শহরে ডেঙ্গির আতঙ্ক নেই— এমনটাই দাবি ছিল কলকাতা পুরসভার। যদিও শহর এবং জেলা থেকে আসা একের পর এক মৃত্যুর খবরে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল প্রশাসন। রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এর পরে কিছুটা নড়ে বসে প্রশাসন। কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলি ডেঙ্গি দমনে সক্রিয় বলে রাজ্যের শীর্ষস্তর থেকে দাবি করা হয়। অথচ একটি ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, ডেঙ্গি নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন মহেশতলা পুর কর্তৃপক্ষ এবং নাগরিকদের একাংশের উদাসীনতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে।
মহেশতলা পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। বাটানগর নিউল্যান্ডের পুজোয় এ বছরের থিম ছিল বিড়লা তারামণ্ডল। স্থানীয় সূত্রের খবর, থিমের প্রয়োজনে দুর্গাপুজোর আগে বাটানগর নিউল্যান্ডের স্টেডিয়ামের পাশে প্রায় তিন কাঠা জমির উপরে কৃত্রিম পুকুর খনন করেছিল পুজো কমিটি। দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে প্রায় দু’মাস হতে চলল। কিন্তু এখনও একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে কৃত্রিম ওই জলাশয়টি। সামনে গিয়ে দেখা গেল, এখনও টলটল করছে জমা জল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন বদ্ধ জলা ডেঙ্গির এডিস মশার লার্ভা জন্মের উপযুক্ত স্থান। অথচ উদাসীন পুজো উদ্যোক্তা এবং মহেশতলা পুর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দা বললেন, এই পুজোর পৃষ্ঠপোষক পুর চেয়ারম্যান দুলাল দাস ও বিধায়ক কস্তুরী দাস। অথচ পুজো শেষ হলেও জায়গাটি কেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হল না, তা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। এখনও পুরো খোলা হয়নি মণ্ডপ।
স্থানীয়েরা জানান, বাটানগর এলাকার সব থেকে বড় পুজো এটি। পুজোয় এত খরচ, এত প্রচার করা হয়। অথচ ডেঙ্গি সচেতনতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারছে না এত বড় পুজো কমিটি! ওই জলাশয়েই এ বার তারামণ্ডল ধাঁচের মণ্ডপটির প্রতিফলন ঘটিয়ে নজর কাড়েন পুজোকর্তারা।
সচেতনতার ক্ষেত্রে কেন এত উদাসীনতা? পুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা তথা স্থানীয় কাউন্সিলর পীযূষ দাস যদিও মানছেন না। তিনি দাবি করেন, ‘‘কিছু দিন আগেই ওখান থেকে জল সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিছু মানুষ হিংসা থেকে পুজো সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রটাচ্ছেন।’’ পরক্ষণেই তিনি স্বীকার করে নেন যে কিছুটা জল রয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিন কাঠা জমির উপরে ওই এক ইঞ্চি জমা জলে কোনও ভাবেই মশা জন্মাতে পারে না। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস অবশ্য বলেন, ‘‘আমি জল সরিয়ে ফেলতে বলেছিলাম। কিছুটা যে জল রয়ে গিয়েছে তা জানা ছিল না। পুরসভার তরফ থেকে কথা দিচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব ওই জল সরানো হবে।’’