Advertisement
E-Paper

ভিক্ষার টাকা না দেওয়ায় মাকে বাড়িছাড়া করল মেয়ে

যদিও এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে বিবাদে যেতে নারাজ ওই বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘একটি মাত্র থাকার জায়গা রয়েছে আমার।’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৬
বিধ্বস্ত: ঢাকুরিয়ার ফুটপাথে অালোকবালা দাসী। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

বিধ্বস্ত: ঢাকুরিয়ার ফুটপাথে অালোকবালা দাসী। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

ঢাকুরিয়া ব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। মাথায় চোট পাওয়ায় দিনভর আর ভিক্ষা করা হয়নি। রোজগার শূন্য। তাই সংসারে টাকা দিতে না পারায় সত্তরোর্ধ্বা মাকে রাতে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠল তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সারা রাত তাই ঢাকুরিয়ার রাস্তাতেই কাটালেন ওই বৃদ্ধা। শেষে স্থানীয়দের সাহায্যে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ওই এলাকারই এক বেসরকারি হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে।

যদিও এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে বিবাদে যেতে নারাজ ওই বৃদ্ধা। বললেন, ‘‘একটি মাত্র থাকার জায়গা রয়েছে আমার।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, মেয়ের বিরুদ্ধে কিছু বললে হয়তো মেয়ে আর ঘরেই ঢুকতে দেবে না। মাথার চোটে হাত বোলাতে বোলাতে এর পরে বললেন, ‘‘দু’দিনেই সেরে যাবে। তার পরে ভিক্ষা করে যা পাব, তা নিয়েই বাড়ি ফিরব।’’ আর মেয়ের বক্তব্য, ‘‘সংসারে মা টাকা দেয়, নিই। ভিক্ষা করে আনে কি না বলতে পারব না।’’ মঙ্গলবার বাড়িতে থাকতে না দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই মহিলার দাবি, ‘‘সংসারে থাকতে হলে তো টাকা দিতে হবে। টাকা চেয়েছিলাম।মা নিজেই বেরিয়ে গিয়েছে।’’

ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলা বস্তিতে মেয়ে সন্ধ্যার সঙ্গে থাকেন আলোকবালা দাসী। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, রোজ ঢাকুরিয়া এলাকায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় আলোকবালাদেবীকে। সোমবার দুপুরে ওই বৃদ্ধাকে ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছেই মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁদেরই এক জন বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। তার পরে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।

তবে মঙ্গলবার রাতেই ফের ওই বৃদ্ধাকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকুরিয়া ব্রিজের উপরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও তিনি যেতে রাজি হননি। বাপ্পাদিত্যবাবু বুধবার বলেন, ‘‘ওঁকে বাড়ি যেতে বললাম। কিন্তু বৃদ্ধা গেলেন না। আমার মনে হয়, এই অবস্থায় বাড়ি গেলে হয়তো মেয়ে ঢুকতে দেবেন না। তাই কাঁদতে থাকেন তিনি।’’ ফুটপাথেই রাতে থাকার ব্যবস্থা হয় বৃদ্ধার। বাপ্পাদিত্যবাবুর দাবি, ‘‘অনেক খোঁজ করেও কাছাকাছি বৃদ্ধাদের কোনও নৈশাবাস পাইনি।’’

আরও পড়ুন: অ্যাসিডে পোড়ার জ্বালা সয়ে অন্যদের ভরসা জোগাচ্ছেন ইনি

এ দিন ওই ফুটপাথে গিয়ে দেখা গেল, বৃদ্ধার পরনে সাদা শাড়ি। মাথার ক্ষতস্থানে পুরু ব্যান্ডেজ বাঁধা। চোট লেগে কালশিটে পড়ে গিয়েছে মুখের বাঁ দিকে। হাঁটতেও পারছেন না। এখানে কেন? প্রশ্ন শুনে জানালেন, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ফুটপাথেই থাকতে চান। এখন বাড়ি ফিরলে বিপদ আছে।

কীসের বিপদ? ঝাপসা চোখে সোজা তাকিয়ে বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন, বাংলাদেশের খুলনা থেকে স্বামীর সঙ্গে এ দেশে চলে এসেছিলেন। চার সন্তান রয়েছে তাঁর। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পঞ্চাননতলায় মেয়ের কাছেই থাকেন তিনি। তবে গত দু’দিন আর সেখানে ফেরা হয়নি। কারণ, চোটের কারণে দিনভর ভিক্ষাই করতে পারেননি। প্রতিবেশীদের ধারণা, ভিক্ষা করে মেয়ের হাতে টাকা দিলে তবেই থাকতে পান ওই বৃদ্ধা। ফের ভিক্ষা না করতে পারা পর্যন্ত হয়তো ঘরে ফেরাই মুশকিল হবে।

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বহু দিন ধরেই মায়ের দেখাশোনা করেন না মেয়ে। তবে এ নিয়ে বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য কোনও উত্তর দেননি তিনি। কেবল তাকিয়ে থেকেছেন শূন্য দৃষ্টিতে।

Old woman Begging Footpath ফুটপাথ বৃদ্ধা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy