E-Paper

আইআইএমের ছাত্র ভোটেও পরমানন্দের আরও ‘কীর্তি

আইআইএমের ছাত্রছাত্রীদের সূত্রেই গত বছর শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের ভোটাভুটির সময়ে পরমানন্দের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর কুকাজের অভিযোগ ওঠে। তবে তখন তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ স্তর পর্যন্ত পৌঁছয়নি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:২৭
আইআইএম, কলকাতা।

আইআইএম, কলকাতা। —ফাইল চিত্র।

ধর্ষণ-কাণ্ডে জামিন পেলেও আইআইএম কলকাতার এমবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পরমানন্দ জৈন ওরফে পরমানন্দ মহাবীর টোপ্পানাওয়ারের অতীত ইতিহাস নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অন্দরে। গত বছর সেখানে স্টুডেন্টস কাউন্সিলে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার মতলবে ছেলেটি কিছু কারচুপি করেন বলে এখন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত পরমানন্দ এখন আইআইএমের ছাত্র প্রতিনিধি হলে তা দেশের প্রথম সারির বি-স্কুলটির ভাবমূর্তির ক্ষতি করত বলেই অনেকের অভিমত।

আইআইএমের ছাত্রছাত্রীদের সূত্রেই গত বছর শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের ভোটাভুটির সময়ে পরমানন্দের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর কুকাজের অভিযোগ ওঠে। তবে তখন তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ স্তর পর্যন্ত পৌঁছয়নি। জানা গিয়েছে, স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়ে নিজের জন্য ভোট চাইতে পরমানন্দ প্রতিষ্ঠানের তখনকার শিক্ষার্থী কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের নামে ভুয়ো ইমেল আইডি ব্যবহার করেন। বিষয়টি ধরা পড়ায় তাঁর প্রার্থিপদও বাতিল হয়। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই ধামাচাপা পড়ে।

আইআইএম কলকাতার উঁচু তলার একটি সূত্রের তরফে অবশ্য জানা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের কিছু ত্রুটি বা ভুল ধরা পড়লে তা ওঁরা নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নেন। ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে ভেবে ওঁরা আর এ সব নিয়ে জলঘোলা করতে চান না। তবে গুরুতর অভিযোগে ছাড় দেওয়া হয় না বলেই আইআইএম কর্তৃপক্ষের দাবি। সাম্প্রতিক ধর্ষণের অভিযোগেও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কেন্দ্র বা আইসিসি-র তরফে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে আইআইএম সূত্রের খবর। পরমানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার পক্ষপাতী সংশ্লিষ্ট মহল।

এমবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কর্নাটকের এই তরুণের পরিচয় ও আচরণ ঘিরেও এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। পেশা সংক্রান্ত একটি সমাজমাধ্যমে পরমানন্দের প্রোফাইলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-২২ সালে কর্নাটকের আরভি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের জুনে আইআইএম কলকাতায় ঢোকার আগে এক বছর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফরেন ট্রেড (আইআইএফটি) এবং তার পরে ফ্রান্সের ইএম নর্ম‍্যান্ডি বিজ়নেস স্কুলেও তিনি এমবিএ করতে ঢোকেন। আইআইএফটি-র কোর্স শেষ না করে ফ্রান্সে গিয়ে কয়েক মাসেই ফিরে আসেন। ওই দু’টি সংস্থায় বিপুল খরচের পরে ফের অন‍্য একটি জায়গায় ঢোকা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। ফ্রান্সে এমবিএ পড়ার খরচ ৫০ লক্ষের মতো। তবে কি পরমানন্দ বৃত্তি পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন? তা অবশ‍্য তিনি কোথাও লেখেননি। বিষয়টি অনেকের রহস‍্যজনক ঠেকছে। এ ছাড়া এমবিএ ছাত্র হিসাবে ইন্টার্নশিপ করার সময়েও ওই ছাত্র কিছু তথ‍্যের কারচুপি করেছেন বলে অন‍্য শিক্ষার্থীদের সূত্রের খবর।

অথচ একটি সূত্র বলছে, পরমানন্দ আইআইএমে পরিচয় দিয়েছিলেন সামান‍্য আয়ের কৃষক পরিবারের সন্তান বলে। তবে আইআইএমে তিনি আর্থিক সহায়তার আবেদন করেননি। ফলে তাঁর পরিচিতি ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়ছে। অভিযুক্তের হয়ে আইনি লড়াই লড়তে আলিপুর কোর্টের আইনজীবী ছাড়াও বেঙ্গালুরুর আইনজীবীদের একটি দল এসেছিলেন। তাঁদের নেতৃত্বে থাকা কণিষ্ক রবীন্দ্রন বলেন, ‘‘ছেলেটির মা-বাবা কলকাতায় এলেও সামনে আসতে চান না। ওঁরা নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের। আমরা ছেলেটির এক শুভানুধ্যায়ী আত্মীয়ের কথায় এসেছি। আশা করছি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IIM Joka student election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy