Advertisement
E-Paper

Spinal Muscular Atrophy: মেয়েকে বাঁচানোর যুদ্ধ না হারার পণ একাকী মায়ের

জিনঘটিত বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি টাইপ টু’-তে আক্রান্ত, বছর তেরোর মেয়ে স্মৃতিকে নিয়ে এক কামরার টিনের চালের ভাড়ার ঘরে থাকেন লিপিকা।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৭:৩৭
স্মৃতি চক্রবর্তী

স্মৃতি চক্রবর্তী

মাসের শুরুতে তাঁর হাতে আসে উপার্জনের ছ’হাজার টাকা। মা-মেয়ের সংসারে সেটুকুই ভরসা। মেয়ে অসুস্থ, এই খবর জেনেই ৯ বছর আগে পালিয়েছেন স্বামী। তবু সন্তানকে বাঁচানোর পাঁচ কোটি টাকার লড়াই থেকে পিছিয়ে আসার কথা ভাবেন না শিলিগুড়ি আশ্রমপাড়ার লিপিকা চক্রবর্তী।

জিনঘটিত বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি টাইপ টু’-তে আক্রান্ত, বছর তেরোর মেয়ে স্মৃতিকে নিয়ে এক কামরার টিনের চালের ভাড়ার ঘরে থাকেন লিপিকা। ঘরে আসবাব বলতে একটিমাত্র খাট, সেটিও আদতে বাড়িওয়ালার। শৌচাগার ভাগ করতে হয় আর পাঁচ জনের সঙ্গে। তাই চেয়ার কেটে বালতি পেতে চিলতে ঘরের কোণেই শৌচকর্ম সারাতে হয় মেয়েকে। বিছানা আর হুইলচেয়ারে আটকে বছর তেরোর কিশোরীর জগৎ। স্নান করানো, জামা পরানো, খাওয়ানো থেকে মেয়ের সব দায়িত্ব হাসিমুখে পালন করেন লিপিকা। মেয়েকে একটু স্বস্তি দিতে ধারদেনা করে কিনেছিলেন ২৭ হাজার টাকা দামের বিশেষ হুইলচেয়ারও।

ক্লান্ত গলায় ফোনে লিপিকা বলেন, “মেয়েটাকে যে ভাবেই হোক ওষুধ দিতে হবে‌। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বাড়ি বাড়ি রান্না আর বাসন মাজার কাজ করি।” খানিক থেমে আধবোজা গলায় বলেন, “পাশে না দাঁড়ালে যে ওকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাব।” লিপিকার একমাত্র ভরসা, তাঁর মা-বাবা থাকেন একটু দূরেই। পেশায় পুরোহিত বাবার আয় সামান্যই। তবু মেয়ের আড়াই হাজার টাকা ঘরভাড়া আর মেয়ে-নাতনির খাবারের খরচটুকু তিনিই দেন।

স্মৃতির চিকিৎসার খরচ কী ভাবে আসে? লিপিকা জানালেন, ২০১৩ সাল থেকে পাশে রয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসক অজিত ছেত্রী। যিনি টাকা তো নেনই না, উপরন্তু যে কোনও ওষুধ এবং যাতায়াতের খরচও জোগাড় করে দেন। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি-র (এসএমএ) ওষুধ পেতে গত নভেম্বরে কলকাতার চিকিৎসক সংযুক্তা দে-র কাছে মেয়েকে দেখান লিপিকা। বার তিনেক যাতায়াত করে জানতে পারেন, এই মুহূর্তে মেয়ের সুষুম্নাকাণ্ডে অস্ত্রোপচার জরুরি। না হলে আরও বেঁকে যাবে স্মৃতি। সেই সঙ্গে এ-ও জানতে পারেন, এসএমএ-র জন্য এ দেশের একমাত্র ওষুধ রিসডিপ্লাম জীবনভর নিয়ে যেতে হবে স্মৃতিকে।

কিশোরী স্মৃতির জন্য বছরে ওই ওষুধের খরচ ৭২ থেকে ৭৪ লক্ষ টাকা— জানাচ্ছেন শিশু-রোগ চিকিৎসক সংযুক্তা। বলছেন, “এই সময় থেকে ওর ওষুধ শুরু হলে পড়াশোনা করে খানিকটা স্বাবলম্বী হতে পারবে। আগামী ন’বছরের মধ্যে সরকারি স্তর থেকে স্মৃতি বিরল রোগের চিকিৎসায় নিখরচায় ওষুধ পাবে বলে আশা করছি। তত দিনে এর দামও হয়তো সাধ্যের মধ্যে আসবে। এগুলো ভাবতে হচ্ছে, কারণ আজীবন ওকে ওষুধ খেতে হবে। আপাতত ন’বছরকে লক্ষ্যমাত্রা ধরেই ভাবছি। এই মুহূর্তে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা কিছু ছাড় দেওয়ায় ওর ক্ষেত্রে ন’বছরে খরচ পাঁচ কোটি টাকা হচ্ছে।”

এসএমএ আক্রান্তদের অভিভাবকদের সংগঠন ‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলছেন, “বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্রের যে নীতি আছে, সেখানে গ্রুপ থ্রি ডিজ়িজের মধ্যে পড়ছে এসএমএ। এই গ্রুপের জন্য ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ শুরু করেছে সরকার। পোর্টালের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত হচ্ছে। সরকারের মাপকাঠিতে নির্বাচিত রোগীর সেই ওষুধ পেতে কয়েক বছর লাগবে। স্মৃতির পক্ষে বিনা ওষুধে তত দিন অপেক্ষা অসম্ভব। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সব স্তরের মানুষের কাছে ওদের লড়াইকে সম্মান জানানোর আবেদন রাখছি।”

আর কী বলছে রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি? ভূগোল, ইতিহাসকে ভালবেসে স্মৃতি বড় হয়ে দিদিমণি হতে চায়। শুয়ে শুয়েই রং পেনসিলের আঁচড়ে ভরিয়ে তোলে খাতা। খেতে ভালবাসে মায়ের হাতে তৈরি মাংস আর শুক্তো। বেশি ভালবাসে মা আর দিদিমাকে, সে কথা বলতে বলতেই কাঁদো কাঁদো গলায় সে বলে ওঠে, “বাবাকে মনেই পড়ে না। মা-ই সব। কষ্ট হয় মায়ের জন্য। আমার সব কিছু যে মাকে করতে হয়। মাকে দেখে খুব কান্না পায়।”

Spinal Muscular Atrophy Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy