Advertisement
E-Paper

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দু’পা খুইয়ে এ বার আত্মহত্যার চেষ্টা

দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাঁর দু’টো পা কেটে নিয়েছিল তিন মাস আগে। প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ট্যাংরার তৃণমূলকর্মী রাহুল রায় মঙ্গলবার ফের হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এ বার ফিনাইল খেয়ে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৭:১৭
হাসপাতালের শয্যায় রাহুল রায়। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের শয্যায় রাহুল রায়। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাঁর দু’টো পা কেটে নিয়েছিল তিন মাস আগে। প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ট্যাংরার তৃণমূলকর্মী রাহুল রায় মঙ্গলবার ফের হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এ বার ফিনাইল খেয়ে।

পরমা থানার পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এবং ওই যুবকের আত্মীয়-পরিজনদের বক্তব্য এক— রাহুল আত্মহত্যা করার জন্য ফিনাইল খেয়েছিলেন। দু’পক্ষই জানাচ্ছেন, এর সঙ্গে পারিবারিক কোনও বিষয়ের সম্পর্ক নেই।

১৯ মে রাহুলের দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে বন্ধুরা এসে তাঁকে সবুজ আবির মাখিয়ে যান। তাঁর বাড়ির লোকজন বাড়ির সামনে আনন্দে মেতেছিলেন।

তার পরেও রাহুল কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন?

এ দিন বিকেলে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর শয্যায় শুয়ে রাহুল বললেন, ‘‘যারা আমার এই দশা করল, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন মোবাইলে ফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। অভিযোগ তুলে না নিলে আমার ভাইয়ের হাত কেটে নেবে বলছে। আমি তো বিছানায় শোয়া। ভাবলাম এ ভাবে বাঁচার থেকে তো মরে যাওয়াই ভাল।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাহুলকে বাঁচানো গিয়েছে ঠিকই, তবে তাঁর বিপদ পুরোপুরি কাটেনি।

১৩ মার্চ শিয়ালদহ ১ নম্বর রেলসেতুর নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রাহুলকে। চপার দিয়ে তাঁর দু’টো পা কেটে নেওয়ার ঘটনায় রাহুল অভিযোগ জানান দলেরই ১২ জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে। এক জন ছাড়া কেউ ধরা পড়েনি।

পলাতকদের মধ্যে ট্যাংরায় শাসক দলের এক যুবনেতাও আছে। তার নাম প্রদীপ গুহ। ঘটনার পর দিন থেকে প্রদীপের ফোন সুইচড অফ। এ দিনও সেই নম্বরে ফোন করে দেখা গিয়েছে, সেটি বন্ধ। যদিও গত ২১ এপ্রিল এন্টালিতে ভোটের দিন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীদের একাংশ জানান, ফেরার অবস্থাতেই ‘রিমোট কন্ট্রোলে’ প্রদীপ ভোটের কাজ করাচ্ছে।

প্রদীপ গুহ ও তার সঙ্গীরা জড়িত বলে তদন্তে পুলিশের গা নেই, এমনই অভিযোগ রাহুল ও তাঁর বাড়ির লোকজনের। তাঁরা জানাচ্ছেন, মামলা তুলে না নিলে ফল খারাপ হবে বলে প্রায়ই রাহুল ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাহুলের দু’পা কেটে নেওয়ার ঘটনায় মামলা রুজু করে ট্যাংরা থানার পুলিশ।

সম্প্রতি রাহুল ফোন করেছিলেন ট্যাংরা থানার সেই তদন্তকারী অফিসারকে। রাহুল জানতে চান, এই অন্যায়ের বিচার কবে হবে? রাহুলের দাবি, তাঁর এই কথা শুনে তদন্তকারী অফিসারের জবাব ছিল, ‘আমি তো তোর পা কেটে দিইনি। যাদের নাম বলছিস, তারা কোথায় আছে আমায় বল, আমি ধরে আনব।’ রাহুল এ দিন জানান, পুলিশ অফিসারের জবাব শুনে তিনি বলেন, ‘আমি তো আপনার ভাইয়ের মতো। আমার পরিবারকে বাঁচান।’ তখন ওই অফিসার বলেন, ‘পুলিশের কেউ বন্ধু নয়, কেউ ভাই নয়।’ বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।

রাহুল জানাচ্ছেন, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এসেই তিনি ট্যাংরা থানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল, নির্বাচন পর্ব শেষ হলেই পুরোদমে তদন্ত শুরু হবে। এখন রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘ভোট শেষ হল, আমরা ফের সরকারে এলাম, কিন্তু কই, পুলিশ তো কাউকে ধরল না!’’

এমনকী, তাদের ভয়ে দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে নিজের বাড়িতেও ফিরতে পারেননি, আছেন ধাপার মাঠের উল্টো দিকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। মাস খানেক আগেও বিছানায় পুরো শোয়া থাকতেন। এখন ঘরে দু’জন ও কোমরে হেঁচড়ে হেঁচড়ে নড়াচড়া করেন।

রাহুলের মা অনিমা রায় জানান, তখন দুপুর আড়াইটে। রাহুলকে অনেক ক্ষণ ঘরে দেখতে না পেয়ে, তিনি শৌচাগারের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে দেখেন, ছেলে চোখ বুজে মাটিতে পড়ে, ওঁর মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে।

বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, এক দিকে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অন্য দিকে অপরাধীদের না ধরা পড়া ও তাদের হুমকি— এই মানসিক চাপ আর নিতে পারছেন না রাহুল।

এ দিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রাহুলের মা বলেন, ‘‘অপরাধীরা শাস্তি না পেলে আমাদের মারবে। বিচার না পেলে আমরা সবাই গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়ে মরব।’’

ট্যাংরা থানার এক অফিসারের কথায়, ‘‘উপরওয়ালা যেমন নির্দেশ দেবে, আমরা তেমনই কাজ করব।’’ ডিসি (ইএসডি) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘তদন্তের বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।’’

রাহুল ও তাঁর পরিবার বরাবর আস্থা রেখেছেন এন্টালির তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার উপরে। তাঁরা জানাচ্ছেন, পা কাটা অবস্থায় রাহুল যখন হাসপাতালে ভর্তি, রক্তেরও ব্যবস্থা করেন স্বর্ণকমলবাবু। এ দিন স্বর্ণকমল সাহা বলেন, ‘‘পুলিশ কেন এত দিনেও অভিযুক্তদের ধরতে পারল না, সেটা বুঝতে পারছি না। রাহুল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে শুনে আমার খারাপ লাগছে।’’

TMC Suicide Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy