Advertisement
০৫ মে ২০২৪
police

Police: পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন বার বার

অতিসক্রিয়তার ছবিই কি উঠে এসেছিল ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও? ওই মৃত্যুর রহস্য এখনও পরিষ্কার নয়।

পুলিশের অতিসক্রিয়তার ছবির অনেক উদাহরণ রয়েছে।

পুলিশের অতিসক্রিয়তার ছবির অনেক উদাহরণ রয়েছে। প্রতীকী ছবি

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩০
Share: Save:

দিনকয়েক আগের ঘটনা। দমদম থেকে অ্যাপ-বাইকে চেপে দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে ফিরছিলেন কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। বাইপাস লাগোয়া একটি থানার পুলিশ বাইকের উপযুক্ত কাগজপত্র না-পেয়ে চালককে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে ওই ছাত্রটিকেও গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রের পরিজনেরা থানার এক শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে জানান, ওই ছাত্র বাইকটি ভাড়া নিয়েছিলেন। ওই আধিকারিক হস্তক্ষেপ করলে ব্যক্তিগত বন্ডে ছাত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে তাঁকে এ নিয়ে হেনস্থার মুখোমুখি হতে হবে না বলেও আশ্বাস দেয় থানা।

সূত্রের খবর, এর পরে ওই শীর্ষ আধিকারিকের ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছিল পুলিশকে। ছাত্রটির পরিজনদের দাবি, রাস্তায় টহলদার পুলিশ তাঁকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে লক-আপের বাইরে বসিয়ে রেখেছিল।

এমন অতিসক্রিয়তার ছবিই কি উঠে এসেছিল ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও? ওই মৃত্যুর রহস্য এখনও পরিষ্কার নয়। প্রশ্ন উঠেছে, যদি আনিসের বাড়িতে সেই রাতে পুলিশই গিয়ে থাকে, তবে তার প্রয়োজন ছিল কি?

প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তের কথায়, ‘‘ইংরেজরা ভারতীয়দের দমিয়ে রাখতে এই আইন তৈরি করেছিল। এখন পুলিশ এবং নাগরিক,
উভয়েই ভারতীয়। তাই আইন প্রয়োগের আগে পুলিশকে সতর্ক এবং মানবিক হতে হবে। ওই ছাত্রটি কী বলতে চাইছেন, সেটা ঘটনাস্থলেই পুলিশের শোনা উচিত ছিল। তাঁর কাছে যদি বাইক ভাড়া নেওয়ার প্রমাণ থাকে, তবে কেন তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে?’’

আবার কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তী মনে করেন, এক জনকে গ্রেফতার করা মানে তাঁর মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়া। এ জন্য তাঁকে ব্যক্তিজীবনে, কর্মজীবনে মূল্য চোকাতে হতে পারে। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘অভিযুক্তের থেকে কিছু উদ্ধার করার থাকলে, তথ্যপ্রমাণ লোপাট কিংবা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, খুন, ডাকাতির মতো অপরাধ ঘটে থাকলে দ্রুত গ্রেফতারি প্রয়োজন।’’

মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে মনে করেন, অতি দ্রুত গ্রেফতার করে অভিযুক্তকে হাজতে পাঠানোর পরেও পুলিশ তাঁকে দোষী প্রমাণ করতে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূরের কথায়, ‘‘যাদবপুরের বাসিন্দা অখিল ঘোষকে মাওবাদী, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা-সহ একাধিক অভিযোগে প্রৌঢ় অবস্থায় গ্রেফতার করেছিল এসটিএফ। দশ বছর পরে বৃদ্ধ হয়ে তিনি জামিনে মুক্তি পেলেও এখনও অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি। মুখ লুকিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ।’’

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলেই তাঁর থেকে ব্যক্তিগত বন্ড নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটিকে পুলিশ ভবিষ্যতে হেনস্থা না করলেই ভাল। আজকাল কলকাতার একাধিক থানা এলাকায় নিরীহ মানুষকে হেনস্থা করছে পুলিশ।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি একটি মামলায় দেখেছেন, মোবাইলে গাড়ির কাগজ দেখিয়েও পুলিশের হাতে সস্ত্রীক মারধর খেয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন এক যুবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police West Bengal Police Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE