Advertisement
০৭ মে ২০২৪
JU Student Death

‘সৌরভই কিংপিন’, পুলিশ বলল আদালতে, যাদবপুর মৃত্যু মামলায় তিন জনই আবার পুলিশি হেফাজতে

অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে চেয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী। সেই আবেদন মেনে সৌরভ চৌধুরীকে ২৫ অগস্ট, মনোতোষ ঘোষ, দীপশেখর দত্তকে ২৬ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

image of sourabh Chowdhury

যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে মঙ্গলবার হাজির করানো হয়েছে আদালতে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৪৭
Share: Save:

যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সৌরভ চৌধুরীই হলেন ‘কিংপিন’ (মাথা)। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে এই দাবি করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। ওই দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসাবে অন্য এক পড়ুয়াকে পাঠানো সৌরভের হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটেরও উল্লেখও করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, প্রথম বর্ষের মৃত পড়ুয়াকে আসলে ‘খুন’ করা হয়েছে। ঘটনাটিকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে আরও জেরার প্রয়োজনের কথা জানিয়ে তাঁদের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদবৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়। সেই মতো সৌরভকে ২৫ অগস্ট এবং মনোতোষ ঘোষ, দীপশেখর দত্তকে আগামী ২৬ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছিলেন, অভিযুক্ত সৌরভকে জেরা করে যাদবপুরকাণ্ডে প্রয়োজনীয় ‘তথ্য’ মিলতে পারে। সেই কারণে গ্রেফতারের আগে এবং পরে, সৌরভকে দু’বার জেরা করেছিলেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। এ বার আদালতেও পুলিশ দাবি করল, সৌরভই আসলে ‘মাথা’। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয় সৌরভ, দীপশেখর এবং মনোতোষকে। সেখানে সৌরভকে ‘বাঁচানোর জন্য’ রাতারাতি কী ভাবে হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছিল, তা আদালতে তুলে ধরেছে পুলিশ। ধৃত তিন জনকে কাউন্সেলিং করানোর দরকার বলে দাবি করেছিলেন অভিযুক্তদের আইনজীবী। সেই দাবিও মানতে চাননি সরকার পক্ষের আইনজীবী।

আদালতে মঙ্গলবারের কথোপকথন:

সৌরভের আইনজীবী: আমার মক্কেলের কাছ থেকে যা বাজেয়াপ্ত হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। নতুন কিছু নেই। আর পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর কি প্রয়োজন রয়েছে?

মনোতোষের আইনজীবী: আমার মক্কেলের নাম এফআইআরে নেই। তিনি ওই ছাত্রকে হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যে দিন ঘটনা হয়েছিল, সে দিন ১০০ জনের সঙ্গে জিবি (‘জরুরি বৈঠক’)-তে ছিলেন আমার মক্কেল। তাঁকে কী ভাবে র‌্যাগিং করা হয়েছিল, তা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে রয়েছে।

ধৃতদের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন, তাঁদের মক্কেলরা মানসিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সেই কাউন্সেলিংয়ের রিপোর্ট যাতে আদালতে জমা দেওয়া হয়, সেই আবেদনও করেছেন ধৃতের আইনজীবীরা।

মনোতোষের আইনজীবী: মৃত ছাত্র বাড়িতে ফোন করে কী নাম নিয়েছিলেন, তাতে বলির পাঁঠা হচ্ছেন অভিযুক্তেরা। অভিযুক্তেরা তদন্তকারীদের সব রকম সাহায্য করবেন। তাঁদের যেন কাউন্সেলিং করানো হয়।

দীপশেখরের আইনজীবী: দীপশেখরেরও কাউন্সেলিং করানো হোক। হস্টেলে তিনি মাত্র এক বছর রয়েছেন। আদতে তাঁর ভূমিকা কী? বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হোক।

সরকারি আইনজীবী: এঁদের কে অধিকার দিয়েছে যে, র‌্যাগিং করে মেরে দেব? সৌরভই কিংপিন। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।

এর পরেই হস্টেলের অন্য এক জনকে পাঠানো সৌরভের হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটের উল্লেখ করা হয়েছে। পরিচয় বসু নামে হস্টেলের এক আবাসিককে ‘মেসেজ’ করেছিলেন সৌরভ। সেই চ্যাটেরই উল্লেখ আদালতে করা হয়েছে।

সরকারি আইনজীবী: চ্যাট থেকে স্পষ্ট, এঁদের নিজেদের মধ্যে ষড়যন্ত্র কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল! এটা খুন। ছাত্রের বাবাও অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে র‌্যাগিং হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে জমা করা হয়েছে।

এর পরেই ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার দাবি তোলেন সরকারি আইনজীবী।

সরকারি আইনজীবী: কী হয়েছিল, কারা ছিল, সব জানতে হবে। আরও কত জনকে এ ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তার বয়ান নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় দারুণ ফল করলেই খুন করার অধিকার আইন দেয়নি।

ধৃতদের আইনজীবীর তোলা কাউন্সেলিংয়ের দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।

সরকারি আইনজীবী: এই ভাবে প্যান্ট খোলো। উল্টো হয়ে শুয়ে থাকো। এ সব করেছে এত দিন। তাদের আবার কি কাউন্সেলিং? এরাই তো কাউন্সেলিং করত? মনোতোষের ডায়েরি থেকে অত্যাচারের তথ্য উঠে এসেছে। এঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JU Student Death Ragging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE