রাতে বাড়িতেই প্রসব করেন ওই যুবতী। তাঁরাই নাড়ি কেটে দু’টি প্লাস্টিকে ঢুকিয়ে দেন শিশুটিকে। এর পরে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই প্লাস্টিকটি নিয়ে জঞ্জালের স্তূপে ফেলে আসেন ওই যুবক।

বিষয়টি শোনার পরেই খেপে যান স্থানীয়েরা। খবর পেয়ে সেখানে যান বরাহনগরের কাউন্সিলর অঞ্জন পাল। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো খুন করার চেষ্টা। তাই পুলিশকে খবর দিই। কতটা নিষ্ঠুর হলে কোনও বাবা-মা এই কাজ করতে পারেন!’’ সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অমানবিকতা। ওই যুগলের ভালবাসা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যে ভালবাসা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তৈরি করে, সে ভালবাসার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’’

আর জি কর সূত্রে খবর, সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। প্লাস্টিকে মুড়ে যে ভাবে শিশুটিকে ফেলা হয়েছিল, তাতে অক্সিজেনের অভাবে তার মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছে। হার্টেও প্রভাব পড়েছে। শিশুটি শ্বাস নিতেই পারছে না। খিঁচুনিও দেখা দিয়েছে। আপাতত তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। সদ্যোজাতের চিকিৎসায় চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।

Newborn Abandoned Child Kolkata Police Crime Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy