Advertisement
E-Paper

‘সত্যজিৎবাবু পোশাকের ডিজাইন এঁকে দিলেন, আমি আব্বার কাছে পৌঁছে দিলাম’

এস এন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর দফতর লাগোয়া ৪৫, মতিশীল স্ট্রিট। এই ঠিকানার কাপড়ের দোকান থেকেই তাঁদের ছবি ও নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের পোশাকের অর্ডার দিতেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক, নাট্যকার সত্যজিৎ রায় এবং উৎপল দত্ত। পোশাক বানানোর কারিগর ছিলেন রশিদ।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১২
রোমন্থন: ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবির একটি দৃশ্য।

রোমন্থন: ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবির একটি দৃশ্য।

‘সোনার কেল্লা’র তোপসে চরিত্রের জ্যাকেট বানাবে কে? এই নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। পরে খোঁজ খবর নিয়ে মতিশীল স্ট্রিটের রশিদ সাহেবের কাছে তোপসের জ্যাকেটের অর্ডার দিয়েছিলেন।

শুধু কি তোপসে! ‘হীরক রাজার দেশে’র গুপির ফতুয়া অথবা ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র মির্জা সাজ্জাদ আলি ও মীর রোশন আলির পোশাক— সেখানেও তো তাঁরই হাতের ছোঁয়া। অবশ্য সে খবর আর কে রাখে এখন! ফলে সেই কারিগর, প্রয়াত আব্দুর রশিদও বিস্মৃতপ্রায়। তবে রয়ে গিয়েছে তাঁর দোকান।

এস এন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর দফতর লাগোয়া ৪৫, মতিশীল স্ট্রিট। এই ঠিকানার কাপড়ের দোকান থেকেই তাঁদের ছবি ও নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের পোশাকের অর্ডার দিতেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক, নাট্যকার সত্যজিৎ রায় এবং উৎপল দত্ত। পোশাক বানানোর কারিগর ছিলেন রশিদ। ১৯৬১ সালে রশিদ তাঁর দোকান প্রথমে চালু করেন রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে। তার পরে ১৯৭১ সালে তা উঠে আসে মতিশীল স্ট্রিটে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পোশাক তৈরিতে বেশ নামডাক ছিল রশিদের।

রশিদ সাহেব এখন প্রয়াত। ১৯৯৩ সালে মারা যাওয়ার পরে তাঁর পুত্র হারুন অল রশিদ এখন দোকান সামলান। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সত্যজিৎ রায় ও উৎপল দত্তের কথা বারবার বলছিলেন হারুন। হারুনের কথায়, ‘‘এক দিন আব্বা (রশিদ সাহেব) আমাকে বিশপ লেফ্রয় রোডে সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। সত্যজিৎবাবু সাদা কাগজে ফটাফট বিভিন্ন পোশাকের ডিজাইন এঁকে দিলেন। আমি সব ডিজাইন নিয়ে এসে আব্বার কাছে পৌঁছে দিলাম।’’

তবে সত্যজিৎ কখনও মতিশীল স্ট্রিটে পা রাখেননি। সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের কথায়, ‘‘তখন আমি ছোট। আব্দুর রশিদ বাবার ছবির বিভিন্ন চরিত্রের পোশাক তৈরি করতেন। ওঁকে বাড়িতে একাধিক বার আসতে দেখেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পোশাকের ডিজাইন বাবা স্কেচ করে পাঠিয়ে দিতেন। আর তা হুবহু নকল করে সুন্দর পোশাক তৈরি হত। বাবা বলতেন, রশিদ একজন বড় শিল্পী।’’

দোকানে হারুন অল রশিদ। নিজস্ব চিত্র

হারুনের স্মৃতিচারণায় উঠে এল উৎপল দত্তের প্রসঙ্গও। তাঁর কথায়, ‘‘সালটা ১৯৭৬। আমার বয়স একুশ। আব্বাকে সাহায্য করতে সবে দোকানে যাতায়াত শুরু করেছি। এক দিন দেখি হন্তদন্ত হয়ে উৎপল দত্ত এলেন। আব্বাকে মাপ দিয়ে চলে গেলেন। পরে আব্বাই ওঁর পরিচয় আমাদের জানিয়েছিলেন।’’ উৎপল দত্তের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দত্তের কথায়, ‘‘রশিদ সাহেবকে বাবা খুব ভালবাসতেন। বাবার বেশির ভাগ নাটকের পোশাক ওঁর হাতেই তৈরি হত। এমনকি বাবা বিদেশে কোনও সভায় অতিথি হয়ে গেলে রশিদ সাহেবের বানানো পোশাক পরেই যেতেন।’’

বিষ্ণুপ্রিয়া আরও জানাচ্ছেন, তাঁদের বাড়িতেও রশিদ সাহেবের যথেষ্ট খাতির ছিল। বেশির ভাগ সময় তিনি উৎপল দত্তের টালিগঞ্জের নেতাজি সুভাষ রোডের বাড়িতে এসে নাটকের চরিত্রের পোশাকের ডিজাইন নিয়ে যেতেন। বিষ্ণুপ্রিয়ার কথায়, ‘‘রশিদজি বাবার একাধিক নাটকের চরিত্রের পোশাক তৈরি করেছিলেন। তবে বেশ মনে পড়ে যাচ্ছে, ফরাসির আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে বাবার ‘নীল সাদা লাল’ নাটকের কথা। ওই নাটকের জন্য বাবা ফ্রান্স থেকে জ্যঁ ব্লড বারিয়েরা নামে এক ডিজাইনারকে আনিয়েছিলেন। আর ওঁর ডিজাইনে প্রায় ২৫টি সাহেবি পোশাক রশিদ সাহেব তৈরি করেছিলেন। ওঁর নিখুঁত কাজে বাবা ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ ছাড়াও রশিদজির হাতের ছোঁয়ায় বাবার ‘ব্যারিকেড’, ঝ়়ড়়’-এর চরিত্রেরাও যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিল।’’

তথ্য বলছে, সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ বা উৎপল দত্ত নির্মিত ‘দুঃস্বপ্ন’, ‘বৈশাখী ঝড়’ ও ‘টিনের তলোয়ার’-এর বিভিন্ন চরিত্রের পোশাক তৈরি থেকে শুরু করে ‘রৌদ্র ছায়া’ ছবিতে মহানায়ক উত্তমকুমার যে জ্যাকেটটা পরেছিলেন তারও নির্মাতা রশিদ সাহেব।

কিন্তু সেই তথ্যের বাইরে যা পড়ে রয়েছে তা হল রশিদ সাহেবের হাতের ছোঁয়া আর তাঁর স্মৃতিবাহী ৪৫, মতিশীল স্ট্রিটের দোকানটি।

Cloth Design Shop Cinema
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy