আকস্মিক: এখানেই বোমা ফেটে আহত হন দু’জন। সোমবার, বেলেঘাটা সরকারবাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মাটি খুঁড়তেই চকচকে কৌটোটি চোখে পড়েছিল নির্মাণ শ্রমিকের। হাতে করে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রোমোটারকে দেখিয়েছিলেন সেটি। প্রোমোটারের কথামতো এর পরে সেই কৌটো ঠুকে খোলার চেষ্টা করতেই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ। যার অভিঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন ওই শ্রমিক। বোমার আঘাতে ডান হাতের তালু কার্যত উড়ে গিয়েছে লোকমান মোল্লা নামে ওই শ্রমিকের। ঠিকরে বেরিয়ে আসে তাঁর চোখ। ক্ষতবিক্ষত হয় ডান দিকের কপালও। বোমার স্প্লিন্টার লেগে আহত হয়েছেন তন্ময় ভৌমিক নামে এক স্থানীয় যুবকও। সোমবার দুপুরে, বেলেঘাটার সরকারবাজার এলাকার ৬ নম্বর বস্তির ঘটনা।
পুলিশ জানায়, নির্মাণ শ্রমিক লোকমান আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। তাঁকে সঙ্কটজনক অবস্থায় এন আর এস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে লোকমানের ডান হাত, ডান দিকের কপাল ও ডান চোখ সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর ডান হাতের তালু থেকে হয়তো বাদ দিতে হতে পারে। তন্ময়কে এসএসকেএমে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিনের বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নড়েচড়ে বসেছেন স্থানীয় বেলেঘাটা থানার পুলিশ ও লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারাও। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দুই বাহিনীই ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। জায়গাটি পরিদর্শন করার কথা ফরেন্সিক দলেরও। কে বা কারা মাটির নীচে, কী উদ্দেশ্যে বোমা পুঁতে রেখেছিল, তা জানতে শুরু হয়েছে তদন্ত। অতীতে মাওবাদীরা এমন কৌটোবোমা ব্যবহার করত, যার ফলে একাধিক প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে।
তবে কলকাতা পুলিশ বেলেঘাটার এই ঘটনাকে এখনও ততটা ভয়ঙ্কর ভাবতে রাজি নয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই জায়গায় আগে একটি বাড়ি ছিল। বর্তমানে সেটি ফাঁকা জমি হিসেবে রয়েছে, আর সেখানেই নির্মাণের কাজ চলছিল। সেই কাজে যুক্ত ছিলেন লোকমান। আর ওই জমিতেই পোঁতা ছিল কৌটোবোমা। পুলিশের দাবি, নির্মাণকাজ করার সময়েই লোকমান চকচকে কৌটোটি কুড়িয়ে পান। পুলিশের অনুমান, কৌটোবোমাটি দীর্ঘ সময় ধরে মাটির নীচে পোঁতা ছিল।
এ দিন ঘটনার পরে ৬ নম্বর বস্তিতে পৌঁছে দেখা গেল, ঘটনাস্থলের আশপাশে পড়ে চাপ চাপ রক্ত। ফিতে দিয়ে জায়গাটি ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার জেরে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন স্থানীয় মানুষেরা। মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। ওই জমিতে প্রোমোটিং কে করছেন, তা নিয়েও কেউ মুখ খুলতে চাননি।
দুর্ঘটনাস্থলের অদূরেই বাড়ি তন্ময়ের। তিনি টালিগঞ্জ এলাকার একটি নার্সিংহোমের কর্মী। এ দিন দুপুরে তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাইকে চাপতে যাচ্ছিলেন। এমন সময়েই ঘটে বিস্ফোরণ।
ছেলের আহত হওয়ার খবর পেয়ে জ্ঞান হারান তন্ময়ের মা মিনু ভৌমিক। পরে সামান্য সুস্থ হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরাও একটা বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, হয়তো কেউ বাজি ফাটিয়েছে। তার পরেই খবর আসে, ছেলে বোমায় জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে রয়েছে। এমন খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy