Advertisement
E-Paper

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের তিন দিনে মৃত তিন

মোড়ে মোড়ে চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও পথ নিরাপত্তার পাঠ দিচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশ। তাতেও অবশ্য দুর্ঘটনা থামার নাম নেই। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের তৃতীয় দিনে এই নিয়ে মোট তিন জনের মৃত্যু হল। গত সোমবারই হেস্টিংস থানা এলাকার এইচআরবিসি বিল্ডিংয়ের সামনে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন এক লরিচালক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৫
মেয়েকে নিয়ে মৃত সঞ্জয় পোদ্দারের স্ত্রী পূর্ণিমা। নিজস্ব চিত্র

মেয়েকে নিয়ে মৃত সঞ্জয় পোদ্দারের স্ত্রী পূর্ণিমা। নিজস্ব চিত্র

বড়তলা থানার সিঁড়িতে বসে বছর ছয়েকের মেয়েটি নাগাড়ে মাকে বলে চলেছে, ‘‘বাবা কখন আসবে? এখনও হাট শেষ হয়নি! আর কত ক্ষণ থাকতে হবে এখানে?’’ জবাব নেই। নিরুত্তর সেই মায়ের চোখ থেকে তখন গড়িয়ে পড়ছে জল।

বুঝতে পারছিলেন না, কী ভাবে ছোট মেয়েকে দুঃসংবাদটা দেবেন। কারণ বুধবার সকালে তার কয়েক ঘণ্টা আগেই পথ দুর্ঘটনায় স্বামী সঞ্জয় পোদ্দারকে (৫৫) হারিয়েছেন পূর্ণিমা। তাই মেয়েকে সামান্য আড়াল করে বললেন, ‘‘প্রতি বুধবারই খান্নার হাটে যায়। আজ বাস থেকে নামতে গিয়ে কী করে এ রকম হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। এ বার মেয়েটাকে কী বলব?’’

অথচ গত সোমবার থেকে কলকাতা পুলিশ এলাকায় শুরু হয়েছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। মোড়ে মোড়ে চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও পথ নিরাপত্তার পাঠ দিচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশ। তাতেও অবশ্য দুর্ঘটনা থামার নাম নেই। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের তৃতীয় দিনে এই নিয়ে মোট তিন জনের মৃত্যু হল। গত সোমবারই হেস্টিংস থানা এলাকার এইচআরবিসি বিল্ডিংয়ের সামনে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন এক লরিচালক। রঙ্গলাল রায় (৩৫) নামে ওই চালককে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর। এ দিন সকালেই খন্নার কাছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোডে বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সঞ্জয়ের। এ দিনই বাইপাসে গাড়ির ধাক্কায় ইয়াসিন আলি গাজি (৭০) নামে এক স্কুটিচালকেরও মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সোম এবং মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক জন। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ কর্মসূচি চলাকালীন দুর্ঘটনার এমন বহর স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মৃত ব্যবসায়ীর পরিবার সূত্রের খবর, সঞ্জয় গড়িয়াহাটে হকারি করেন। তাঁর বাড়ি বাঘা যতীন এলাকায়। স্ত্রী পূর্ণিমা এবং ৭০ বছরের মা ছাড়াও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে সৃজিতা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে সৃজনীর বয়স ছ’বছর। পরিবার জানাচ্ছে, ব্যবসার সামগ্রী কিনতে বুধবার করে খন্নার হাটে যেতেন সঞ্জয়। এ দিন ভোরেও হাটে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বার হন তিনি। সঙ্গী সুবল সাহা নামে আরেক হকার জানান, শিয়ালদহ থেকে ২০২ নম্বর বাসে ওঠেন তাঁরা। সাহিত্য পরিষদ পার করে বাস থেকে নামার সময়ই ঘটে যায় বিপত্তি। সুবলের কথায়, ‘‘বাসে খুব ভিড় ছিল। কন্ডাক্টর ভাড়া নিতে পারেননি। তাই নামার আগে গেট আটকে রেখেছিলেন। সঞ্জয় নামতে না পারলেও আমি কোনও মতে নেমে যাই। এর পরে চালক ব্রেক কষলে সঞ্জয়-সহ চার জন রাস্তায় পড়ে যান। বাকিরা বেঁচে গেলেও সঞ্জয়ের কোমরের উপর দিয়ে বাসের পিছনের চাকা চলে যায়।’’

তিনিই সঞ্জয়কে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ (এনআরএস) হাসপাতালে নিয়ে যান বলে দাবি সুবলের। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। বাসটিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অন্য দুর্ঘটনাটি ঘটেছে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায়। পুলিশ জেনেছে, ইয়াসিন নামের মৃত ব্যক্তি মাছের ব্যবসায়ী। তাঁর বাড়ি গুলাম জিলানি খান রোডে। ভোরে নাতিকে নিয়ে তিনি ব্যবসার কাজে চিংড়িঘাটার কাছে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে স্কুটিতে একাই ছিলেন ইয়াসিন। পুলিশের অনুমান, বাইপাসের উপরেই কোনও গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। বাইপাসের হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইয়াসিনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল সেটি খুঁজতে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Police Accident Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy