Advertisement
E-Paper

জীর্ণ বাড়ি ভেঙে বলি এ বার তিন

ওই প্রোমোটারকে মোবাইলে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর অফিস থেকে বলা হয়, তিনি কলকাতার বাইরে রয়েছেন এবং ওই বাড়িটি নাকি তিনি কেনেননি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
বিপর্যয়: এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে পোস্তার শিবতলা স্ট্রিটের দোতলা বাড়িটি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বিপর্যয়: এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে পোস্তার শিবতলা স্ট্রিটের দোতলা বাড়িটি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

জরাজীর্ণ বাড়িটি যে ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও সময়ে, তা বিলক্ষণ জানতেন ৯৪ বছরের তারাপ্রসন্ন সাহা। তা সত্ত্বেও পরিবার নিয়ে পোস্তা থানার শিবতলা স্ট্রিটের ওই বাড়ি আঁকড়েই পড়ে ছিলেন তিনি।

পরিণতি যা হওয়ার, তা-ই হল। মঙ্গলবার সকালে ছাদ-সহ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাড়িটির বড় একটি অংশ। যার নীচে চাপা পড়ে স্ত্রী শোভারানি ও বড় মেয়ে বিউটি রায়ের সঙ্গে প্রাণ হারালেন তারাপ্রসন্নবাবু।

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৬ নম্বর শিবতলা স্ট্রিটের দোতলা বাড়িটি প্রায় একশো বছরের পুরনো। তারাপ্রসন্নবাবু সেখানে ৬০ বছরের ভাড়াটে। বছর আটেক আগে বাড়িটির মালিকানা বদলায়। এক প্রোমোটার সেটি কিনে নেন। ওই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাড়িটি কিনলেও এত দিন কোনও মেরামতির কাজ করাননি। নতুন নির্মাণ শুরু করতেও দেরি করছিলেন।

আরও পড়ুন: মরছে মানুষ, দেখছে পুরসভা

ওই প্রোমোটারকে মোবাইলে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর অফিস থেকে বলা হয়, তিনি কলকাতার বাইরে রয়েছেন এবং ওই বাড়িটি নাকি তিনি কেনেননি!

কী ঘটেছিল এ দিন?

পুলিশ জানিয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টা-পৌনে ১২টা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরা ওই বাড়ির ভিতর থেকে একাধিক মানুষের আর্তনাদ শুনতে পান। দেখা যায়, বাড়িটির পিছন দিকের অংশটি দোতলার ছাদ-সহ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির সব থেকে পুরনো ভাড়াটে তারাপ্রসন্নবাবু, স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে পিছনের দিকের ঘরেই ছিলেন। তিন জনই ভগ্নস্তূপের মধ্যে আটকে পড়েন।

ওই বাড়ির দোতলায় সামনের দিকে থাকা অপর ভাড়াটে পরিবারটি কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যায়। ঘটনার পরেই খবর যায় পুরসভা, থানা, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাছে। যদিও স্থানীয় লোকজনই ঘটনাস্থল থেকে বছর ছাপ্পান্নর বিউটি রায়কে উদ্ধার করে বাইরে বার করে আনেন। পরে বিউটিদেবীর মা ও বাবাকে উদ্ধার করে তিন জনকেই পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তারাপ্রসন্নবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হলেও তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে তখনও বেঁচে ছিলেন। তাঁদের মাথা ও কোমরে চোট ছিল। পরে বিকেলের দিকে মা-মেয়েরও মৃত্যু হয়।

জীর্ণ অংশ ভাঙার কাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, বাড়িটির পিছনের অংশটি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সামনের দিকে থাকা অপর ভাড়াটে রজতশুভ্র সাহা ও তাঁর স্ত্রী পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীদের সাহায্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন। দু’জনেরই চোখে-মুখে আতঙ্ক। রজতবাবু জানান, সামনের সপ্তাহেই এই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কথা। প্রোমোটারের সঙ্গে সেই মতো চুক্তিও হয়েছে। তার আগেই এই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে রজতবাবুর দুই ছেলে, এক মেয়ে ও এক আত্মীয় ছিলেন। ঘটনার পরে সকলেই বেরিয়ে আসেন। সীমা নামে ওই আত্মীয় বলেন, ‘‘একটা কাজে এসেছিলাম। যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছি, দেখলাম, মাসিমা আর বিউটিদি খাটে বসে খাচ্ছেন। মেসোমশাই শুয়ে ছিলেন। তার কিছু পরেই হুড়মুড়িয়ে কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ। বেরিয়ে দেখি, ওঁদের ঘরটাই নেই! পরে শুনতে পেলাম, বাঁচানোর জন্য বিউটিদি আর মাসিমার আর্ত চিৎকার। কিন্তু তারই মাঝে দেওয়ালের একটি দিক ভে‌ঙে প়ড়ল আর মাসিমার আওয়াজও থেমে গেল।’’

এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, বিপজ্জনক জেনেও কেন তারাপ্রসন্নবাবু বাড়ি ছাড়েননি? তাঁর মেজ ছেলে প্রদীপবাবু বিকেলে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কার সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে, জানি না। কিন্তু ওই প্রোমোটার বাবাকে জায়গা দেবেন না বলেছিলেন। আর সেই কারণেই বাবা বাড়ি ছাড়তে চাননি। জায়গার অভাবে আমি অন্যত্র থাকি। বাবা, মা আর ছোট ভাই এখানে থাকত। ভাই মারা যেতে বড় বোন এসে ছিল।’’ তারাপ্রসন্নবাবুর ছোট মেয়ে শুভ্রা পোদ্দার ও বড় মেয়ে বিউটিদেবীর ছেলে সর্বজিৎ জানান, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই অসুস্থ ছিলেন। শোভারানি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সোমবারই তাঁকে বাড়ি আনা হয়।

প্রোমোটারের বিরুদ্ধে তারাপ্রসন্নবাবুর পরিবারের যে অভিযোগ, সে বিষয়ে স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজয় ওঝা বলেন, ‘‘আমিও সেটাই জানি। কিন্তু তারাপ্রসন্নবাবু ও তাঁর স্ত্রী
অসুস্থ থাকায় বেশি কিছু জানার চেষ্টা করিনি কখনও।’’

Building collapsed kolkata কলকাতা Dilapidated শিবতলা স্ট্রিট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy