Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ শিশুকে বিক্রি করেন দাস দম্পতি

আত্মীয়েরাই জানান, বড় মেয়ের পরে ২০১১ সাল নাগাদ একটি ছেলে হয় সঞ্জীব-ঝর্নার। তাকে আর বিক্রি করেননি দম্পতি। পুলিশ জেনেছে, একমাত্র এই ছেলেটিই অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে থাকত। আত্মীয়েরা জোর করায় বড় ছেলেকে আড়িয়াদহের একটি আশ্রমে ভর্তি করে লেখাপড়া শেখাতে বাধ্য হন তাঁরা।

ধৃত ঝর্না দাস ও সঞ্জীব দাস। ফাইল চিত্র

ধৃত ঝর্না দাস ও সঞ্জীব দাস। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

তিন নয়, পাঁচ সন্তানকে বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। তার মধ্যে চার জন কন্যা এবং এক জন পুত্র। এ বার এমনই অভিযোগ উঠল সন্তান বিক্রির অভিযোগে ধৃত এক দম্পতির বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি তাঁদেরই এক আত্মীয়ের জানানো অভিযোগের ভিত্তিতে মানিকতলার বাসিন্দা ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, সঞ্জীব ও ঝর্না দাস নামে ওই দু’জন নিজেদের তিন সন্তানকে বিক্রি করেছেন। তদন্তে নেমে বিক্রি হওয়া এক কন্যাকে সোনাগাছি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগেই মালদহের এক দম্পতির কাছ থেকে পাওয়া যায় দু’মাসের শিশুপুত্রকে। এ বার ধৃত দম্পতির আত্মীয়েরা অভিযোগ তুললেন, পাঁচ সন্তান বিক্রি করেছেন ওই দম্পতি।

দাস দম্পতির আত্মীয়দের অভিযোগ, ঝর্না ও সঞ্জীব এখনও পুলিশকে মিথ্যা কথা বলেই চলেছেন। দু’জন নয়, ওঁদের চার কন্যাসন্তান। তাঁদের বড় মেয়ের বয়স প্রায় ন’বছর। বিয়ের পরে প্রথম ছেলে হলেও ২০০৮-’০৯ সাল নাগাদ এক কন্যার জন্ম দেন ঝর্না। যদিও মেয়ের জন্মের পরে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে ওই দম্পতি নিজেদের আত্মীয়দের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁদের মেয়েটি মৃত অবস্থায় জন্মেছিল। কিন্তু পরে এক দিন ঝর্না বলে ফেলেছিলেন, সঞ্জীব মেয়ে পছন্দ করেন না। তাই ওই শিশুকন্যাকে হাসপাতাল থেকেই বিক্রি করে দিয়েছেন ওঁরা। পুলিশের কাছে এমনই দাবি করেছেন দাস দম্পতির আত্মীয়েরা।

আরও পড়ুন:ছিল শিশু শ্রমিক, এখন উদ্ধারকর্তা

আত্মীয়েরাই জানান, বড় মেয়ের পরে ২০১১ সাল নাগাদ একটি ছেলে হয় সঞ্জীব-ঝর্নার। তাকে আর বিক্রি করেননি দম্পতি। পুলিশ জেনেছে, একমাত্র এই ছেলেটিই অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে থাকত। আত্মীয়েরা জোর করায় বড় ছেলেকে আড়িয়াদহের একটি আশ্রমে ভর্তি করে লেখাপড়া শেখাতে বাধ্য হন তাঁরা।

কিন্তু কেন বারবার সন্তানের জন্ম দিয়ে তাদের বিক্রি করে দিতেন ওই দম্পতি? স্থানীয় সূত্র বলছে, গাড়ি চালানোর কাজে যোগ দেওয়ার আগে সঞ্জীব ও ঝর্না বাড়িতে চোলাই বিক্রি করতেন। তাতে রোজই কাঁচা টাকা উপার্জন হতো। কিন্তু পরে স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা মিলে গোটা এলাকায় চোলাই বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় সেই টাকা উপায়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ি চালিয়ে সেই পরিমাণ কাঁচা টাকা হাতে আসত না। ফলে মূলত টাকার লোভেই প্রথম মেয়েকে বিক্রি করেন ঝর্না-সঞ্জীব। হাতে টাকা আসতেই লোভ পেয়ে বসে দাস দম্পতিকে।

সেই লোভেই আরও তিন কন্যা ও এক পুত্রকে বিক্রি করেন তাঁরা। বারবার সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় আত্মীয়-স্বজন অস্ত্রোপচারের কথাও বলেন তাঁদের। কিন্তু ধৃত দম্পতি সেই উপদেশ বারবারই এড়িয়ে গিয়েছেন বলে দাবি আত্মীয়দের। এমনকী অভিযোগ, সন্তানসম্ভবা হলেই ঝর্না এড়িয়ে চলতেন শরিকি আত্মীয়দের। আর যদি বা কারও নজরও পড়ত তাঁর দিকে, ‘পেটে জল জমেছে’ বলে এড়িয়ে যেতেন ঝর্না। এ ভাবেই তাঁরা নিজেদের চার মেয়ে ও এক ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

ওই দম্পতি ধরার পড়ার পরেই গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। গত ৪ জুন মালদহ থেকে তাঁদের আড়াই মাসের পুত্র সন্তানকে উদ্ধার করে শহরে আনা হয়। যেই দম্পতির কাছে ওই শিশুকে বিক্রি করা হয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদেরকেও আটক করে পুলিশ। এর পরে ৮ জুন সোনাগাছি থেকে তাঁদের দেড় বছরের শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে মানিকতলা থানার পুলিশ। যেই যৌনকর্মীর কাছে তাকে বিক্রি করা হয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকেও। তবে এখনও বাকি তিন মেয়ের খোঁজ পায়নি পুলিশ। তবে বাকি তিন মেয়ের খোঁজ এখনও মেলেনি বলেই জানাচ্ছে
পুলিশের একাংশ।

ওই দম্পতির আত্মীয়দের অভিযোগ, ঝর্না কিংবা সঞ্জীব নিজে থেকে পুলিশের কাছে আর কোনও সন্তানের কথা স্বীকার করার মতো মানুষ নন। সন্তান বিক্রি করার পরেও তাঁদের মধ্যে কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি কারও।

ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস বলেন, ‘‘এখনও জেরা চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না ওঁরা কতগুলি সন্তান বিক্রি করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE