তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে ইস্পাতের থার্ড রেল নিয়ে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর নিজস্ব কিছু প্রতিকূলতা প্রথম থেকেই ছিল। চার দশক আগে স্থায়িত্ব এবং সহজলভ্যতার কথা ভেবে ইস্পাতের থার্ড রেল ব্যবহার করা হলেও পরবর্তী সময়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গেরেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জোগান দেওয়া নিয়ে সমস্যাও বেড়েছে। তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ায় ইস্পাতের থার্ড রেল গরম হয় বেশি। এর ফলে তার বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষমতাও কমে। এই দুইয়ের জেরে থার্ড রেলে স্ফুলিঙ্গ দেখা দেওয়া থেকে শুরু করে বিদ্যুতের সংযোগকারী কেবল পুড়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন বিভ্রাট লেগেই থাকত। ট্রেন ছোটার সময়ে বিদ্যুতের জোগান কমে গিয়ে ব্যাহত হত ট্রেনের গতি।
এই সমস্যা দূর করতে গত বছর উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল বসানোর কাজ শুরু হয়। শনিবার ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। দমদমমুখী আপ লাইনে পার্ক স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার এবং কবি সুভাষমুখী ডাউন লাইনে শ্যামবাজার থেকে টালিগঞ্জ সংলগ্ন মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন পর্যন্ত অংশে থার্ড রেল বদলের কাজ শেষ হয়েছে।
এর পরের পর্বে আপ লাইনে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে পার্ক স্ট্রিট এবং ডাউন লাইনে শ্যামবাজার থেকে দমদম পর্যন্ত অংশের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা। মেট্রোর কর্তাদের দাবি, থার্ড রেল বদল করার ফলে বছরে প্রতি কিলোমিটার ট্র্যাকে বিদ্যুতের খরচ বাবদ এক কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ২০২৪ সালে ওই কাজ শুরু হওয়ার পরে এক বারের জন্যও পরিষেবা ব্যাহত না করে যে ভাবে শুধুমাত্র রাতে কাজ করে ১৯.১ কিলোমিটার পথে থার্ড রেল বদল সম্ভব হয়েছে, তা রীতিমতো কৃতিত্বের বলে দাবি করেন মেট্রোর আধিকারিকেরা।
ইস্পাতের ভারী থার্ড রেল সরিয়ে তার জায়গায় অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল রাতের মধ্যে শুধু বসানোই নয়, ওই অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহারের উপযোগী করে দিতে হয়েছে। জার্মানির একটি সংস্থার সাহায্য নিয়ে ওই কাজ করা হয়েছে। উচ্চ মানের কংক্রিট ব্যবহার করে অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল ধরে রাখার জন্য ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিকের ইনসুলেটর বা তড়িৎ অপরিবাহী ব্যবহার করা হয়েছে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্বে আপ ও ডাউন লাইনে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত অংশে ইস্পাতের থার্ড রেল বদলের কাজ করা হবে। ওই কাজের জন্য রেল বোর্ড ইতিমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ করেছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছেন, অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল বসানোর ফলে ভবিষ্যতে মেট্রোর রেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে একই ভোল্টেজ বজায় রেখে বিদ্যুতের জোগান দেওয়া ছাড়াও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে দু’টি ট্রেনের মধ্যে ব্যবধান তিন মিনিটে নামিয়ে আনাও সম্ভব হবে।
চার দশকের পুরনো উত্তর-দক্ষিণ শাখাকে ভবিষ্যতের মেট্রো পরিষেবার উপযোগী করে তুলতে এই কাজ এক রকম অপরিহার্য ছিল বলেই জানাচ্ছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা। কলকাতা মেট্রোর অন্য সব লাইনে অবশ্য অ্যালুমিনিয়ামের থার্ড রেল প্রথম থেকেই রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)